ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

সংসদ নির্বাচনের সময় গণনা শুরু বুধবার

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২৩
সংসদ নির্বাচনের সময় গণনা শুরু বুধবার

ঢাকা: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হচ্ছে বুধবার (০১ নভেম্বর)। এ দিন থেকে পরবর্তী নব্বই দিন অর্থাৎ আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে।

আর এ জন্য সব প্রস্তুতি গুছিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূল থাকুক বা প্রতিকূল থাকুক, তাদের কাছে কোনো অপশন নেই। সংবিধানে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে নির্বাচনী সময় গণনা শুরু হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তেই বিএনপির দেওয়া অবরোধ কর্মসূচিতে সারা দেশেই সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আর এ নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে কূটনৈতিক পাড়াতেও। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস এ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ইসির অবস্থানও জেনে গেছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, তার দেশ আশা করে, শর্তহীন সংলাপের বসে সব পক্ষ একটি সমাধানের পথে এগোবে। কেননা, গণতান্ত্রিক নির্বাচনে সহিংতার কোনো স্থান নেই।

আগেও নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসলেও ফের আরেকটি সংলাপের আয়োজন করছে আগামী শনিবার (০৪ নভেম্বর)। ওইদিন সকাল ও বিকেলে ২২টি করে মোট ৪৪টি দলকে বৈঠকে বসার জন্য আমন্ত্রণ জানাবে ইসি। এক্ষেত্রে বিএনপিকেও আমন্ত্রণ জানাবে। যদিও দলটি এর আগে কোনো ডাকেই সাড়া দেয়নি।

নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ পুরোদমে শুরু করার অংশ হিসেবে বুধবার থেকেই ইসির সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, গাড়িচালক, নিরাপত্তা প্রহরী, ইসিতে নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সব ছুটির দিনে অফিস করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন। এক্ষেত্রে সাপ্তাহিক এবং সরকারি ছুটি কোনোটাই নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোগ করতে পারবেন না তারা।

স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলেও নির্বাচন কমিশনকে সরকারি কর্মচারীদের প্রেষণে নিয়োগ করে নির্বাচনী কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গেও বুধবার বসছে ইসি। আন্তঃমন্ত্রণালয় এ বৈঠক ১১টি আলোচ্যসূচিতে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

এগুলোর মধ্যে রয়েছে— ভোটকেন্দ্রের স্থাপনা মেরামত ও ভৌত অবকাঠামো সংস্কার; পার্বত্য/দুর্গম এলাকায় হেলিকপ্টারে নির্বাচনী মালামাল পরিবহন এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ভোটকেন্দ্রে আনা-নেওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ; নির্বাচনী প্রচার, উদ্বুদ্ধকরণ ইত্যাদি বিষয়ে প্রচার মাধ্যম কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণ; দেশি/বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগে সহায়তা প্রদান; পোস্টাল ব্যালটে ভোটপ্রদানের বিষয়ে সহযোগিতা; নির্বাচনে শান্তিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ; ঋণ খেলাপি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, সংকলন ও প্রদান বিষয়ক কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত; নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালন এবং মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শোডাউন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করার লক্ষ্যে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ; বার্ষিক ও পাবলিক পরীক্ষার সময়সূচি পর্যালোচনা; দৈনন্দিন আবহাওয়ার পূর্বাভাস সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা ও নির্বাচনী এলাকায় বিদ্যমান নির্বাচনী প্রচার সামগ্রী অপসারণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা প্রদান।

ইতোমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক সম্পন্ন করেছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম।

তফসিল ঘোষণার জন্য যে সব কাজ গুছিয়ে আনা দরকার তার প্রায় সবই শেষ। বাকি রয়েছে ৩০০ আসন ভিত্তিক ভোটার তালিকা। আগামী বৃহস্পতিবার (০২ নভেম্বর) সেটি চূড়ান্ত করা হবে। অর্থাৎ ওই দিন নির্ধারণ হবে কত সংখ্যক ভোটার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন।

তফসিল ঘোষণার পূর্বে প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে ইসি। বুধবার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন পাঁচ সদস্যের কমিশন। আর রাষ্ট্রপতি চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরলেই সাক্ষাৎ হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সৌজন্য সাক্ষাৎ হিসেবে ইসির পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও মূলত নির্বাচনী প্রস্তুতির সার্বিক বিষয় অবহিত করা হবে তাদের।

ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, নভেম্বরের প্রথমার্ধেই তফসিল দেবে নির্বাচন কমিশন। আর ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই অনুষ্ঠিত হবে সংসদ নির্বাচন। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষের দিকে ঘোষণা করা হতে পারে তফসিল। তার আগে বাংলাদেশ টেলিভিশন সিইসি’র দেওয়া জাতির উদ্দেশে ভাষণ রেকর্ড করবে। আর এই ভাষণেই তিনি তফসিল দিয়ে দেবেন।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৩ ধরনের নির্বাচনী উপকরণ কিনতে হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যালট বাক্স, ব্যালট বাক্সের ঢাকনা ও লক, অমোচনীয় কালি, বিভিন্ন ধরনের সিল, স্ট্যাম্প, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, কাগজ, প্যাড, রশি প্রভৃতি। এসব উপকরণের সিংহভাগ কেনা সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে সেগুলো মাঠ পর্যায়ে পাঠানোর প্রস্তুতিও চলছে।

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, সিংহভাগ কেনাকাটা শেষ। অনেক মালামাল পেয়েও গেছি। ব্যালট পেপার ভোটের কিছুদিন আগে আমরা বিজি প্রেস থেকে ছাপাব। এছাড়া মনোনয়নপত্রসহ অন্যান্য মুদ্রণের কাজও করা হবে। এজন্য কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচনী অ্যাপও তৈরির কাজ শেষের পথে। এবার অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ পাচ্ছেন প্রার্থীরা।

সম্প্রতি ৪২ হাজার ৩৫০টির মতো ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা করেছিলেন জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কমিটি। সেখানে ভোটকক্ষ রাখা হয়েছিল দুই লাখ ৬১ হাজার ৫০০টির মতো। এর মধ্যে শুনানি শেষে টিকেছে ৪২ হাজার ১০৩টি। এতে ভোটকক্ষ রয়েছে দুই লাখ ৬০ হাজারের মতো।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভোটার ছিল ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন। সে সময় সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪০ হাজার ৬৫৭টি। এর মধ্যে যাচাই বাছাই শেষে ৪০ হাজার ১৮৩টি কেন্দ্র চূড়ান্ত করা হয়। এতে ভোটকক্ষ ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২টি।

এদিকে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) প্রশিক্ষণের কার্যক্রমও পুরোদমে শুরু করেছে দিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বিভাগীয় কমিশনারদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা হবে। ভোটের ঠিক আগে আগে প্রায় ১০ লাখের মতো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইটিআই মহাপরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান।

সবশেষ ২০২২ সালের হালনাগাদ অনুযায়ী, দেশে ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৪ জন। আর নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৭ লাখ ৪ হাজার ৮৭৯ জন। এছাড়া হিজড়া ভোটার রয়েছেন ৮৩৭ জন। তরুণ ভোটারদের অন্তর্ভূক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি করায় এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তাই এবার ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের সংখ্যা বাড়ছে পাঁচ শতাংশের মতো।

অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, সংসদ নির্বাচনের জন্য সব মিলিয়ে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। এই ব্যয়ের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ রাখা হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায়, আর এক-তৃতীয়াংশ রাখা হয়েছে নির্বাচন পরিচালনার পেছনে। ৬৫ শতাংশ ব্যয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর পেছনে যাবে। আর পরিচালনা ব্যয় হবে ৩৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২৩
ইইউডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।