ঢাকা: মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরাতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিলের পর শিক্ষকের অনুপস্থিতে যাতে ক্লাসের শাখাগুলোতেও ঠিকভাবে ক্লাস নেওয়া হয় সেজন্য নতুন নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
জাতীয়করণের দাবিতে গত ১১ জুলাই থেকে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ব্যানালে শিক্ষকরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে।
লাগাতার অবস্থানের মধ্যে ১৯ জুলাই শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয় বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের। জাতীয়করণের ঘোষণার বদলে এ বিষয়ে দুই কমিটি করে দেওয়ার কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। ওই বৈঠকে ২০ জুলাই থেকে শুরু হওয়া গ্রীষ্মকালীন ছুটিও বাতিল করা হয়। এতে মর্মাহত হন শিক্ষকরা। তাই লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে তারা প্রেসক্লাবেসর সামনে অবস্থান করে যাচ্ছেন।
ক্লাস ছেড়ে শিক্ষকদের রাজপথে অবস্থানের মধ্যে রোববার (২৩ জুলাই) অধিদপ্তর ‘জরুরি’ নির্দেশনা জারি করেছে। এতে বলা হয়, অধিদপ্তরের আওতাধীন মাধ্যমিক স্তরের কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই শ্রেণির একাধিক শাখার শিক্ষার্থীদের একই সাথে এক কক্ষে এনে শ্রেণি পাঠদান করানো হচ্ছে- মর্মে শোনা যাচ্ছে। এতে স্বাভাবিক শ্রেণি পাঠদান বিঘ্নিত হচ্ছে। এমতাবস্থায়, নতুন কারিকুলাম যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক শাখার শিক্ষার্থীদের স্ব স্ব শ্রেণি কক্ষে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
বিষয়টি অতীব জরুরি উল্লেখ করে দেশর সব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক এবং বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও স্তুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষককে এই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
আন্দোলনের মধ্যে একই দিনে অধিদপ্তরের জুন মাসের ডিজিটাল সিস্টেমে মনিটরিংয়ের বিষয়ে এক চিঠিতে অনুপস্থিত ৩৪ শিক্ষক-কর্মচারীকে শোকজ করা হয়েছে। এছাড়াও, মনিটরিয়ে জোর দিয়ে শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে শিক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানান, এমপিওভূক্ত শিক্ষকগণ মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য। তাছাড়া বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেলের একধাপ নিচে দেওয়া হয় এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেল প্রদান না করার ফলে উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষকদের বেতন স্কেল ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল সমান হওয়ায় প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারী প্রধানদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ রয়েছে।
তারা আরও অভিযোগ করেন, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাবার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী টাকা পাওয়ার পূর্বেই অর্থাভাবে বিনা চিকৎসায় মৃত্যুবরণ করছেন। তাছাড়া কয়েক বছর যাবৎ কোন প্রকার সুবিধা না দিয়েই অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত অমানবিক। তাই অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট অফিস ঘেরাও করতে বাধ্য হয়েছিলেন তারা। কিন্তু এখন এর কোন প্রতিকার পাননি।
মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে বছরের পর বছর উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা ও বিভাগীয় শহরে সমাবেশ, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতীকি অনশন, অবস্থান ধর্মঘট, কর্মবিরতিসহ প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর নিকট বারবার স্মারকলিপি দেন শিক্ষকরা। সবশেষে রাজপথে নেমেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২৩
এমআইএইচ/জেএইচ