বরিশাল: কম খরচের আশায় সরকারি হাসপাতালের গিয়েও বিপাকে পড়ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। সাপ্লাই না থাকার অযুহাতে বাইরের দোকান থেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ কেনা ও বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যয় মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
এ থেকে পরিত্রাণ পেতে সংশ্লিষ্ট সকলের সুদৃষ্টি কামনা করেও লাভ হচ্ছে না বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।
শুক্রবার (২৫ আগস্ট) আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, গণমাধ্যমে সমস্যার কথা তুলে ধরলেও তার সমাধান হয় না বরং তাদের বক্তব্য দিলে সরকারি হাসপাতালের লোকজন রোগীকে আড়চোখে দেখা শুরু করেন, তখন আরও ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
তিনি বলেন, নানান সংকটের অযুহাতে রোগীর চিকিৎসায় ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও সরকারি হাসপাতালগুলোই স্থানীয়দের আস্থার স্থল। বিশেষ করে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের পরামর্শ ও সেবিক-সেবিকাদের সেবাটা পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, করোনাকালে নিজে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি, তখন যে ওষুধ চিকিৎসকরা লিখে দিতেন তার মধ্যে কয়েকটি হাসপাতাল থেকে সাপ্লাই দেওয়া হতো। আর দামি ওষুধগুলো কিনতে হয়েছে, শেষদিকে এসে হাতের টাকা শেষ হয়ে গেলে মোবাইল বন্ধক দিয়ে ওষুধ এনেছি। তবে সুস্থ হয়ে যে বাড়ি ফিরেছি এটাই বড় কথা।
তিনি বলেন, এখন চাচাতো ভাইকে নিয়ে হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে এসেছি। একই অবস্থা, চিকিৎসক যে ওষুধ লিখে দিচ্ছেন তার মধ্যে কয়েকটা পাচ্ছি হাসপাতাল থেকে ফ্রি। বাকিটা কিনতে হচ্ছে বাইরের দোকান থেকে। এদিকে নরমাল স্যালাইন হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হলেও, দিনে যদি ৩-৪ টি স্যালাইন প্রয়োজনও হয়, সেখানে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় মিলছে মাত্র একটি। এতে আমাদের খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তারপরও সুস্থ ভাই হবেন এই আশায় এখানে রোগীকে নিয়ে থাকছি।
এদিকে বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থী তুষার পটুয়াখালীর বাউফলে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এখানে চিকিৎসা নেওয়ার পর শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটতে থাকলেও মাত্র কয়েক দিনে ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়ে গেছে তার পরিবারের।
ঝালকাঠির বাউকাঠি এলাকার বাসিন্দা অপর এক রোগীর স্বজন সেকান্দার বলেন, দুপুর ২টার পর হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে আর কোনো পরীক্ষার স্যাম্পল নিতে চায় না। আর রাতে তো কোনো পরীক্ষাই এখানে করানো যায় না। কিন্তু তখন রোগীর কোনো পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন হলে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হয়। এতে ২০০ টাকার পরীক্ষা ডাবল টাকা দিয়ে করাতে হয়।
যদিও প্রয়োজন ছাড়া কোনো ওষুধ রোগীদের দেওয়া হয় না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আর সাপ্লাই না থাকলে সে ওষুধ ছাড়া কিছুই বাইরে থেকে কিনে আনতে হয় না বলে দাবি করেছেন ডেঙ্গু ওয়ার্ডের দায়িত্বরত নার্সরা। তবে কিছু ওষুধের সাপ্লাইয়ে সংকট থাকলে সেগুলো সব রোগীদের মাঝে সমতাহারে কমিয়ে বিতরণ করা হয় বলেও জানান তারা।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, সমস্যা নিরসনে আমরা সব সময় কাজ করছি। তবে ওষুধ বিতরণসহ কোথাও অনিয়ম হলে লিখিত অভিযোগ দিলে আমাদের সেটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। আর আমাদের কোনো গ্যাপ থাকলে সেটিও পূরণের চেষ্টা করবো।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা চলতি মাসে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
২৫ আগস্ট পর্যন্ত এ বিভাগে ডেঙ্গুতে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২৩
এমএস/এসআইএস