ইতোপূর্বে বিভিন্ন সমস্যার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্বল্পমেয়াদী কিছু পদক্ষেপ নিলেও এখন তাও থমকে আছে নতুন ক্যাম্পাস ঘোষণার পর থেকে। অথচ ঠিক কবে থেকে শুরু হবে নতুন ক্যাম্পাসের প্রথমিক কাজ তা জানেন না খোদ প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিরাই।
সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়- বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার ১৩ বছর পার হলেও এখন এর মূল সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে এর আবাসন। এখন পর্যন্ত নেই কোনো আবাসিক হল। মেয়েদের একটি মাত্র হল বছরের পর বছর নির্মাণাধীন থাকলেও তা এখনো থাকার উপযোগী করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আবাসন সংকটের পরেই রয়েছে শিক্ষার্থীদের চলাচলের জন্য বাস সংকট। হল না থাকায় শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে প্রতিদিন বাসে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হয়। মাত্র ১৬টি বাস দিয়েই চলছে একট্রিপে শিক্ষার্থীদের আনা নেওয়ার কাজ, নেই ডাবল ট্রিপের ব্যবস্থা। পরিবহন সুবিধা পাচ্ছে মাত্র ১০% শিক্ষার্থী। ফলে নিত্যদিন ‘বাদূর ঝোলা’ হয়ে যাতায়াত করতে হয় তাদের। আর এতে মাঝে মধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা যার বলি হয় কিছু শিক্ষার্থীর প্রাণ তবুও যেন টনক নড়ে না প্রশাসনের।
অপরদিকে এক রুমের একটি মেডিকেল সেন্টার ও একজন চিকিৎসক দিয়েই চলছে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসেবা, শুধু ওষুধ লিখে দিয়ে তা বাহির থেকে কিনে খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন এখানে কর্মরত একজন মাত্র চিকিৎসক। ফলে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থাকলেও তা শিক্ষার্থীদের কোনো কাজেই আসছে না। কারণ একে তো নেই পর্যাপ্ত বইয়ের সুবিধা আবার নেই বাইরের কোনো বই নিয়ে প্রবেশের অনুমতি। ফলে কিছুদিন আগে চালু হওয়া ছোট আকারের একটি উন্মুক্ত পাঠাগারে ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো।
অভিযোগ রয়েছে, ক্যান্টিনে খাবারের মান প্রতিনিয়ত নিন্মমুখী হচ্ছে এছাড়া রয়েছে উচ্চ দামে খাবার বিক্রির অভিযোগ। এই ক্যান্টিনটিতে ৩৫ টাকা দিয়ে ডিম ও খিচুরি বা মাংস ও খিচুরি থাকলেও নেই কোনো ভাতের ব্যবস্থা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী হুমায়ূন কবির বাংলানিউজকে বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলে সমস্যার কোনো শেষ নেই। যেখানেই তাকাবেন সেখানেই সমস্যা। এর মধ্যে কিছু কমন সমস্যা হলো বাস ও আবাসন সংকট। আবাসন সংকট সমাধান সময় সাপেক্ষ বলে ধরে নিলেও বাসের সমস্যা তো প্রশাসন চাইলেই সমাধান করতে পারেন। আমরা অসংখ্যবার ডাবল ট্রিপ দাবি করলেও তা কানে তুলছেন না কর্তাব্যক্তিরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বাংলানিউজকে বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কাজ এক ‘নতুন ক্যাম্পাসে’ আটকে আছে। যাই করতে বলা হোক একই উত্তর নতুন ক্যাম্পাসে সব হবে। কিন্তু কবে হবে বা আদৌ হবে কিনা তা সন্দেহ আছে। প্রশাসনের উচিত সব ধরনের কাজ একটা সমাধানে নিয়ে আসা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, এসব সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তারা কাজ করছেন। তারপরও আমি সবার সঙ্গে কথা বলে সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের জন্য চেষ্টা করব।
এদিকে বিভিন্ন সময়ে এসব সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও উপাচার্যকে অবহিত করলে কিংবা সাংবাদিকরা মন্তব্য জানতে চাইলে উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান জানান, এগুলো অনেক পুরাতন সমস্যা একদিনে যেমন সৃষ্টি হয়নি তেমনি একদিনে এগুলো সমাধান করাও সম্ভব নয়। এখানে জায়গার সমস্যা থাকায় সব কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের নতুন ক্যাম্পাস বিশাল আয়তনে সব কিছু পর্যালোচনা করে তৈরি হবে যে কারণে সেখানে সব কিছুই থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৫২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৮
কেডি/আরএ