ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৪

ঢাকা: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের হতাশাগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।



শনিবার দুপুরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া সেন্টারে ‘পাসের হার বৃদ্ধি: শিক্ষার মানের হ্রাস-বৃদ্ধি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি সান।

বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ মন্তব্য করেন।

গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ডেইলি সানের সম্পাদক আমীর হোসাইন।

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রতি বছরই পাবলিক পরীক্ষাগুলোর ফল ভালো হচ্ছে। পাসের হার বাড়ছে। কিন্তু কিছু লোক আছেন, যারা এ বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করছেন। ছেলেমেয়েরা পাস করলে আমরা কী করবো!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রায় ৪২ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র দুইজন পাস করায় শিক্ষার মান নিয়ে বিভিন্ন মহলে এর সমালোচনা হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ৪২ হাজার ছেলেমেয়েদের মধ্যে তারা কি মাত্র দুইজনকে পড়াবেন! যদি তারা ঠিক হয়ে থাকেন, তাহলে অনুরোধ জানাবো, এই দুজনকেই তারা পড়াবেন।

তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, অন্য ছেলেমেয়েরা কি যোগ্যতা রাখে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার? চান্স না পাওয়াটা কি ছেলেমেয়ের দোষ নাকি পরীক্ষা এবং পরীক্ষা পদ্ধতির? দয়া করে ছেলেমেয়েদের এভাবে হতাশাগ্রস্ত করবেন না।

বিশ্বের সব দেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রতিযোগিতা আছে মন্তব্য করে মন্ত্রী আরো বলেন, দুনিয়ার সব দেশে উচ্চ শিক্ষা লাভের প্রতিযোগিতা আছে। কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে সবাই উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পায় না। তারমানে তারা অমেধাবী? তাদের শিক্ষার মান খারাপ? মোটেও তা নয়। প্রতিযোগিতা করে নির্দিষ্ট আসনের জন্য বাছাই হতে হয়। সে বাছাইয়ে সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীটিও বাদ পড়তে পারে।

শিক্ষকদের আলাদা বেতন কাঠামোর কথা চিন্তা করছে সরকার উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে একটি কমিশন গঠনের কথাও চিন্তা করছে সরকার। তাছাড়া দক্ষতা বাড়াতে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে শিক্ষকদের। কিন্তু মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতায় আসছেন না। অন্য পেশা না পেয়ে শেষমেশ এসে শিক্ষক হচ্ছেন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটিও শর্ত পূরণ করছে না। দেশের ৫২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয় কিছু কিছু শর্ত পূরণ করেছে, করার চেষ্টা করছে। তাছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন ত্রুটি তুলে ধরে আমরা বিজ্ঞাপন পর্যন্ত দিয়েছি, যেন শিক্ষার্থীরা প্রতারিত না হয়।

প্রতি বছর দেশে ৩২ হাজার কোটি টাকার ভর্তি বাণিজ্য হচ্ছে বলে বৈঠকে উল্লেখ করেন শিক্ষামন্ত্রী।

শিক্ষার হারের পাশাপাশি শিক্ষার মান বেড়েছে উল্লেখ করে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বাস্তব জীবনে শিক্ষাকে কাজে লাগাতে হবে। প্রতিবছর শিক্ষার হারের পাশাপাশি শিক্ষার মানও বাড়ছে। তবে প্রত্যাশিত মান এখনো আমরা অর্জন করতে পারিনি।

মন্ত্রী বলেন, শৈশবে একটি শিশু আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেললে সে কখনো সাহসী হয়ে উঠতে পারবে না। আর আত্মবিশ্বাস না বদলালে আমরা দেশ বদলাতে পারবো না।

সৃজনশীল পাঠদানের জন্য ১০ লাখ মাধ্যমিক শিক্ষককে প্রশিক্ষণ, ২০ হাজার ৫০০ স্কুলে ডিজিটাল কারিক্যুলাম চালু এবং আরো তিন হাজার স্কুল প্রক্রিয়াধীন, বিভিন্ন পর্যায়ে ১১১টি নতুন বই চালু, ১৭টা মোবাইল ল্যাবরেটরি চালু এবং রাজধানীর ১০০টি স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব চালুসহ শিক্ষাখাতে সরকারের নানা অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন মন্ত্রী।

গোলটেবিল বৈঠকে আরও অংশ নেন দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক প্রফেসর ড. ওয়াহিদুজ্জামান, নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শামসুল হক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আব্দুল মান্নান, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশিষ্ট লেখক হায়াৎ মামুদ।
 
বসুন্ধরা গ্রুপের সংবাদ ও গণমাধ্যম উপদেষ্টা মো. আবু তায়েব বলেন, এ আলোচনার, বিশ্লেষণের প্রয়োজন ছিল। শিক্ষার মূল সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পেরেছি। মাননীয় মন্ত্রী উপস্থিত থেকে সেগুলো শুনেছেন। আশা করি, শিক্ষাখাতের নীত-নির্ধারণে এ আলোচনা ভূমিকা রাখবে।  

তাছাড়া শিক্ষার মান নিয়ে যেন মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি না থাকে, সে লক্ষ্যেই এ গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। আশা করি, আমাদের উদ্দেশ্য কিছুটা হলেও সফল হবে।

গোলটেবিল বৈঠক শেষে মন্ত্রীসহ আমন্ত্রিত অতিথি, সাংবাদিকরা মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।