ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

সরেজমিন শেরপুর

ভাঙন আতঙ্কেও ব্যস্ত বাঁশশিল্প কন্যারা

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৫
ভাঙন আতঙ্কেও ব্যস্ত বাঁশশিল্প কন্যারা ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শেরপুর (বগুড়া) থেকে ফিরে: বিনোদপুর ও তালপট্টি গ্রাম। চারদিকে মেঠোপথে ঘেরা।

গ্রাম দু’টোর তিন পাশ দিয়ে প্রবাহিত বাঙালি ও করতোয়া নদী। এই গ্রামগুলো রক্ষাকল্পে সাহেববাড়ি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়।

সেই গ্রামগুলোর ভেতরে পা ফেলতেই ভেসে আসে ঠুকঠাক আর বাঁশ-বেতির ঘষ ঘষ শব্দ। কাছে গেলেই চোখ আটকে যায় কর্মব্যস্ত নারীদের ব্যস্ততার নানা দৃশ্যে।

কেউ বাঁশ কাটছেন। কেউ তা থেকে বেতি তৈরি করছেন। আর এক সময় বাঁশের এসব বেতিই নারীর হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় হয়ে উঠছে মানুষের নিত্যব্যবহার্য আকর্ষণীয় একেকটি পণ্য। কারণ, বাঁশই তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের বিনোদপুর ও তালপট্টি গ্রামটি ‘বাঁশশিল্পখ্যাত’ গ্রাম বলেই সর্বাধিক পরিচিত। সঙ্গে পাশের কাশিয়াবালা, চকসাদী, মাঝিপাড়া, জোড়গাছা, কল্যাণী, সীমাবাড়ী, নাকুয়া গ্রামেও কমবেশি এ শিল্পের কাজ হয়। এসব গ্রামের প্রায় ৫ হাজার মানুষ এ পেশার সঙ্গে যুক্ত।

তবে বাঙালি নদীর ভাঙনে এ পেশার মানুষেরা চরম আতঙ্কে আছেন। ইতোমধ্যেই এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকের বাস্তুভিটা বাঙালির গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এরপরও তো বেঁচে থাকতে হবে। কারণ, কাজ না করলে তো আর খাবার জুটবে না। তাই ভাঙন আতঙ্ক মাথায় নিয়ে জীবিকা নির্বাহে ব্যস্ত বাঁশশিল্প কন্যারা।  
সোমবার (০৭ সেপ্টেম্বর) উপজেলার বিনোদপুর, তালপট্টিসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে কথা হলে সুখ-দুঃখের এসব চিত্র উঠে আসে।   

ছামেনা বেগম, রাফিয়া বেগম, নার্গিস, আর্জিনা খাতুন, হেলেনা, বেলিছা, সাবিনা, সাথী আক্তারসহ একাধিক নারী বাংলানিউজকে জানান, বিনোদপুর ও তালপট্টি গ্রামে অন্তত সাতশ ঘর মানুষ বসবাস করেন। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এসব ঘরের সিংহভাগ ভাগ নারী এ পেশার সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করেছেন। কালের আবর্তে এটিকেই তারা জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

এসব নারীরা জানান, তারা চাটাই (স্থানীয় ভাষায় তালাই), ডোল, মাছ ধরার বিভিন্ন সামগ্রী, হোচা, ঝুড়ি, কুলা তৈরি করে থাকেন। বুননের কাজ তারাই করেন। আর বাড়ির ছেলেরা বাঁশ কিনে আনা, তা কাটা, বেতি তৈরি করাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ করেন। তবে বছরের বেশির ভাগ সময়ই এখানে বিভিন্ন মাপের নানা ডিজাইনের চাঁটাই তৈরি করা হয়ে থাকে।

মোজাম্মেল হক, জেল হক, শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, এ শিল্পের প্রধান উপকরণ বাঁশ। শেরপুর, মির্জাপুর, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, তাড়াশ, নন্দীগ্রাম, চান্দাইকোনাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাঁশ কেনা হয়। একটি ভালো মানের বাঁশ কিনতে ৭০-১৫০ টাকা লাগে। বর্তমানে সাড়ে ৪-৫ ফুটের একটি চাঁটাই ৬০-৬৫ টাকা, ৫-৭ফুটের চাটাই ১০৫-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।   

বাঁশের তৈরি এসব সামগ্রী রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, কাশিনাথপুর, নওগাঁ, টাউন নওগাঁ, লালপুরসহ আশপাশের জেলার বেপারীরা কিনে
থাকেন।

তারা জানান, দূর-দূরান্তের বেপারীদের নিযুক্ত ফড়িয়ারা গ্রামে এসে ৫০-১০০টি চাঁটাইয়ের জন্য অগ্রিম টাকা দিয়ে যায়। প্রচণ্ড অভাবের কারণে তারা সেই টাকা নিয়ে চাঁটাই তৈরি করেন। এতে করে তাদের কম দামেই সেসব চাঁটাই বিক্রি করতে হয়। কিন্তু কিছুই করার থাকে না।  

তবে এই মুহূর্তে এসব গ্রামের লোকজন মারাত্মক সমস্যায় রয়েছেন। নদীভাঙনের কারণে তাদের বসতবাড়ি নিয়ে বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে।
ফলে তারা তেমন একটা কাজ করতে পারছেন না। এতে করে তারা দু’দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে এ সব ভুক্তভোগীরা জানান।   

বাংলাদেশ সময়: ০৩২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৫
এমবিএইচ/এবি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।