ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

বিসিসি নির্বাচন

৩৫ দফার ইশতেহার ঘোষণা করলেন নৌকার প্রার্থী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩০ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০২৩
৩৫ দফার ইশতেহার ঘোষণা করলেন নৌকার প্রার্থী

বরিশাল: একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, পরিবেশবান্ধব স্মার্ট ও মানবিক শহর গড়ে তোলার প্রত্যাশা করে শতভাগ নিষ্ঠা, সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে বরিশাল সিটি করপোরেশনকে পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত।

৩৫ দফার ইশতেহার ঘোষণা করেছেন তিনি।

 

বুধবার (০৭ জুন) বেলা ১২ টায় বরিশাল নগরের বগুড়া রোডস্থ একটি কনভেনশন হলে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি।

শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়েছেন। তার নৌকা প্রতীকের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন মেয়র পদে নির্বাচিত করার লক্ষ্যে আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

খোকন বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের ভয়াবহ নির্মম হত্যাকাণ্ডের একজন প্রত্যক্ষদর্শী আমি। ইতিহাসের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঘাতকের বুলেটবিদ্ধ হয়ে আজও আমি বেঁচে আছি।  

খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, বাবা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের আদর্শ বুকে ধারণ করে বরিশাল নগরবাসীর সেবক হিসেবে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে মেয়রপ্রার্থী হয়েছি। দীর্ঘদিন উন্নয়ন বঞ্চিত বরিশাল নগরবাসীকে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নসহ বরিশাল সিটি করপোরেশনকে আধুনিক জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।  

এসময় নগরবাসীকে সব ধরনের হয়রানি মুক্ত করতে দ্রুত সেবা প্রদানের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।

 “নতুন বরিশাল গড়ার অঙ্গীকার জয় হোক শেখ হাসিনার” এই নির্বাচনী স্লোগানের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমাকে নির্বাচিত করলে দীর্ঘদিন উন্নয়নবঞ্চিত বরিশাল নগরীর উন্নয়নে নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতিসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞগণের সমন্বিত পরামর্শ ও দিকনির্দেশনায় মহা-পরিকল্পনা গ্রহণা করে একটি উন্নত জনবান্ধব বরিশাল নগর গড়বেন।

অনাকাঙ্ক্ষিত ও অযৌক্তিক হোল্ডিং ট্যাক্স পুনঃমূল্যায়ন করে কর ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনায়ন এবং ট্রেড লাইসেন্স প্রদান সহজিকরণ করে অনলাইন সেবা চালু করা হবে। নাগরিক মতামত গ্রহণ করার মাধ্যমে বাদির প্ল্যান অনুমোদন সহনীয়, হয়রানি ও ভীতিমুক্ত করা হবে।  

এছাড়াও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্ল্যান অনুমোদনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণে বিদ্যমান ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কারসহ নতুন ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ করা হবে।

নগরীর খালসমূহ খননের বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করার পাশাপাশি বর্ধিত এলাকায় পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধান, রাস্তাঘাটের সংস্কার ও নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হবে। নগর ভবনে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনসহ সকল ধরনের নাগরিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে চলমান অনলাইন ওয়ান-স্টপ সার্ভিস ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনা হবে।  

প্রতিটি ওয়ার্ডের ময়লা আবর্জনা যথাসময়ে অপসারণ এবং পচনশীল বর্জ্য সংগ্রহ করে জৈব সার, বায়োগ্যাস উৎপাদন এবং মশক নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় লাইন চার্জ সহনীয় করে শতভাগ বিশুদ্ধ, নিরাপদ ও সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে।

খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, নগরীর রিকশা ও ব্যাটারিচালিত যানবাহনসমূহ চলাচলে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় আনা হবে। প্রতিটি সড়কে পর্যাপ্ত বাতির ব্যবস্থা করা হবে।  জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে 'জনতার মুখোমুখি মেয়র' শীর্ষক নিয়মিত মতবিনিময়ের মাধ্যমে ওয়ার্ড ভিত্তিক সমস্যার সমাধান নিশ্চিত করব।

‘সবার বরিশাল' নামে একটি অ্যাপের মাধ্যমে নগরবাসীর কাছ থেকে নাগরিক সমস্যার অভিযোগ গ্রহণ করবেন জানিয়ে বলেন, সার্বক্ষণিক তদারকির মাধ্যমে সমাধানপূর্বক নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। বরিশাল সিটি করপোরেশনকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত নগর হিসেবে গড়ে তোলা হবে। পরিকল্পিত বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে বরিশাল নগরীকে গ্রিন সিটি হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। বিভিন্ন কলোনির বাসিন্দাদের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। ওয়ার্ডভিত্তিক নগরীর বিভিন্ন সড়ক উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে। নগরীর বেলতলা ও রূপাতলী এলাকায় নির্মাণ করার পর অকেজো হয়ে পড়ে থাকা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের মাধ্যমে পূর্ণরূপে চালু করা হবে। হকারদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। নগরীতে নারী-পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকলের জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে।

তারুণ্যকে অনুপ্রাণিত করতে প্রতিটি এলাকায় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন এবং বিদ্যমান কমিউনিটি সেন্টারগুলোর আধুনিকায়নের মাধ্যমে বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। বরিশাল নগরীতে গ্যাস সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডকে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে বরিশালকে ডিজিটাল নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সহায়তা প্রদানসহ সরকার প্রবর্তিত সকল ধরনের ভাতা যথাযথভাবে বণ্টন করা হবে।

মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে নগরীর রাস্তার নামকরণ করা হবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে অসম্প্রদায়িক নগর প্রতিষ্ঠা করা হবে। তরুণ সমাজের জন্য আইটি নগরী প্রতিষ্ঠাসহ ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।  

নগরীর বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রসমূহের আধুনিকায়ন এবং ইনফেকশাস ডিজিস নিরাময় সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে।  

নগরীর স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে। নগরীর সব মসজিদ ও মাদরাসার উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নগরীর সকল মন্দির ও গীর্জার উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইউএনডিপির অর্থায়নে পুনরায় সিডিসি কার্যক্রম চালু করা হবে। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নগরীতে বিনোদন কেন্দ্র ও পার্ক নির্মাণ করা হবে। বরিশালকে শিল্প, বাণিজ্য ও পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

আগামী ১২ জুন কেন্দ্রে গিয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে ইশতেহারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের মাধ্যমে বরিশাল সিটি করপোরেশনকে একটি উন্নত ও আদর্শ করপোরেশনে রূপ দিতে সহায়তা চেয়েছেন খোকন সেরনিয়াবাত।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম, অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, অ্যাডভোকেট লস্কর নুরুল হক, অ্যাডভোকেট আনিসউদ্দিন আহম্মেদ শহীদ, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০২৩
এমএস/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।