ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

সুমন কুমার রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩১ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০২১
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

টাঙ্গাইল: নানা কারণ দেখিয়ে বিল-ভাওচারের মাধ্যমে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ও সাবেক ভিসি মো. নুরুল ইসলাম এবং পরিচালক (হিসাব) একেএসএম তোফাজ্জল হকের বিরুদ্ধে ১০ বছরে প্রায় ১৯ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।  

বিভিন্ন সময় বিশ্বিবিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফান্ড থেকে অগ্রীম অর্থ নিয়ে তা সমন্বয় না করা এবং নিয়ম বর্হিভূতভাবে বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা তোলার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

এই ১০ বছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। তবে এ সব অনিয়ম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের যোগসাজশে হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয় হিসাব শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, বিগত বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার খরচের কথা বলে পরিচালক (হিসাব) একেএসএম তোফাজ্জল হক বিভিন্ন সময় কয়েক কোটি টাকা নিয়েছেন। তবে এই টাকা তিনি একাই নিয়েছেন কিনা এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ কর্তৃপক্ষ। এর কোনো হিসাব উপস্থাপন বা সমন্বয়ও করা হয়নি এখন পর্যন্ত। এভাবে প্রতিবছর মোটা অংকের টাকা নয়-ছয় হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়েটিতে।

বিশ্ববিদ্যালয় হিসাব শাখা সূত্র জানায়, ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় বিভিন্ন খরচ বাবদ ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর ভাউচারের মাধ্যমে দেড় লাখ টাকা অগ্রীম নিলেও এই টাকা কোন খাতে ব্যয় করেছেন তার কোনো সঠিক হিসাব তিনি সমন্বয় করেননি। একই কায়দায় ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় পারিতোষিক বাবদ ২০১১ সালের ২০ ডিসেম্বর ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ২০১২ সালের ২০ নভেম্বর ৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর চেকের মাধ্যমে ২৬ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার জন্য ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর ক্যাশ ভাউচার ৫ লাখ টাকা, ২০১৭-১৮ ভর্তি পরীক্ষায় ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর চেকের মাধ্যমে ৩৬ লাখ টাকা ও একই বছর ১০ ডিসেম্বর চেকের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা, ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর ৩৫ লাখ টাকা, ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর ৪০ লাখ টাকা এবং বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের বিভিন্ন খরচ বাবদ ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি চেকের মাধ্যমে ২৫ লাখ টাকা অগ্রীম নেন।

২০১০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৯ কোটি টাকা অগ্রীম নিলেও এ টাকার ব্যয়ের হিসাব সমন্বয় এখন পর্যন্তও দিতে পারেননি পরিচালক (হিসাব) একেএসএম তোফাজ্জল হক। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায় এই টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও হিসাব শাখার পরিচালক তোফাজ্জল হক পকেটে ভরেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর কাজের গতি বাড়ানোর সুবিধার্থে ২৫ হাজার টাকার চেক অনুমোদনের ক্ষমতা পরিচালক হিসাবকে দেন। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে বিভিন্ন সময় ভুয়া ভাউচার তৈরি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী বলেন, হিসাব পরিচালকের এই সকল কাজে বাজেট শাখার উপ-পরিচালক মো. ফারুক হোসেন ও অডিট শাখার উপ-পরিচালক মো. ওমর ফারুক প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। বাজেট শাখা থেকে বিভিন্ন কাজের জন্য বাজেট তৈরি করা হয়। পরে পরিচালক (হিসাব) সেই কাজের ব্যয় মেটানোর কথা বলে অগ্রীম নেন। কিন্তু সেগুলোর হিসাব আর দেওয়া হয় না। একারণে এই কাজের জন্য বাজেট শাখার উপ-পরিচালক অনৈতিক সুবিধা নিয়ে থাকে। একইভাবে অডিট শাখার উপ-পরিচালক অর্থ পরিচালকের যাবতীয় অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে সহযোগিতা করে। বিনিময়ে তিনিও মোটা অংকের টাকা নিয়ে থাকেন। তবে অভিযুক্ত এই দুই কর্মকর্তা তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেন।

পরিচালক (হিসাব ও হিসাব) বিভিন্ন সময় অগ্রীম টাকা নিয়ে সেগুলো সমন্বয় করেছেন কিনা এ বিষয়ে হিসাব বিভাগের উন্নয়ন ও সমন্বয় শাখার উপ-পরিচালক মুহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজের জন্য কমিটি রয়েছে। সেই কমিটি অগ্রীম টাকা দেওয়ার জন্য সুপারিশ করে থাকে। এরপর আমরা সেই টাকা দিয়ে থাকি। আর ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত পরিচালক (হিসাব) নিজেই তুলতে পারেন। তার বেশি এক টাকা হলেও ভিসির অনুমোদন লাগে। আর আমরা তাকে এই টাকা সমন্বয় করতে বলছি। আর নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছরের সমন্বয় প্রতিবছরই করার কথা। কিন্তু তা করা হয়নি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (হিসাব) একেএসএম তোফাজ্জল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমি নিয়ম মেনেই কাজ করেছি। আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নই। তবে কিছু টাকা সমন্বয় করা হয়নি বলেও তিনি স্বীকার করেন। দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করি কিন্তু ঢাকায় আমার কোনো বাড়ি বা জায়গা নেই। আমার অফিসের অনেকেরই বাড়ি গাড়ি আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা, কর্মচারী বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে পরিচালক হিসাব গত এক দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নেবে না। তিনি বর্তমান ভিসির আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। ভিসি স্যার যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছে তার সবগুলোতে পরিচালক (হিসাব) সরাসরি জড়িত। বর্তমানে ভিসির মেয়াদ এ বছর ২৮ জুলাই শেষ হবে। স্যার চলে গেলে তিনিও চলে যাবেন। তাই তার বিরুদ্ধে কথা বলেও লাভ নেই।

এ বিষয়ে মাওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয় বলে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৩ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।