ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

দৃষ্টিনন্দন চা বাগানের টিলাময় সৌন্দর্য

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২২ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২৩
দৃষ্টিনন্দন চা বাগানের টিলাময় সৌন্দর্য গাড়ি থেকে দেখা যাচ্ছে চা বাগানের সৌন্দর্য। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: সবুজে ঘেরা চা বাগানের হাত ধরেই উন্মেচিত হচ্ছে পর্যটন শিল্পের প্রতি প্রাথমিক ভালো লাগা। দেশের চা বাগানপ্রেমীর সংখ্যা নেহাত কম নয়।

কোনো কোনো প্রকৃতিপ্রেমীদের ভেতরে ভেতরে তাদের ব্যক্তিগত পছন্দটি নতুন রূপে চা বাগানপ্রীতিতে আকৃষ্ট হচ্ছেন।   

গ্রীষ্মের তপ্ত রোদে পটভূমি আর বর্ষার অপূর্ব সৌন্দর্য পেরিয়ে দেশের ১৬৭টি চা বাগানে বৃষ্টি তার জলজ স্পর্শ রেখেছে চা গাছের সবুজ পাতায় পাতায়। তাতেই প্রাণ ফিরে পেয়েছে ওরা। বৃষ্টি ঘেরা ওই জাদুময় উর্বরতাটুকু শুধুই চা উপত্যকাময় মৃত্তিকার গহ্বর ছুঁয়ে। শারীরিক সবুজ রং আরও তীব্রতর হয়ে দূরে থেকে যেন দেখাচ্ছে কতটা সুন্দর চা বাগান! 

সে বিবেচনায় বলাই যায়, পর্যটন শিল্পে বিশাল একটি অংশজুড়ে আছে চা বাগান। এ বাগান মানেই সৌন্দর্যের প্রতীক। যেখানে নিমেশেই জুড়িয়ে যায় চোখ। অনতি বিলম্বে ভরে ওঠে মন। মাঝারি সাইজের গাছগুলো কাছ থেকে দূরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে বড় বিস্ময়ে দৃষ্টিনন্দন পটভূমি জন্ম দিয়ে রেখেছে।

তবে সেই চা বাগান প্রাকৃতিক অরণ্য বা বনের চিরায়ত সৌন্দর্যের মতো নয়। কেননা তা সৃষ্টি করা। প্রাকৃতিকভাবে জন্ম লাভ করা নয়। তারপরও চা বাগান বরাবরেই মতোই সীমাহীন সুন্দরের অক্সিজেন।  

পাশেই রাবার বাগানের দৃষ্টিনন্দন শোভা।  ছবি: বাংলানিউজ

দেশের বিভিন্ন প্রান্তের থেকে যারা চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে যান তারাই শ্রীমঙ্গল প্রবেশের আগেই দেখে নেন চা বাগানের দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ সৌন্দর্য। যা এক কোণ থেকে শুরু হয়ে চলে গেছে বহু দূরে।  

ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে ‘চায়ের রাজধানী’ শ্রীমঙ্গল প্রবেশ করলেই প্রথমেই চোখে পড়বে হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার রশিদপুর চা-বাগান। এর কিছু দূরত্বের পথ পাড়ি দিলেই মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁও চা-বাগানের প্রতিটি চা বৃক্ষ এই অতিথিকে নিঃশব্দে স্বাগত জানাবে।

বছরের পর বছর ধরে এখানকার বেশ কিছু চা বাগানের নজরকাড়া সৌন্দর্য গাড়িতে আসা পর্যটকদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে চলেছে। এই উল্লেখযোগ্য পথটি পাড়ি দিতে সময় অনেকেই নিজেদের মোবাইলফোনে সেই চা ঘেরা সৌন্দর্যচিত্র ধারণ করতে কখনোই ভুলে যান না।

কিলোমিটারের পর কিলোমিটার এখানকার বিস্তৃত চা বাগান দেখে মনে হবে যেন পাহাড়ের ঢালে সবুজ গালিচা বিছানো রয়েছে।  এ পথ দিয়ে আপনার গাড়ি আরও এগোতে থাকলে ‘চায়ের দেশে স্বাগতম’ বলে এক ‘চা কন্যা’ ভাস্কর্য আপনাকে অভিবাদন জানাবে। চা বাগানের পাশেই চা ভাস্কর্য তাৎপর্যময় প্রেক্ষাপটে যেন রাঙ্গা।

চা বাগানের পাশেই রয়েছে রাবার বাগান। চা কর্তৃপক্ষ বহু বছর ধরে চা বাগানের চা অনুপোযোগী জায়গায় এই রাবার চাষ করে আসছে। এ রাবার গাছগুলোও নিজেদের মতো করে চা বাগানের সৌন্দর্যের পাশাপাশি নিজেদের ভিন্ন এক সৌন্দর্যে প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে। চা গাছের সারিবদ্ধ সৌন্দর্য আর টিলাঘেঁষে রাবার গাছের ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য দুটোই দুই ধরনের সৌন্দর্যে ভরা।

চা বাগান নাকি রাবার বাগান? নাকি দুটোই? কার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলবেন আপনি, এই বিষয় ভাবনায় কিছুটা টেনশনে পড়ে যাবেন আপনি। বিস্মিত হয়ে আপনি চালককে তৎক্ষণাৎ গাড়ি থাকতে বলবেন। একাধিক ক্লিক আর ক্লিকে ভরে উঠবে আপনার ব্যক্তিগত ডিভাইস।  

আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুপরিজনের সাথে যেই মধুময় দৃশ্য স্মৃতি ভাগাভাগি করতে আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই ছবিগুলো আপলোড করতে ভুল হবে না আপনার। আপনি প্রকৃতিপ্রেমী। আপনি চান – এভাবেই দেশের সুন্দর সুন্দর স্থানে দৃশ্যগুলো ভ্রমণপিপাসু মানুষের মাঝে দ্রুত সুন্দরভাবে ছড়িয়ে পড়ুক।    

বাংলাদেশীয় চা সংসদের (বিসিএস) সিলেট ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান এবং সিনিয়র টি-প্ল্যান্টার জিএম শিবলি বাংলানিউজকে বলেন, অধিক সংখ্যক চা বাগান আর বাংলাদেশের চা গবেষণা ইনস্টিটিউট শ্রীমঙ্গলে হওয়ায় ‘চায়ের রাজধানী’ নামটা শ্রীমঙ্গলের সঙ্গে জুড়ে গেছে। এর টানেই দেশের নানা জায়গার পর্যটকরা শ্রীমঙ্গল আসছেন। তবে অনুমিত ছাড়া পর্যটকরা আমাদের চা বাগানের সেকশনে দলগতভাবে প্রবেশ করে অনেক সময়ই নানা ধরনের ক্ষতি করেছেন। অনুমতির বিষয়টি নেওয়া থাকলে কারোই সমস্যা হয় না।      

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২৩ 
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।