ঢাকা: নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের আবির্ভাবের সঠিক ইতিহাস জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে তাদের অনেক আত্মবিশ্বাসী ও সাহসী করে গড়ে তুলতে হবে।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) রাজধানী মিরপুরে সরকারি বাঙলা কলেজ প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
মহান বিজয় দিবস-২০১৪ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা, রক্তদান কর্মসূচি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ বলেন, দেশ স্বাধীন হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ডাকে। আমরা উন্নত ও মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে পৃথিবীর বুকে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সব শ্রেণির মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। তবে মুষ্ঠিমেয় লোকজন আমাদের স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিল। যারা রাজাকার ও আলবদর, আল সামস নামে পরিচিত। আমরা তাদের বিচারের সম্মুখীন করেছি। তাদের জন্য দেশের সব মানুষকে বিড়ম্বানার শিকার হতে হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘ নয়মাস লড়াই-সংগ্রাম করে দেশ স্বাধীন করলেও এখনও সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারিনি। যারা মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল তারা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সক্রিয় ছিল। আন্তর্জাতিক সহায়তায় তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। ফলে ১৯৭৫ সালের পর থেকে আমরা উল্টো পথে হেঁটেছি।
নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, সংবিধান অনুযায়ী দেশের মালিক জনগণ। আজ এখানে যে শিক্ষক সমাজ উপস্থিত হয়েছেন, তারা মালিকের কথা শুনতে বাধ্য। জনগণই ২০০৯ সালে মহাজোট সরকারের ইশতেহার সমর্থন করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিল। আমরা সে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছি। আমরা দেশে পরিবর্তন চাই। গত ছয় বছরে দেশে যুগান্তকারী পরিবর্তন হয়েছে। দেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
দেশের খাদ্য উৎপাদন সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কারণ আমাদের সরকার কৃষককে বিনামূল্যে সার, কিটনাশক ও বীজ দিয়েছে। আজ আমরা বিদেশে খাদ্য রফতানি করছি। কয়েকটি দেশ আমাদের কাছ থেকে এক লাখ টন খাদ্য আমদানি করতে চেয়েছে। আমরা দেশের চিন্তা করে মাত্র ৫০ হাজার টন খাদ্য রফতানি করেছি।
দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন দেশে প্রায় ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব ছিল। কিন্তু চারদলীয় শাসনামলে এর পরিমাণ ২ হাজারে নেমে আসে। তারা নতুন কোনো বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপন করেনি। এমনকি পুরাতনগুলো মেরামতও করেনি। তবে আমরা সে অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। আজ আমরা দেশে সাড়ে ১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছি। আমাদের দেশে এখন বিদ্যুতের কোনো সমস্যা নেই। আগামী ৫/৬ বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদানের পরিমাণ বর্তমানের দ্বিগুণ করা হবে।
শিক্ষকদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, আপনারা অবসরে গেলে বসে থাকবেন না। শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেন। দেশে এখন অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আপনারা সেখানে শিক্ষা দেবেন। বয়স হয়েছে বলে বসে থাকবেন না। দেশে আজ সার্বিক পরিবর্তন হয়েছে। এটাকে এগিয়ে নিতে হবে। তবেই বিজয় দিবস উদযাপন সার্থক হবে।
স্কুল-কলেজগুলোতে অতিরিক্ত ভর্তি ফি নেওয়ার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা ক্ষমতা নেওয়ার পর ভর্তি ফি নির্ধারণে একটি নীতিমালা করে দিয়েছি। এ নীতিমালা অনুযায়ী সবাই ভর্তি ফি নেবেন। এর ব্যত্যয় ঘটলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এস এম মকফুর হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খানুন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান ও অতিরিক্ত সচিব স্বপন কুমার সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪