জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিভিন্ন বিভাগ, অনুষদ, পরিবহন অফিস, বটতলা ও ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা শৌচাগার না থাকা এবং শৌচাগারগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় শিক্ষার্থীদের বিব্রত অবস্থায় পড়তে হচ্ছে।
ফলে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরাও ক্যাম্পাস সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা নিয়ে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে বিভিন্ন ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, কলা ও মানবিকী অনুষদের ১ম ও ২য় তলার ছাত্রদের শৌচাগারগুলো ভেঙ্গে ময়লার স্তুপে পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ শৌচাগারের সিটকানি নেই। শৌচাগারে ব্যবহৃত পানির ট্যাপগুলো ভাঙ্গা। পানি না থাকায় অধিকাংশ শৌচাগারগুলোতে ময়লা জমে আছে। বেসিনের পানির ট্যাপ ভেঙ্গে অনবরত পানি পড়ে শৌচাগারের মেঝে স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে।
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের একই অবস্থা। দূর্গন্ধ আর ময়লার স্তুপে পরিণত শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী।
নবনির্মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের শৌচাগারগুলোর অবস্থা আরো করুণ। সেন্টারের ডাক্তার ও রোগীদের ব্যবহারের শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। বেসিনের অবস্থাও নাজুক। চিকিৎসাসেবা দেওয়ার এই সেন্টারটিই যেন রোগ উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের শৌচাগারগুলোর। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিসহ অধিকাংশ সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যক্রম এখান থেকে পরিচালিত হয়। দিন-রাত চলে সাংস্কৃতিক চর্চা। আর বাইরে থেকে আসেন হাজারো দর্শণার্থী। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ভর্তি পরীক্ষার সময়ও কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হন এখানে।
সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য দ্বিতল ভবন টিএসসির নিচতলার শৌচাগারগুলো খোলা থাকে। নিচতলায় মোট ৮টি শৌচাগারের মধ্যে পাঁচটিই ব্যবহারের অযোগ্য। মাত্র তিনটি শৌচাগার ব্যবহার করতে হচ্ছে সকল সংগঠনের শিক্ষার্থী ও দর্শণার্থীদের। এ তিনটির অবস্থাও খুবই নাজুক। কোনোটির নেই সিটকানি, আবার কোনোটির দরজা ভাঙ্গা। আর নিয়মিত পরিষ্কার ও সংস্কারের অভাবে এগুলোও দিন দিন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে মেয়েদের জন্য আলাদা কোনো শৌচাগার না থাকায় একই শৌচাগার ছেলে-মেয়ে উভয়কেই ব্যবহার করতে হচ্ছে। যার ফলে অনেক সময় উভয়কেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।
পরিবহন অফিসের শৌচাগারটি ব্যবহারের অনুপযোগী ঘোষণা করেছে এ অফিস। ফলে পরিবহন চত্বর এলাকায় কোনো শৌচাগার না থাকায় শিক্ষার্থী ও দর্শণাথীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বটতলা এলাকায় একটি শৌচাগার নির্মাণ করা হলেও পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ না করায় সেটিও এখন পরিত্যক্ত।
একজন নারী কমকর্তা বলেন, মেয়েদের জন্য আলাদা শৌচাগারের ব্যবস্থা না থাকা এবং শৌচাগার অপরিষ্কার থাকায় অনেক মেয়ে ওয়াসরুমে যেতে চান না। অনেকে শৌচাগারে যাওয়ার ভয়ে কম পানি পান করেন। যার দরুন অনেক মেয়েই মূত্রথলি, ইউরিন ইনফেকশন ও কিডনির সমস্যায় ভুগছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের ডা. মমতা মল্লিক বলেন, দীর্ঘ সময় প্রস্রাব চেপে রাখার কারণে ইউরিন ইনফেকশন ও কিডনি সমস্যা হয়। প্রায় প্রতিদিনই এ ধরনের সমস্যা নিয়ে শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে আসেন।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. মোজেজা জহুরা বলেন, সাধারণত ব্যাক্টেরিয়ার কারণে ইউরিন ইনফেকশন হয়ে থাকে। কি অবস্থায় কতোক্ষন প্রস্রাব চেপে রাখা হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে ইউরিন ইনফেকশন। বেশি সময় প্রস্রাব চেপে রাখলে কিডনির সমস্যা হতে পারে।
মেডিকেল সেন্টারের শৌচাগারের বিষয়ে তিনি বলেন, মেডিক্যাল সেন্টারের ভবন নতুন হলেও শৌচাগারের ফ্লাশসহ অন্যান্য জিনিসগুলো নিম্নমানের। কয়েকদিন ব্যবহারের ফলে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। আমরা একাধিকবার প্রকৌশল অফিসকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবহিত করেছি।
ইতিহাস বিভাগের ৪২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাদ্দাম হোসেন সাজিদ বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক যে, ক্যাম্পাসের শৌচাগারগুলোর বেহালদশা। অধিকাংশ শৌচাগারের এমন অবস্থা যে, নাকে রুমাল চেপে বসেও সেখানে অবস্থান করা কষ্টের ব্যাপার। এসব শৌচাগারে বসে আতঙ্কে থাকতে হয় কখন কেউ ধাক্কা দিয়ে ঢুকে পড়েন কি-না।
ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক মো. খবির উদ্দিন বলেন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সব সুইপার গত তিন মাস ধরে অসুস্থ। আমরা প্রশাসনকে বলেছি, চুক্তিভিত্তিক সুইপার দিতে। ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে ছেলে এবং মেয়েদের জন্য আলাদা শৌচাগারেরও প্রয়োজন। পাশাপাশি ক্যাম্পাসের দর্শণার্থীদের কথা চিন্তা করে কিছু স্থায়ী পাবলিক শৌচাগার নির্মাণ করা উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
এএসআর