ঢাকা, শুক্রবার, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

ফিচার

সবাই যে পাখিকে নিয়ে ‘ভুল’ করে

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২৫
সবাই যে পাখিকে নিয়ে ‘ভুল’ করে প্রাকৃতিক বিলে শোভা বাড়িয়েছে পাতি সরালিদের দল। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: পাতি সরালি হাঁস (Lesser Whistling Duck) আমাদের প্রকৃতির আবাসিক জলচর পাখি। এরা আমাদের প্রকৃতিতেই জন্মগ্রহণ করে প্রকৃতির সুরক্ষায় সব পাখির মতো এরাও নীরবে অবদান রেখে চলেছে।

বাংলার ছোট-বড় জলাভূমিতে ডানা ছাপিয়ে ঘুরে বেড়ানো এই পাখিটিকে মানুষ এখনো চিনে উঠতে পারেনি ঠিক মতো। তাই পরিযায়ী পাখি হিসেবে ‘পাতি সরালি হাঁস বিভিন্ন জায়গায় ভুল উপস্থাপন করা হয়। এতে সাধারণ পাঠক-পাঠিকরা বিভ্রান্তের মাঝে পড়েন। সরালি হাঁস কখনোই পরিযায়ী পাখি নয়, এরা দেশের পাখি।

বিলের জলে ওরা যখন একত্রিত হয়ে বিশ্রাম গ্রহণ করে অথবা খাদ্য অনুসন্ধানে সময় ব্যয় করে, তখন এই সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা সত্যিই বর্ণনাতীত! স্থির অথবা চঞ্চলতা দুটো স্বভাবই তখন তাদের দলে দলে।

‘পরিযায়ী’ শব্দটির মানে পরিযায়ন করা। অর্থাৎ যারা এক দেশ থেকে অপর দেশে পরিযায়ন বা যাতায়াত করে। যেহেতু পাতি সরালি হাঁস আমাদের দেশের আবাসিক পাখি। তাই তার জন্মগত বৈশিষ্ট্য অনুসারে অপর কোনো দেশে ভ্রমণ করে না। তাই তাদের কখনোই পরিযায়ী বলা সমীচীন নয়।

পরিযায়ী পাখি হিসেবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তুলে ধরা হয় এই সরালি হাঁস পাখিটিকে। ফলে শব্দের সফল প্রয়োগে ভুল কোনো পাখির নাম বা ভুল পাখি অবয়ব পরিচিতি লাভ করছে।

পাখি ও বন্যপ্রাণী গবেষক সীমান্ত দীপু বাংলানিউজকে বলেন, পাতি সরালি হাঁস কখনোই পরিযায়ী পাখি নয়। এরা আমাদের দেশেরই পাখি। মানুষ না জেনে এই পাখির ঝাঁকের ছবি গণমাধ্যমে প্রচার করে পরিযায়ী পাখি হিসেবে উল্লেখ করে। ফলে সাধারণ পাঠকরা ভুল নামটি জানছে। এক্ষেত্রে পাখির ছবির সাথে পাখির সঠিক নামটি জানা খুবই জরুরি। দায়িত্বশীল গণমাধ্যমে যখন ‘পরিযায়ী পাতি সরালি’ এ জাতীয় ফিচার/প্রতিবেদন ছাপা হয় বিষয়টি তখন খুবই দুর্ভাগ্যজনক।

তিনি বলেন, পাতি সরালিরা শীতকালে একটি কলোনিতে বা একটি দলে এসে থাকে। ফলে এই পাখিদের একত্রিত ঝাঁককে বেশ বড় মনে হয়। গ্রীষ্মকাল বা প্রজনন মৌসুমে এরা দল থেকে আলাদা হয়ে জোড়ায় জোড়ায় বিভিন্ন হাওর-বিলে ছড়িয়ে পড়ে। তখন আর তাদের দলগত ঝাঁক দেখা যায় না। শীতকালে হাওর-বিল-ঝিল ও নদীতে অস্থায়ীভাবে বসবাস করে।

উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ভুলটা যে শুধু সরালি হাঁসের ক্ষেত্রেই হয় তা নয়, বেগুনি কালেমের (Purple Swamphen) ঝাঁককেও পরিযায়ী পাখি হিসেবে উল্লেখ হয়। যা নিতান্ত বেদনাদায়ক। শতভাগ এই ভুলগুলো এখন মনে হয় সংশোধন করার সুযোগ এসেছে। বাংলার সৌন্দর্যবর্ধন এই বিশেষ বিশেষ পাখিগুলোকে আমরা যদি না চিনি তাহলে তো বাংলার চিরন্তন রূপমাধুর্যকে ভালো করে বুঝতে পারা হলো না।

পাখিটির শারীরিক বর্ণনা ও স্বভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, এ পাখিগুলোর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫১ সেন্টিমিটার। দেহের মাথা, গলা, বুকে রয়েছে বাদামি রঙের সৌন্দর্য। পিঠ কালচে বাদামি এবং মাথায় রয়েছে কালচে চাঁদি। দলের পুরো পাখিরা কিন্তু একসাথে ঘুমায় না। কিছু পাখি জেগে থেকে চিল-বাজ প্রভৃতি শত্রুকে পাহারা দেয়। পরবর্তীতে আগে যারা জেগেছিল তার পরে ঘুমায়। এভাবে একদল জেগে একদল ঘুমিয়ে নিজেদের পুরো দলের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে।  

বাংলাদেশ সময়: ১২০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২৫
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।