ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

প্রশিক্ষণ নিতে পর্তুগাল যাচ্ছে তিন কিশোরী ফুটবলার

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২২
প্রশিক্ষণ নিতে পর্তুগাল যাচ্ছে তিন কিশোরী ফুটবলার

ময়মনসিংহ: উন্নত প্রশিক্ষণ নিতে পর্তুগাল যাচ্ছে ময়মনসিংহের নান্দাইলের তিন কিশোরী ফুটবলার। এই খবরে উপজেলা জুড়ে আনন্দের সৃষ্টি হয়েছে।

তারা হলেন- স্বপ্না, তানিশা ও শিখা।

তিন জনের মধ্যে সিনহা জাহান শিখা উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের রাজাবাড়িয়া গ্রামের টমটম চালক মো. বিপ্লব মিয়ার মেয়ে। স্বপ্না আক্তার জেলি একই ইউনিয়নের ইলাশপুর গ্রামের কৃষক মো. ফয়েজ উদ্দিন এবং তানিয়া আক্তার তানিশা উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের দিনমজুর মো. দুলাল মিয়ার মেয়ে।  

জানা যায়, এই কিশোরী ফুটবলাররা সবাই দরিদ্র দিনমুজুর পরিবারের সন্তান। তবে ছোট বেলা থেকেই তাদের মধ‍্যে ফুটবল খেলার প্রতি আগ্রহ ছিল। আর এ কারণেই বিদ‍্যালয়ের ফুটবল খেলায় তারা ছিল এগিয়ে।  

এরপর ২০১৯ সালে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকার্প টুণামেন্ট খেলা শুরু হলে এই তিন কিশোরী নান্দাইল উপজেলার শেরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হয়ে গেলে তারা চ‍্যাম্পিয়ন হয়। বতর্মানে তারা নান্দাইল পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।  

সম্প্রতি বঙ্গমাতা নারী ফুটবল দলের সেরা ৪০ নারী খেলোয়াড়কে নিয়ে বিকেএসপিতে দুই মাসের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে ১৬ জন বাছাই করা হয় পর্তুগালে ফুটবল প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য। এই ১৬ জনের মধ্যে ১১ জন মূল দলের। বাকি ৫ জন অতিরিক্ত খেলোয়ার হিসেবে থাকবে। যেখানে মূল দলে রয়েছেন শিখা ও স্বপ্না। তবে অতিরিক্ত ৫ জনের একজন তানিশা।  

সিনহা জাহান শিখা তৃতীয় শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় তার মা মারা যান। এর পর নানার বাড়িতে থেকে তার শুরু হয় সংগ্রামী জীবন। মা মারা যাবার পর বাবা বিপ্লব মিয়া আরেকটি বিয়ে করে। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে শিখা তৃতীয়। ছোটকাল থেকে শিখা খেলাধুলায় বেশ আগ্রহী ছিল। তবে সে ফুটবল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করত। পরে তার আগ্রহ দেখে প্রশিক্ষক মগবুল হোসেনের মাধ্যমে সে উপজেলা, জেলা, বঙ্গমাতা গোল্ডকাপসহ বিভিন্ন পর্যায়ের খেলাধুলায় অংশ গ্রহণ করে।  

শিখা বাংলানিউজকে বলেন, মেয়ে হয়ে কেন ট্রাউজার পরে ফুটবল খেলি। এজন্য অনেক কটুকথা শুনতে হয়েছে শুরুতে। তবে আমার বাবা সব সময় আমাকে উৎসাহ দিতেন। সদর থেকে ১০ কিলোমিটারের দুরে গ্রামে থাকি। আসা যাওয়ার খরচ বাবা দিতেন। আজ বাবার সেই স্বপ্ন পুরণ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। তবে আগে যারা কটুকথা বলত। তারাই এখন আমাদের নিয়ে গল্প বলে। এখন আমার চাওয়া পর্তুগাল থেকে ফিরে দেশের হয়ে খেলে বিশ্ব মঞ্চে যেন বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে পারি।

অপরদিকে দিন মজুর দুলাল মিয়ার মেয়ে তানিয়া আক্তার তানিশা। তারা দুই ভাই বোন। নিজেদের থাকার ঘর ছাড়া আর কিছু নেই। সে মায়ের সাথে পৌর শহরে কেনাকাটা করতে এসে চন্ডিপাশা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে খেলোয়াড়দের প্র্যাকটিস দেখে তারও খেলার প্রতি আগ্রহ বাড়ে। সেখান থেকেই তার খেলার শুরু। তবে, কারোর কটুকথা তাকে দমাতে পারেনি। সে নিয়মিত প্র্যাক্টিস চালিয়ে যেতে থাকেন। বঙ্গমাতা গোল্ডকাপে খেলার সুযোগ পেয়ে কাজে তা কাজে লাগিয়েছেন তানিশা।

তানিয়া আক্তার তানিশা বাংলানিউজকে বলেন, আমি প্রথমে খেলা করতে গিয়ে অনেকের রোষানলে পড়েছি। তবে, ২০১৮ সালে বঙ্গমাতা গোল্ডকাপে ভাল খেলার কারণে পর্তুগালে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। প্রশিক্ষণ শেষে দেশের হয়ে জাতীয় দলে খেলতে চাই। এছাড়াও গরিব বাবার সংসারের হাল ধরতে চাই।  

স্বপ্না আক্তার জিলি কৃষক ফয়জুউদ্দিনের মেয়ে। অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে সংসারের খরচ যোগাতে না পারলেও মেয়ের ফুটবল খেলার খরচ নিয়মিত দিতেন। স্বপ্না আক্তার জিলি শেরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বড়দের খেলা দেখে তার ফুটবল প্রেম। তখন থেকেই সে স্কুলে নিয়মিত ফুটবল খেলতো। তার খেলার আগ্রহ দেখে স্কুলের সহকারী শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন উজ্জল তার খেলার সুযোগ করে দেন।

স্বপ্না আক্তার জিলি বাংলানিউজকে বলেন, আমি অনেক কষ্টে এই পর্যন্ত এসেছে। প্র্যাকটিস করতে আসবো তার টাকা পর্যন্ত যোগাতে কষ্ট হয়েছে। কিছু দিন আগে টাকার অভাবে প্র্যাকটিস করতে আসতে পারেনি। তবে, হাল ছাড়েনি। আমার ইচ্ছা ছিল, আমি পেরেছি। আমি প্রথমেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই আমাদের পর্তুগালে প্র্যাক্টিস করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য। এর প্রতিদান যেন আমরাও দেশবাসীকে দিতে পারি। সেজন্য দোয়া চাই।
 
সহকারী কোচ তসলিম আহমেদ বলেন, আমাদের মেয়েরা পর্তুগালে প্রশিক্ষণ করার সুযোগ পেয়েছে। এতে আমরা অনেক খুশি। আমরা চাই প্রশিক্ষণ শেষে জাতীয় দলের হয়ে খেলে দেশের ফুটবলকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরুক।

এ বিষয়ে নান্দাইল পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক বলেন, আমার বিদ্যালয়ের কৃতি তিন ফুটবল খেলোয়াড় প্রশিক্ষণে পর্তুগাল যাচ্ছে এটা গর্বের বিষয়। আমি তাদেরকে সব সময় বিভিন্ন ভাবে সার্পোট করেছি। তারা ভাল করুক সেই প্রত্যাশা করি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২২
আরইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।