ঢাকা: পুলিশের কাছ থেকে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীই সহজে সেবা পান না। প্রায় ৩৮ শতাংশ শিক্ষার্থী সেবা নিতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হন।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের শিক্ষার্থীদের ওপর পরিচালিত একটি গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। পুলিশ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও প্রস্তাবনা তুলে আনতে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের ‘জননীতি এবং শাসনব্যবস্থা বিষয়ক গবেষণা দল’ গবেষণাটি করেছে।
রোববার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম। ‘জনবান্ধব, দায়বদ্ধ পেশাদার পুলিশি ব্যবস্থা বিনির্মাণ: শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও প্রস্তাব’ শীর্ষক সেমিনারটি আয়োজন করে সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি এবং জননীতি এবং শাসনব্যবস্থা বিষয়ক গবেষণা দল।
গবেষণায় জরিপ পদ্ধতিতে বাংলাদেশের দুই হাজার শিক্ষার্থী থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া ২০টি ফোকাস দল আলোচনায় ২৫০ জন থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। নমুনাগুলোর মধ্যে সরকারি, বেসরকারি, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন।
গবেষণায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৬৮.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পুলিশকে আরও বেশি জবাবদিহিমূলক করতে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন। ৮ শতাংশ পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধির পক্ষে মত দিয়েছেন।
গবেষণায় উঠে এসেছে, পুলিশ প্রশাসন অধিকাংশ সময় ক্ষমতাসীন দলের আদেশ ও ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করেন। তারা সরকারের একটি রাজনৈতিক টুল হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় জবাবদিহিতা হারিয়েছে। ফলে একটি জনশুনানি এবং একটি স্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সেল গঠনের মাধ্যমে পুলিশকে জবাবদিহি ও দায়বদ্ধ করা সম্ভব। এছাড়া একটি স্বাধীন কমিশনের মাধ্যমে পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনা করলে পুলিশকে জবাবদিহিতায় আনা যেতে পারে।
উত্তরদানকারীদের মধ্যে ৮০ শতাংশ একটি রাজনীতিমুক্ত স্বাধীন পুলিশ কমিশনের সুপারিশ করেছেন। ৪০ শতাংশ উত্তরদাতা পুলিশের বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করেছেন। প্রায় ৩৮ শতাংশ উত্তরদারা পুলিশের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোর কথা বলেছেন।
সেমিনারে নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়ান-হেনরিক মায়ার-শ্যালিং বলেন, গবেষণার মধ্য দিয়ে পুলিশ সম্পর্কে একটি পক্ষের মতামত উঠে এসেছে। এ বিষয়ে সুশীল সমাজ, স্থানীয় সম্প্রদায়, আন্তর্জাতিক সংগঠনসহ অন্যান্য অংশীজনের কথা শোনা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, এটি কোনো সাধারণ সংস্কার প্রক্রিয়া নয়। বরং সরকার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এ সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেকারণে এ সংস্কার সাধারণভাবে করা ঠিক হবে না।
তিনি বলেন, আমাদের একটি নতুন ব্যবস্থা দরকার। কারণ পুরোনো ব্যবস্থা খারাপ ছিল। সেকারণে অনেক প্রশিক্ষণও প্রয়োজন। পুলিশের মধ্যে পেশাদারিত্ব তৈরি করা এবং রাজনীতিমুক্ত করা অনেক ধরনের প্রশিক্ষণ হয়তো দেওয়া যায়, তবে আমি মনে করি, তাদের মধ্যে মানুষকে সেবা দেওয়ার নীতি তৈরি করতে হবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. তৈয়েবুর রহমান বলেন, পুলিশ আমাদের সমাজের অংশ। তাদেরকে নাগরিকদের বন্ধু ও আস্থার পাত্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সমাজের চাওয়া অনুযায়ী কাজ করতে হবে। তবে পুলিশেরও নানা সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদেরও তা বুঝতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২৫
এফএইচ/জেএইচ