ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ছাত্রলীগের ৪ নেতা কুয়েট থেকে আজীবন বহিষ্কার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২২
ছাত্রলীগের ৪ নেতা কুয়েট থেকে আজীবন বহিষ্কার কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান

খুলনা:

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ চার শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া আরও ৪০ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি ও জরিমানা করা হয়েছে।

বুধবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে কুয়েট সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত ৭৯ তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ ৪৪ শিক্ষার্থীর শোকজের জবাব এবং ৪৮ পৃষ্ঠার তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কমিটির সভাপতি ও কুয়েট ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আজীবন বহিষ্কৃতরা হলেন- সাদমান নাহিয়ান সিজান (১৩০৭০২৪), হাসান আব্দুল কাইয়ুম (১৬০৫০৩৫), মো. কামরুজ্জামান রাজ্জাক (১৬০৫০৩৯) ও রিয়াজ খান নিলয়কে (১৬০৭০৭৫)।

এছাড়া দুই শিক্ষাবর্ষের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং হল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে মো. তাহমিদুল হক ইশরাক (১৫০১০৯০), মাহমুদুল হাসান (১৬০১০২৯), মো. সাদমান সাকিব (১৫১৯০৩৩), মাহিন মুনতাসির (১৬২৭০০৭), রাগিব আহসান মুন্না (১৫১৯০৪৮), মীর জামিউর রহমান (১৬০৫০২৪) ও রুদ্রনীল সিঃহ শুভকে (১৩১১০৪৫)।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক শিক্ষাবর্ষের জন্য এবং হল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে আনিকুর রহমানকে (১৭০৩১১৭)।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক শিক্ষাবর্ষের জন্য ও হল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে ২২ ছাত্রকে। তবে তাদের শাস্তি আপাতত স্থগিত থাকবে। ভবিষ্যতে কোন অপরাধ বা অসদাচারণ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে এই শাস্তি আপনাআপনি বলবৎ হবে। তার হলেন- ফয়সাল আহমেদ রিফাত (১৬০৫০৯৩), ইমরান হোসেন আউয়াল (১৭১১০৪৫), মো. খালিদ সাউফুল্লাহ সুভ্র (১৬০১১০১৩), মো. ফাইয়াজ রহমান (১৭০৭০৭৭), নুর মোহাম্মদ (১৬০৫০৮৮), মো. নাইমুর রহমান অন্তু (১৬২৭০১০), মো. সাবিদ জোয়াদ্দার (১৭০১১০৮), মো. মাহবুবুর রহমান রাফি (১৭০১০৬৮), মো. আতিকুর রহমান (১৭০১১০৪), মো. সাদিকুর ইসলাম (১৭১১০৪৮), নাজমুস সাকিব সিফাত (১৭০১০৮৪), মো. গোলাম কিবরিয়া (১৭০১০৮৮), ওসমান ফারুক (১৭০৭০৭৬), সাগর তরফদার (১৭০১০৯৭), প্রান্ত কর্মকার (১৭০১১১৭), সাফাত হাসান (১৭২৭০০৩), মানিক কুমার সরকার (১৭০৫০৪৪), মো. আমিনুর ইসলাম (১৬০৫০৭৪), মো. মুহিদবীন হোসেন সরদার (১৭০৭০৮১), মো. ইমতিয়াজ আহমেদ (১৬২৭০২০), সাফায়েত মাহবুব (১৭০১০৯১) ও মো. আনোয়ার হোসেন সাকিব (১৭০৫০৩৮)।

আর ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে ১০ ছাত্রকে। তারা হলেন- আহসানুল আবেদীন (১৭১১০৪২), কবির হোসেন (১৭১১০৪৬), মো. শুভ মন্ডল (১৭০১১১২), শাহরিয়ার আহমেদ মুশফিক (১৭০১১১১), ফয়সাল কবির ফাহিম (১৭০১১০৯), শাফিন আহমেদ অনন্ত (১৭১১০৩৮), মো. হান্নান ইসলাম (১৮০১০৩৭), হাফিজ সরদার (১৮০১০৩৩), সানজিদুল ইসলাম (১৯০৭০৭৯) ও মো. সাদাফ হেলাল (১৫১৯০২৬)।

কুয়েটের লালনশাহ হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য-ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে, ফজলুল হক হলের বর্ডার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান তার অনুগতদের ডাইনিং ম্যানেজার নির্বাচিত করার প্রচেষ্টার জন্য ৩০ নভেম্বর (মঙ্গলবার) ড. মোঃ সেলিম এর দাপ্তরিক কক্ষে অশালীন আচরণ ও মানুষিক নির্যাতন করে। সাধারণ সম্পাদক সহ উপস্থিত ছেলেরা, হলের প্রভোষ্ট ড. সেলিম হোসেনকে বেশ কয়েকদিন ধরে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিলেন, তাদের মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচন করার জন্য। তারই ধারাবাহিকতায়, ঘটনার দিন সাড়ে ১২ টার দিকে সাদমান  নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্ররা ক্যাম্পাসের রাস্তা হতে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা করা শুরু করে। পরবর্তীতে তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করে। পরে বেলা ৩টায় মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেন।

শিক্ষকের মৃত্যুর দিন রাতে এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এ কমিটির সভাপতি ছিলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. আরিফুল ইসলাম। এ ছাড়া দুজন সদস্য ছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আতাউর রহমান ও ইইই বিভাগের অধ্যাপক কল্যাণ কুমার হালদার। তাদের মধ্যে কল্যাণ কুমার হালদার লিখিতভাবে এবং মো. আরিফুল ইসলাম মৌখিকভাবে তদন্ত করতে অপারগতা জানিয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার রাতে ৫ সদস্যের নতুন এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গত ২৮ ডিসেম্বর)বিকেল ৫টার দিকে কুয়েটের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেনের কাছে ৪৮ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি।

এর প্রেক্ষিতে গত শনিবার (৪ নভেম্বর) ছাত্র শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি ভঙ্গ করায় কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ ৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়।

গত ১৫ ডিসেম্বর ড. সেলিমের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাঁশগ্রাম কবরস্থান থেকে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ সাদাতের তত্ত্বাবধানে তার মরদেহ উঠানো হয়। তবে কুষ্টিয়ায় ফরেনসিক পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় ওইদিন সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গ থেকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন (১৬ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে তার মরদেহ বাঁশগ্রামে পুনরায় দাফন করা হয়।

এদিকে প্রফেসর ড. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় কুয়েটে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হলে গত ৩ ডিসেম্বর দুপুরে সিন্ডিকেট সভায় ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধসহ বিকেল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে বন্ধের মেয়াদ ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে ৭৮তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় জানানো হয়, কুয়েটের শিক্ষা কার্যক্রম ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি থেকে চালু হবে। এর আগে শিক্ষার্থীদের জন্য ৭ জানুয়ারি আবাসিক হল খুলে দেওয়া হবে।

>>>আরও পড়ুন: কুয়েট শিক্ষকের মৃত্যু, শোকজের জবাব দিলেন ৪৪ শিক্ষার্থী

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২২
এমআরএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।