ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

দাহোমির বীর নারী যোদ্ধাদের ইতিবৃত্ত

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৬
দাহোমির বীর নারী যোদ্ধাদের ইতিবৃত্ত

ঢাকা: ১৮৯০ সালে প্রথম ফ্র্যাঙ্কো-দাহোমিন যুদ্ধে নারী সৈনিকদের অবদান ছিলো চূড়ান্ত। ফরাসি সৈন্যরা যখন ঘুমিয়ে থাকতো তখন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ নারীরা তাদের শিরচ্ছেদ করতো।

ফরাসি স্ট্রিট আর্টিস্ট YZ Yseult ঊনবিংশ শতাব্দিতে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ দাহোমির হিংস্র নারী যোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে নিজস্ব প্রচারণা শুরু করেন। এসব নারী যোদ্ধারা সাধারণত আমাজন নামে উল্লেখিত।



দাহোমির নারী শক্তির চমকপ্রদ আখ্যান অনেকেই হয়তো জানেন না। YZ Yseult নিজেই এ ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করছেন। বিস্তারিত জানবো আমরাও-

সর্বশেষ টিকে থাকা দাহোমি আমাজন মারা গেছেন ১৯৭৯ সালে। নাউই নামে শতবর্ষী ওই নারী দেশটির দূরবর্তী গ্রামে বাস করতেন বলে জানা যায়। তাদের রেজিমেন্টে ২৫ হাজার আর্মির মধ্যে ছয় হাজারই ছিলো নারী সৈনিক। অর্থাৎ সমগ্র দাহোমি আর্মির এক-তৃতীয়াংশ ছিলো নারী।



ইউরোপিয়ান রেকর্ড অনুযায়ী কার্যকারীতা ও সাহসের ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীদের উচ্চতর হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
তাদের ইতিহাস সপ্তদশ শতকের। একটি তত্ত্ব অনুযায়ী তারা হাতি শিকার বাহিনীর অন্তভুক্ত ছিলো। তাদের স্বামীরা যখন অন্য আদিবাসীদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলো তখন তারা নিজেদের দক্ষতা দিয়ে দাহোমি রাজাকে আকৃষ্ট করে। অন্য একটি তত্ত্ব মতে, যেহেতু তারা নারী সেহেতু একমাত্র তারাই রাজার প্রাসাদে প্রবেশের অনুমতি পেতো। যার ফলে তারা রাজার দেহরক্ষীতে রূপান্তরিত হয়।



এ দুটোর যেটাই সত্য হোক, প্রশিক্ষণে কেবল শক্তিশালী-স্বাস্থ্যবান ও সাহসী নারীদের নিয়োগ দেওয়া হতো। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের যুদ্ধপাগল হত্যাকারী হিসেবে তৈরি করা হতো যারা দুই শতাব্দি ধরে সমগ্র আফ্রিকায় দাপট চালিয়েছে।

তাদের যুদ্ধসামগ্রী হিসেবে শিরস্ত্রাণ ও চাপাতি দেওয়া হতো। ঊনবিংশ শতাব্দির শুরুর দিকে তারা রাজার প্রতি দারুণ অনুগত ও ভীষণ যুদ্ধপ্রিয় হয়ে ওঠে। মাত্র আট বছর বয়স থেকেই বাহিনীতে মেয়েদের নিয়োগ দেওয়া হতো, হাতে তুলে দেওয়া হতো অস্ত্র।



একদিকে সমাজের এক শ্রেণীর নারীরা স্বেচ্ছায় সৈন্যবাহিনীতে আসতে লাগলো, অন্যদিকে বাকি নারীদের স্বামীরা নিজেরাই তাদের স্ত্রীদের বাহিনীতে ভর্তি করতেন এবং নিজেদের বেপরোয়া স্ত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি বলে অভিযোগ করতো।

প্রশিক্ষণের শুরু থেকেই তাদের শক্তিশালী, নির্মম ব্যথা সহ্য করার অধিকারী হতে শেখানো হতো। লাফ দেওয়া, কাঁটাযুক্ত গাছে চড়ার পাশাপাশি হাঙ্গার গেম নামক একটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। হাঙ্গার গেম হলো দশ দিনের জন্য তাদের জঙ্গলে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। সঙ্গে কেবল অস্ত্র ছাড়া খাবার বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের যোগান দেওয়া হতো না। এখানে তাদের প্রমাণ করতে হতো যে তারা পুরুষের তুলনায় দ্বিগুণ শক্তিশালী।



যুদ্ধে পরাজয় হলে যদি রাজা তাদের আশ্রয় না দেন তাই, মৃত্যুদণ্ডই ছিলো তাদের জন্য একমাত্র পথ। দাহোমি নারী যুদ্ধ করবে নয়তো মরবে, পরাজয় বলে কিছু নেই।

সেনাবাহিনীতে কর্মরত নারীদের বিয়ে ও সন্তান জন্মদানের অনুমতি ছিলো না। ধরে নেওয়া হতো রাজার সঙ্গে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক রয়েছে। রাজাও তাদের সঙ্গে বাহ্যিক সম্পর্ক ভেঙে ফেলার দৃঢ়তা প্রকাশ করতেন না। যে কারণে রাজা ছাড়া এসব নারীদের স্পর্শ করার দুঃসাহস কেউ করতো না।



রাজার সৈনিক হিসেবে তারা দক্ষতা, শৃঙ্খলা ও নির্মম হতে শিখতো। যদিও তারা হিংস্র ও নির্মম নারী বলে পরিচিত, তবুও আফ্রিকায় নারীদের বর্তমান সম্মানজনক অবস্থানের জন্য তাদের কৃতীত্ব অনেকখানি।

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।

বাংলাদেশ সময়: ০২২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৬
এসএমএন/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।