ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ মাঘ ১৪৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ রজব ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

এনআইডি সরকারের অধীনে নেওয়ার আইন জরুরি ভিত্তিতে বাতিলের সুপারিশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৫
এনআইডি সরকারের অধীনে নেওয়ার আইন জরুরি ভিত্তিতে বাতিলের সুপারিশ

ঢাকা: জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনের নেওয়ার আইন জরুরি ভিত্তিতে বাতিল করতে হবে।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন পুরো নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের নয় পৃষ্ঠার সুপারিশ জমা দেয়।

এতে এমন সুপারিশ করা হয়েছে।

জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবস্থাপনা
(ক) জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন ২০২৩- যার মাধ্যমে এনআইডি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে– জরুরি ভিত্তিতে বাতিল করা।
(খ) জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০১০কে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে পুনর্বহাল করা, যাতে এটি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রস্তাবিত আধুনিক আইডেন্টিটি সিস্টেমকে আইনি ভিত্তি দিতে পারে এবং যার মাধ্যমে প্রতিটি নাগরিক তার আইডেন্টিটি তথ্যের মালিকানা এবং তার সকল আইডেন্টিটি তথ্যের উপরে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পেতে পারেন।
(গ) জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত বিদ্যমান স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) পর্যালোচনা করে সকল অব্যবস্থাপনা, হয়রানি ও অনিয়মের অবসান ঘটিয়ে এ কার্যক্রমকে জনবান্ধব করা।
(ঘ) ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত সকল নাগরিককে হালনাগাদ ছবিযুক্ত এনআইডি স্মার্টকার্ড প্রদানের লক্ষ্যে এখনই প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করা, যাতে ভোটার শনাক্তকরণে এটি ব্যবহার করা যায়।
(ঙ) বাংলাদেশের প্রায় সকল গণমাধ্যমে লাখ লাখ বাংলাদেশি নাগরিকের এনআইডি তথ্য ফাঁস হওয়া এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্ম থেকে নামমাত্র মূল্যে বা এমনকি বিনামূল্যে এই তথ্যগুলো ফাঁসের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে, এই দাবিগুলোর সত্যতা সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ এবং এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁসের অন্তর্নিহিত কারণ, প্রভাব এবং পরিণতি নির্ধারণ করতে স্বাধীন তদন্তের ব্যবস্থা করা এবং দোষী ব্যক্তিদের প্রচলিত আইনে শাস্তির ব্যবস্থা করা।
(চ) বর্তমানে ১৬ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী বাংলাদেশি নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের পাশাপাশি ভবিষ্যতে ১০ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী শিশুদের জন্য পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম গ্রহণ করা।
(ছ) সারাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এনআইডি সংক্রান্ত সকল সেবা সুচারুরূপে শেষ করার নিমিত্তে দেশের বৃহত্তম জাতীয় তথ্য ভাণ্ডারের নিরবচ্ছিন্ন অপারেশন, আপগ্রেডেশন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিবর্তে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংস্থা নামে একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা গঠন করা, যার দায়িত্ব হবে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন, সংরক্ষণ ও বিতরণ। এই সংস্থার অর্গানোগ্রাম ও জনবল কাঠামো নির্ণয়ে একটি আন্তর্জাতিক অডিট ফার্মের মাধ্যমে নিরীক্ষণ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
(জ) বর্তমানে পরিচালিত সম্পূর্ণ এনআইডি সিস্টেমকে তথা সংশ্লিষ্ট ডাটা সেন্টার, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার/ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন, ডাটাবেস ক্রেডেনশিয়ালস ইত্যাদি ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান থেকে প্রস্তাবিত জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংস্থার নিকট হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা। প্রস্তাবিত আধুনিক আইডেন্টিটি সিস্টেমের জন্য একই ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

আইডেন্টিটি এবং আইডেন্টিটি সিস্টেম
(ক) জাতীয় পরিচয়পত্রকে ডিজিটাল (ভার্চুয়াল) ভার্সনে রূপান্তরের ব্যবস্থা করা। রিপোর্টে প্রস্তাবিত Self-Sovereign Identity (SSI) ভিত্তিক আইডেন্টিটি সিস্টেমের মাধ্যমে আমাদের বিদ্যমান এনআইডি কার্ডকে একটি স্ট্যান্ডার্ডাইজড ডিজিটাল ফরম্যাটে কার্যকরভাবে রূপান্তর করা। এই লক্ষ্যে আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হবে বর্তমান এনআইডি সিস্টেমকে একটি পূর্ণাঙ্গ SSI ভিত্তিক আইডেন্টিটি সিস্টেমে রূপান্তর করা।
(খ) প্রস্তাবিত SSI ভিত্তিক আইডেন্টিটি সিস্টেম বাস্তবায়নের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে কোনো স্ট্যান্ডার্ডাইজড SSI প্রযুক্তি স্ট্যাক ব্যবহার করে প্রস্তাবিত আইডেন্টিটি সিস্টেম ডিজাইন ও ডেভেলপ করা। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় ট্রাস্ট ফ্রেমওয়ার্ক, গভর্ন্যান্স ফ্রেমওয়ার্ক এবং আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা এবং অ্যাপ্লিকেশন ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা।
(গ) SSI ভিত্তিক আইডেন্টিটি সিস্টেমের অনুষঙ্গ হিসেবে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের স্মার্টফোনের জন্য একটি SSI ওয়ালেট ডেভেলপ করা। এই ওয়ালেটটি ডিজাইন এবং ডেভেলপের সময় এর সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসিকে অগ্রাধিকার দেওয়া। তবে যাদের স্মার্টফোন নেই তাদের জন্য ফিচার ফোনভিত্তিক একটি সমাধান ডেভেলপ করা।
(ঘ) প্রস্তাবিত সিস্টেম এবং এর বিভিন্ন সাব কম্পোনেন্ট ও SSI ওয়ালেটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত নিরাপত্তা নিরীক্ষা (সিকিউরিটি অডিট) প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সিকিউরিটি অডিট পরিচালনা করা।
(ঙ) SSI ভিত্তিক এই সমাধান প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার পরে বিদ্যমান সরকারি এবং বেসরকারি অনলাইন পরিষেবাগুলো রূপান্তরের ব্যবস্থা করা, যাতে এই সিস্টেমের সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসি ফিচারগুলোর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা সম্ভব হয়। এর জন্য আন্তর্জাতিক বেস্ট প্র্যাক্টিসগুলো অনুসরণ করে একটি পরিচয় প্রমিতকরণ (identity standardization) ফ্রেমওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা, যাতে দেশের মধ্যে এবং বিশ্বব্যাপী অন্যান্য দেশের সঙ্গে এনআইডি সিস্টেমের আন্তঃপরিচালনযোগ্যতা (interoperability) নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
(চ) প্রস্তাবিত সিস্টেমটি ডেভেলপ করার পরে এটিকে rigorously টেস্ট করা। বিশেষ করে প্রস্তাবিত সিস্টেমটিতে অনেকগুলো জটিল এবং পরস্পর সংযুক্ত সাব-কম্পোনেন্ট রয়েছে সেগুলোকেও পৃথকভাবে টেস্ট করা।
(ছ) এরূপ একটি কমপ্রিহেনসিভ জাতীয় পরিচয় ব্যবস্থার সঙ্গে উপযুক্ত ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা এবং গোপনীয়তা (personal data protection and privacy) আইন প্রণয়ন করা। এই আইন দেশের মধ্যে পরিচয় এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য সম্পর্কিত যেকোনো ভবিষ্যৎ অপব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে।

সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর সংস্কার কার্যক্রম শুরু করবে অন্তর্বর্তী সরকার।

বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৫
ইইউডি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।