রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে ঘুরতে গিয়ে শিমুল ইসলাম শিহাব (২১) নামে এক কলেজশিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি রাজশাহী কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ও মহানগরীর মেহেরচন্ডী মধ্য বুথপাড়া এলাকার জামাল হোসেনের ছেলে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (রামেক) জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান জানিয়েছেন, রাবি ক্যাম্পাস থেকে বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে একটি ছেলেকে হাসপাতালে আনা হয়। প্রথমে বলা হয় সড়ক দুর্ঘটনার কথা। পরে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তারা বলে- মারামারিতে আহত। হাসপাতালে আনার পথে তার মৃত্যু হয়েছে। আর যারা তাকে নিয়ে আসে তাদের এমন কথায় সন্দেহের সৃষ্টি হয়। যদিও ওই ছেলের শরীরের বাইরের অংশে কোনো আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। তাই নিয়ম অনুযায়ী ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।
তবে ঘটনার পর রাবি ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের পেছনে বান্ধবীর সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন শিমুল। এ সময় প্রক্টরিয়াল বডি টহল দিচ্ছিল। এক পর্যায়ে রাবি প্রক্টরের গাড়ি দেখে মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত পালানোর চেষ্টা করেন শিমুল। তখন সড়কে থাকা রডের সঙ্গে লেগে তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে পড়ে যান। কেউ তাকে মারধর করেনি। ঘটনার পর তাকে উদ্ধার করে প্রথমে রাবি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে পথেই তার মৃত্যু হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের দায়িত্বরত চিকিৎসক সাজিদ হাফিজ জানিয়েছেন, যখন ওই বহিরাগত শিক্ষার্থীকে নিয়ে আসা হয়েছিল, তখন তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। তবে শরীরে ধুলাবালি লেগে ছিল। কিন্তু এখানে আনার পর তার কোনো পালস পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই তারা দ্রুত তাকে রামেক হাসপাতালে পাঠান।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান জানান, গত রাতে ক্যাম্পাসের ভেতরে সায়েন্স ভবনের দিকে এক মেয়ে বন্ধুর সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছিল শিমুল। প্রক্টর দপ্তরের গাড়ি দেখে ওই ছেলে মোটরসাইকেল নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু রাস্তায় পড়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে মেডিকেল সেন্টারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তাকে রামেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া অন্য কোনো ঘটনা তার জানা নেই। তবে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে নিহত শিমুলের বাবা জামাল হোসেন বলেন, শিমুল তার বান্ধবীকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে গিয়েছিল। প্রক্টরিয়াল বডির গাড়ি দেখে তারা সেখান থেকে মোটরসাইকেলে দ্রুত চলে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু কতিপয় শিক্ষার্থী তাদের পথরোধ করে এবং তার ছেলেকে ব্যাট দিয়ে আঘাত করে। এতে সে গুরুতর আহত হয়। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি এ ঘটনায় মতিহার থানায় মামলা করতে গেছেন বলেও জানান।
রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক জানান, তিনি বর্তমানে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাটি তদন্ত করছেন। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। তবে এখনও মামলা হয়নি। শিমুলের বাবা মামলা দিলে সেটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২৫
এসএস/আরবি