ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

যে কোনো বয়সে ভর্তি, পলিটেকনিক শিক্ষায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২০
যে কোনো বয়সে ভর্তি, পলিটেকনিক শিক্ষায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা

ঢাকা: যে কোনো বয়সের শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত দেশের প্রকৌশল ও পলিটেকনিক শিক্ষা পরিবেশকে উত্তপ্ত করে তুলেছে দাবি করে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা বলছেন, ভবিষ্যতে এ সিদ্ধান্ত শিক্ষায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে।
 
২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে দেশের সরকারি পলিটেকনিকে যে কোনো বয়সের শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তের পিছনে কোনো মহলের সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রও দেখছেন তারা।


 
সরকারের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে বয়স্কদের জন্য আলাদাভাবে কারিগরি শিক্ষা দেওয়াসহ বেশকিছু প্রস্তাবনা দিয়ে তারা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত বাতিল না করা হলে কঠোর আন্দোলন ছাড়া আর উপায় থাকবে না ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের।
 
শুক্রবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর আইডিইবি ভবনে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) আয়োজিত ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে কারিগরি শিক্ষা গুরুত্ব’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রকৌশলীরা।
 
মতবিনিময় সভায় আইডিইবির সভাপতি একেএমএ হামিদ বলেন, কারিগরি শিক্ষায় পুরাতন নানা সংকট না মিটিয়ে নতুন সংকট তৈরি করা হয়েছে। বয়স্ক ও বিবাহিতরা ভর্তি হলে পলিটেকনিক শিক্ষায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।
 
লিখিত বক্তব্যে আইডিইবি’র সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনার নতেৃত্বে সরকার গঠনকালে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শনের আলোকে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির হার নির্ধারণ করা হয় ২০২০ সালে ২০ শতাংশ, ২০৩০ সালে ৩০ শতাংশ এবং ২০৪০ সালে ৫০ শতাংশ। সেই পরিকল্পনায় যেখানে ২০০৮ সালে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষার্থীর হার ছিল মাত্র ১.৮ শতাংশ, এখন তা প্রায় ১৭ শতাংশ উন্নীত হয়েছে।
 
‘শেখ হাসিনার সরকার কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব ও লক্ষ্য অর্জনে বহুমাত্রিক কার্যক্রম গ্রহণ করায় দেশে সরকারি ৪৯টি পলিটেকনিকের পাশাপাশি ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু ও বেসরকারিতে পাঁচ শতাধিক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়েছে। আরও ২৩টি আন্তর্জাতিকমানের সরকারি পলিটেকনিক ও মেয়েদের জন্য আরো চারটি বিশ্বমানের পলিটেকনিক স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। ’

‘প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টিএসসি স্থাপনের জন্য এযাবতকালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষায় সবচেয়ে বড় প্রকল্প গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। সরকারি পলিটেকনিকে দ্বিতীয় শিফট চালু করা হয়েছে। দেশের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ১০০ নম্বরের একটি করে কারিগরি বিষয় আবশ্যিক হিসেবে পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে ৯ম ও ১০ম শ্রেণিতে সব মাধ্যমিক স্কুল ও দাখিল মাদ্রাসায় এসএসসি ভোক কোর্স চালু করা হচ্ছে। ফলে কারিগরি শিক্ষার প্রতি অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হতে শুরু করেছে। ’
 
শামসুর রহমান জানান, অগ্রগতির এ পর্যায়ে এসে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারি পলিটেকনিকে যে কোনো বয়সের শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত দেওয়ায় শান্ত প্রকৌশল ও পলিটেকনিক শিক্ষা পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আমরা শিক্ষামন্ত্ৰীর সঙ্গে বসে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের অনুরোধ করি কিন্তু তা অগ্রাহ্য করা হয়েছে।
  
শোকের মাসে বিভিন্ন মহলে মতবিনিময়সহ গণসাক্ষর গ্রহণ করা হচ্ছে জানিয়ে সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান জানান, গণসাক্ষরসহ প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।
 
‘এরপরও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে ৫ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলনে করে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষকদের নিয়ে দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো। ’
 
মতবিনিময় সভায় দাবি করা হয়, পিতৃতুল্য বা বড় ভাইয়েল বয়সী শিক্ষার্থীদের সমাথে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মানসিক ভারসম্যের ব্যাপক ফারাক তৈরির কারণে শ্রেণিকক্ষের ভারসম্য নষ্ট হবে এবং শিক্ষকরাও তা সামাল দিতে পারবেন না। এতে কারিগরি শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
   
বয়স্ক ও বিদেশ ফেরতদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর এনএসডিএ, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এনটিভিকিউএফ’র আওতায় বিদেশে চাকরি এবং উদ্যোক্তা তৈরির কর্মসূচিই যুক্তিযুক্ত বলে দাবি করা হয় মতবিনিময় সভায়।
  
শামসুর রহমান বলেন, বয়স্কদের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং যদি পড়াতে হয় তাহলে ১-২টি সরকারি পলিটেকনিক বা টিএসসিকে আলাভাবে বেছে নিতে পারে। বিকল্প হিসেবে ১-২টিতে সান্ধ্যাকালীন কোর্সও করানো যেতে পারে।
 
 ব্যয়বহুল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা প্রতি শিক্ষার্থীর পিছনে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ৭/৮ লাখ টাকা ব্যয় হয় জানিয়ে মতবিনিময় সভায় শামসুর রহমান বলেন, তরুণ শিক্ষার্থীদের দিয়ে ৩০-৪০ বছর দেশ ও জাতিকে সেবা দেওয়া যাবে। কিন্তু সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করে ৪০/৫০ বছর বয়সীরা সেবা দেবে ১০/১২ বছর। এতে অর্থের অপচয় হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২০
এমআইএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।