ঢাকা: পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে খোলা বাজারের চেয়ে সাশ্রয়ী ও নির্ভেজাল পণ্য বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছে ও সংগ্রহ করছে রাজধানীর বিভিন্ন সুপারশপ। মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন সুপারশপগুলোতে গিয়ে এমন চিত্র ও তথ্য জানা গেলো।
রাজধানীর সুপারশপগুলোর শোকেসে থরেথরে পণ্য সাজানো রয়েছে। তারা রমজানের জন্য মজুদও করতে শুরু করেছে। যা রোজায় বিক্রি হবে। রমজানকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে রাজধানীর সুপারশপগুলোতে যেন সাজ সাজ রব। কোনো কোনো সুপারশপে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে বাহারি পণ্য। দাম নির্ধারণ, পণ্য সরবরাহ, বাজার পরিস্থিতি নিয়ে পরিকল্পনা করতে কোনো কোনো সুপারশপের প্রধান কার্যালয়ে একাধিক বৈঠক করা হচ্ছে। একই পণ্য ভিন্ন সুপারশপে ভিন্ন ভিন্ন দাম দেখা গেছে।
মিরপুর এলাকায় প্রিন্স বাজার সুপারশপে দেখা গেছে, প্রতিকেজি আলুর ২৮ টাকা, পেঁয়াজ ১২০ টাকা, গরুর মাংস ৭২০ টাকা, মরিয়ম জাতের খেজুর ৫শ গ্রামের দাম ৭৫০ টাকা, সাফারি জাতের খেজুর প্রতিকেজি ৯৫০ টাকা, আজোয়া জাতের খেজুর ১ হাজার ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সব খেজুরেই প্লাস্টিকের বিশেষ পাত্রে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
ওই সুপারশপে মিনিকেট চাল ৭০ টাকা, নাজিরশাইল চাল ৭৮ টাকা এবং পারিজাত (মোটা চাল) ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি মসুরের ডাল ১১৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রিন্স বাজার শপে দেখা যায়, আগের দামেই সব ধরনের সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে। সুপারশপটি পুষ্টির পাঁচ লিটারের বোতলে ৫০ টাকা ও ফ্রেশের পাঁচ লিটারের বোতলে ৩৫ টাকা ছাড়ে বিক্রি করছে। প্রিন্স বাজার শপে গরুর মাংস অন্যান্য সুপারশপের চেয়ে তুলনামূলক কিছুটা কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
প্রিন্স সুপারশপের ম্যানেজার সোহেল রানা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সব পণ্যই খোলা বাজারের চেয়ে সাশ্রয়ী দামে বিক্রি করি। পাশাপাশি ভেজালমুক্ত পণ্য বিক্রি করি। পণ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে দাম বাড়লে রমজানও আমরা খোলাবাজার দরের চেয়ে কিছুটা হলেও কম দামে বিক্রি করবো বলে আশা করছি।
রোজায় ব্যবহৃত পণ্য ইতোমধ্যে সুপারশপটিতে আসা শুরু হয়েছে। কিছু বাকি থাকলে রোজা শুরু আগে পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে আনা হবে। ক্রেতাদের সন্তুষ্টিতে শেষ পর্যায়ে পণ্যের সরবরাহ প্রয়োজন হলে পণ্য আনা হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে কেনার সময়ের রশিদ সংরক্ষণ করা হয়। বিক্রির সময়ে পণ্যের দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে। কোনো নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বা কোনো গ্রাহক এমন চার্জ করলে আমরা ক্রয়কালীন দাম দেখানোর জন্য রশিদ সংরক্ষণ করে থাকি।
স্বপ্ন সুপারশপে নারী এক ক্রেতা মাংস মেপে সঠিক মান নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়ে বলছেন, সঠিক মাংস দেবে। বাইরের দোকানে মাংস বিক্রেতারা অযথা কথা বলে। আবার খারাপ মাংসে হাড় ও চর্বি বেশি দেয়, এমন যেন না হয়, প্রিন্সের কমচারীও সতর্ক নির্দেশনা পালন করছেন।
মিরপুর এলাকায় স্বপ্ন সুপারশপে রোজায় ব্যবহৃত ছোলা ও খেজুর পণ্যসহ সব পণ্যই পৌঁছে গেছে। শপের শোকেসগুলো পণ্যে ঠাসা। সুপারশপটির কর্মীরা জানালেন, সারাবছর খেজুর ও ছোলার মতো দুটি পণ্য রোজায় বিক্রি বাড়ে। ফলে রমজানে পণ্যের ঘাটতি হবে না। স্বপ্নের দোকানে বেশি ব্যবহৃত পণ্যগুলোর মধ্যে দেখা যায়, মিনিকেট চাল ৭০ টাকা, নাজিরশাইল ৭৫ টাকা, মোটা চাল ৫৫ টাকা, গরুর মাংস ৭৪০ টাকা, চিনি ১৪৫ টাকা, আলু ২৭ টাকা, রসুন ২৫৫ টাকা, পেঁয়াজ ১২০ টাকা।
ভোজ্যতেলের দাম কমেছে। আগের দামেই তেল বিক্রি হচ্ছে, দেখেই ক্রেতা আসরাসুল ট্রলিতে তুলে দেন। তিনি সেলসম্যানের কাছে জানতে চান, রোজার পণ্য এসে গেছে, নাকি পরে এলে ভালো হবে। সেলসম্যান ওই ক্রেতাকে জানান সব পণ্যই আছে। আপনি যেটা ভালো মনে করেন, নিতে পারেন।
মিরপুর-১০ নম্বরের শাখা ম্যানেজার ফয়সাল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, স্বাভাবিক সব পণ্যই বিক্রি হচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে পণ্য সংগ্রহ এখনো শুরু হয়নি। দামও রমজান উপলক্ষে বিশেষভাবে নির্ধারণ হয়নি। তবে রমজানে পণ্যের দামের বিষয় হেড অফিসে জানেন এই কর্মকর্তা।
আগোরার শেওরাপাড়ার শাখায় দেখা যায়, রোজায় ব্যবহৃত ছোলা, খেজুর, চিনিসহ বাইরে থেকে বিভিন্ন পণ্য আনা হচ্ছে। পণ্যের প্যাকেটে দেখা যায়, ছোলা প্রতিকেজি ১৩০ টাকা, মসুরের ডাল (দেশি) প্রতি কেজি ১৩৩ টাকা, বড় ডাল ১১৪ টাকা, ক্যাঙ্গারু ব্র্যান্ডের মসুরের ডাল ১৪৫ টাকা, বেসন প্রতিকেজি ১৯০ টাক (ছোলার বেসন), মুগডাল ১৭০ টাকা, গরুর মাংস ৭৪০ টাকা, চাল মিনিকেট ৭২ টাকা, মিনিকেট (ফ্রেশ) ৮৫ টাকা এবং তুলনামূলক মোটা চাল ৬০ টাকা। সুপারশপটিতে খেজুর বক্সে পলিথিনে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আগোরায় খেজুরসহ অন্যান্য পণ্যের তুলনামূলক দাম একটু বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৪
জেডএ/এএটি