কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে পশ্চিমাঞ্চলে কুড়মি (একটি সম্প্রদায়) সমাজ মাসব্যাপী আন্দোলন করছে। তারা কখনো রেল অবরোধ, কখনো আটকে রাখছে জাতীয় সড়ক।
শুক্রবার (২৬ মে) সেই আন্দোলন চরম মাত্রায় পৌঁছায়। তারা হামলা চালায় শাসক দলের কনভয়ে। ভাঙচুর করা হয় রাজ্যের আদিবাসী জনপ্রতিনিধি ও মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদার গাড়িও।
শনিবার (২৭ মে) রাজ্যের পশ্চিম মেদিনিপুর জেলার সেই শালবনীতে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি অভিযোগ করলেন, মণিপুরের মতোই বাংলায় জাতি দাঙ্গা লাগাতে চাইছে বিজেপি।
এদিন দলের কর্মসূচিতে মমতা বলেন, বাংলায় আমরা কখনো জাত নিয়ে রাজনীতি দেখিনি। বিজেপি সেটাই শুরু করতে চাইছে। কখনো পাহাড়ে অশান্তি তৈরি করেছে, সেটা সামলেছি। তারপর কোচবিহারের রাজবংশী-কামতাপুরী বিবাদ তৈরি করতে চেয়েছে, সেটাও সামলেছি। এখন ওরা কুড়মি ও আদিবাসীদের মধ্যে ঝগড়া লাগাতে চাইছে। ওরা চাইছে, দুইদলের মধ্যে দাঙ্গা হোক, আর ওরা ফায়দা নেবে। বিজেপি এর জন্য টাকা দিচ্ছে। কিন্তু বাংলায় এসব বরদাস্ত করা হবে না।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ওদের এতো বড় সাহস, আমার মন্ত্রীর গাড়ি ভাঙচুর করে। তিনি (বীরবাহা হাঁসদা) একজন আদিবাসী নারী, তাকে দিয়ে আমি অনেক কাজ করাই। তিনি সিনেমায় কাজ করেন, নাটকে কাজ করেন। আমি এখনো বিশ্বাস করি, এই কাজ আমার কুড়মি ভাই-বোনেরা করতে পারে না। কুড়মিদের নাম করে বিজেপি এসব করছে। তারা বীরবাহা হাঁসদার গাড়ি ভেঙেছে, অভিষেককেও অ্যাটাক করতে গিয়েছে। মনে রাখবেন, গাদ্দারী করে দাঙ্গা লাগিয়ে বাংলাকে কেউ শেষ করতে পারবেন না। তৃণমূল কংগ্রেসকেও শেষ করতে পারবেন না।
মমতার ভাষায়, আমি নিজে কখনো পদবি ব্যবহার করি না। বাবা-মায়ের দেওয়া পদবি, তা কখনো কখনো সরকারি কাজে লাগে। কিন্তু, সবার ওপরে আমরা মানুষ। আমার সারা দেহে যতগুলো অঙ্গ আছে, প্রত্যেকটা যেন এক একটা জাতি। তাদের মিলিয়েই আমি পূর্ণাঙ্গ মানুষ। আমার বাম হাত যদি কুড়মি হয়, ডান হাত আদিবাসী। আমার দুটো চোখ যদি তফশিলি হয়, তাহলে আমার নাকটা ওবিসি। আমার মুখ-ঠোঁট যদি মা-বোনের হয়, তাহলে আমার পা দুটো ছাত্র-তরুণের।
বিজেপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, তারা এখানে এমনিতে কিছু পারবে না। রোজ বদল করছে, কখনো চরিত্র বদল করছে, কখনো শিক্ষা বদল করছে, কখনো ইতিহাস বদল করছে, কখনো নোট বদল করছে। মনে রাখবেন, বদলাতে বদলাতে নিজেরাই দিল্লি থেকে বদলে যাবে। আর তো মাত্র ছয় মাস বাকি।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচন।
মমতা এরপরই বলেছেন, ওরা নিয়মিত হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভেদ তৈরি করছে। পশ্চিমবঙ্গের এনআরসি করতে বলছে। ওরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখতে চাইছে, কে হিন্দু আর কে মুসলমান। আসামে এনআরসি থেকে তো হিন্দুরাও বাদ যায়নি, মতুয়া সম্প্রদায়েরাও বাদ যায়নি। মনে রাখবেন, আগুন লাগালে পাশের ঘরেও লাগে। তাই আগুন লাগাতে নেই। যুদ্ধ লাগাতে যাবেন না, দাঙ্গা লাগাতে যাবেন না।
আজকে মনিপুরে কী করছে? নিজেরাই জাতিগতভাবে দাঙ্গা লাগিয়েছে। এখানেও তাই করতে চাইছে। কুড়মি আর আদিবাসীদের মধ্যে দাঙ্গা লাগিয়ে দিতে চাইছেন। জাতি দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে।
মমতা এরপরই কুড়মিদের উদ্দেশ্যে বলেন, ওরা রেললাইন অবরোধ করছে, জাতীয় সড়ক অবরোধ করছে, বাড়ি ভাঙছে, গাড়ি ভাঙছে। বাংলায় জাতি দাঙ্গা করার চেষ্টা করছেন যে মাথাগুলো, সেই মাথাগুলো মনে রাখবেন, যদি ভালোভাবে থাকতে হয়, আপনাদের মাথায় ছাতা আমি ধরবো। যদি ভাবেন, টাকা খেয়ে বিজেপির রাজনীতি করবেন। আমি সহ্য করব না। আমি সব সহ্য করতে পারি, রক্ত সহ্য করতে পারি না। দিল্লি আমাকে অনেক ধমক দেয়, অনেক চমক দেয়। কিন্তু কখনো কখনো বিদ্যুৎ যত চমকায় তত বর্ষায় না।
আমরা এখানে জাতি দাঙ্গা করতে দেবো না উল্লেখ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বাংলায় জাতি দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা হলে প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নেবে। তার কথায়, আমার হাতটা যদি মাইক ধরতে পারে, এই হাত দিয়ে ধান কাটতেও পারি। কেউ বজ্জাতি করলে...
সামনেই শুধু পঞ্চায়েত নির্বাচন, আবার বছর ঘুরলে ২০২৪ সালে ভারতের লোকসভার নির্বাচন। সেই নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে দলীয় কর্মীদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানান তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান।
মমতা বলেন, পঞ্চায়েত ছোট, বড় নির্বাচন তো বসে আছে। পঞ্চায়েত শক্তিশালী হলে তবেই তো বড়টাকে ধাক্কা দিতে পারবেন। তাই আপনারা নিজেদের মধ্যে দলবাজি বন্ধ করুন। তৃণমূল যদি ঝগড়া না করে, তবে আমাদের হঠানোর ক্ষমতা কারো নেই। তৃণমূলের নিজেদের মধ্যে যদি বোঝাপড়া থাকে, তবে তৃণমূল দিল্লিকেও নাড়িয়ে দেবে। মনে রাখবেন, বিজেপিকে উৎখাত করতে গেলে মগজ থেকে রাজনীতি করতে হবে।
এরপর মমতা তার পুরোনো মহিমায় ‘খেলা হবে’ স্লোগান দেন। শেষবার তার কণ্ঠে এই স্লোগান শোনা যায় ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে। নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশ্যে মমতা বলতে থাকলেন, ‘খেলা হবে’। তবে এবার আরও বেশি করে খেলা হবে। আগেরবার ফুটবল হয়েছে। এবার ফুটবল, ক্রিকেট, হকি খেলা হবে, তীরন্দাজও হবে। সব রকমের খেলা হবে আদিবাসী ড্যান্সও হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০২ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২৩
ভিএস/এনএস