ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে খুবিতে উৎসবের আমেজ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৭
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে খুবিতে উৎসবের আমেজ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণিল আলোকসজ্জা; ছবি- মানজারুল ইসলাম

খুলনা: বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে অপরূপ সাজে সেজেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) ক্যাম্পাস। বিশেষ করে রাতের আলোকসজ্জার বর্ণিল আলোর ঝলকানি মুগ্ধ করছে সবাইকে।

আগামী শনিবার (২৫ নভেম্বর) দিনব্যাপী ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপিত হবে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ব্যাপক জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২৫ নভেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় আনন্দ উৎসব পালন উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্ণিল আলোকসজ্জা; ছবি- মানজারুল ইসলাম শোভাযাত্রাটি শনিবার সকাল ১১ টায় শিববাড়ি মোড় থেকে শুরু করে ময়লাপোতা মোড় হয়ে রয়েল চত্বরে গিয়ে শেষ হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল, বিকেল ৪ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সন্ধ্যা সাড়ে ৫ টায় শহীদ মিনার চত্বর, অদম্য বাংলা ও কটকা স্মৃতিসৌধে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও ক্যাম্পাসে আলোকসজ্জার আয়োজন করা হয়েছে।

দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৮৭ সালের ৪ জানুয়ারি খুবি প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সরকারি সিদ্ধান্ত গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ সালের ৯ মার্চ খুবির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৯৯০ সালের জুন মাসে জাতীয় সংসদে ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৯০’ পাশ হয়, যা গেজেট আকারে প্রকাশ হয় ওই বছর ৩১ জুলাই।

১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে ৪টি ডিসিপ্লিনে ৮০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়। ১৯৯১ সালের ৩০ আগস্ট প্রথম ওরিয়েন্টেশন এবং ৩১ আগস্ট ক্লাশ শুরুর মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমের শুভ সূচনা হয়। পরে একই বছরের ২৫ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ২০০২ সালের ২৫ নভেম্বর ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে পালিত হয় প্রথম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস।

এরই ধারাবাহিকতায় সেই থেকে প্রতিবছর ২৫ নভেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

সেশনজট, সন্ত্রাস ও রাজনীতিমুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রমের ২৭ বছর পূর্ণ করলো।

খুলনা মহানগরী থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক সংলগ্ন ময়ূর নদীর পাশে এক মনোরম পরিবেশে গল্লামারীতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বুয়েটের পরই ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স ক্রেডিট পদ্ধতি চালু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্ণিল আলোকসজ্জা; ছবি- মানজারুল ইসলাম বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি স্কুল (অনুষদ) ও ২টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। এখানে মোট ২৮টি  ডিসিপ্লিনে (বিভাগ) শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়মিত ব্যাচেলর ডিগ্রি, ব্যাচেলর অব অনার্স ডিগ্রি, মাস্টার্স ডিগ্রি, এম ফিল এবং পিএইচডি প্রদান করা হয়।

স্কুলগুলোর মধ্যে কলা ও মানবিক স্কুলের আওতায় রয়েছে ইংরেজি, বাংলা এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিন।

জীব বিজ্ঞান স্কুলের আওতায় রয়েছে এগ্রোটেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, ফরেস্ট্রি এন্ড উড টেকনোলজি, ফিশারিজ এন্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি, ফার্মেসি ও সয়েল ওয়াটার এন্ড এনভায়রনমেন্ট ডিসিপ্লিন।

আইন স্কুলের আওতায় রয়েছে আইন ও বিচার ডিসিপ্লিন। ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুলের আওতায় রয়েছে ব্যবসায় প্রশাসন এবং হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিন।

বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের আওতায় রয়েছে আর্কিটেকচার, আরবান এন্ড রুরাল প্লানিং, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান এবং পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিন। বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্ণিল আলোকসজ্জা; ছবি- মানজারুল ইসলাম সমাজ বিজ্ঞান স্কুলের আওতায় আছে অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, ডিভেলপমেন্ট স্টাডিজ ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের আওতায় তিনটি ডিসিপ্লিন চালু রয়েছে, এগুলো হলো ড্রইং এন্ড পেইন্টিং, প্রিন্টমেকিং ও ভাস্কর্য ডিসিপ্লিন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক সংখ্যা ৪শতাধিক। ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে প্রায় সাত হাজার। এছাড়া কর্মকর্তা রয়েছেন আড়াই শতাধিক এবং কর্মচারী রয়েছে দুই শতাধিক।

খুবির ইংরেজি ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক মো. সামিউল হক বাংলানিউজকে বলেন, খুবি জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার অবারিত সুযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় জাতিকে উদারনৈতিক উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত নতুন প্রজন্ম উপহার দিতে সদাসচেষ্ট।

তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের প্রাক্কালে ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান এক শুভেচ্ছা বার্তায়  বলেন, খুবিতে অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে এগিয়ে নিতে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় দিবস প্রকৃত অর্থে বিগত সময়ের কার্যক্রম মূল্যায়নের দিন। আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতায় বর্তমানের প্রচেষ্টায় আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন এবং অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধির দিকে জোর দেওয়া হয়েছে। চলতি প্রায় দুইশ’ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ২০২১ সালের মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পূর্ণাঙ্গরূপ পরিগ্রহ করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২১ ঘণ্টা,  নভেম্বর ২৩, ২০১৭
এমআরএম/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।