কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ‘ভারতজোড়ো ন্যায়যাত্রা’য় দেখা গেল বামদের পতাকা। অর্থাৎ বাংলায় রাহুল গান্ধীর যাত্রায় শামিল হয়েছে সিপিআইএম।
এজন্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলায় ফের একবার বাম এবং কংগ্রেস জোট বাঁধতে চলেছে। যদিও এ নিয়ে দুই রাজনৈতিক দল মুখে কিছু বলছে না। তবে সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, এই যাত্রায় কংগ্রেসের সঙ্গে তারা শামিল হয়েছেন কেবল বিজেপির বিরুদ্ধে জনগণকে একাট্টা করতেই। তার অভিযোগ, তৃণমূলকে পরিচালনা করে আরএসএস। তাই আসামে যা ঘটছে, তাই হচ্ছে বাংলায়।
কংগ্রেস আর সিপিআইএমের এমন ‘এক’ হওয়ার প্রেক্ষাপটে মমতার অবস্থান স্পষ্ট। ভোট শেষে দিল্লি দখলের পথ দেখাবে বাংলা। গত বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বহরমপুরের পর বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) নদীয়া জেলার শান্তিপুর থেকেও এ বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন মমতা। নেত্রীর বার্তা, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে (সংসদ নির্বাচন) তারা বাংলায় ‘একলা চলো’ নীতিতেই হাঁটবেন।
শান্তিপুরের জনসভায় মমতা বলেছেন, মনে রাখবেন দিল্লি জয় আমরাই করব। বাংলাই পথ দেখাবে। বাংলায় আমরা একাই লড়াই করবো। আমরা জোট চেয়েছিলাম। কিন্তু কংগ্রেস করেনি। বিজেপিকে সাহায্য করার জন্য বাংলায় সিপিএম-কংগ্রেস জোট বেঁধেছে। আমি সিপিএম করি না, আমি বিজেপি করি না, আমি মা মাটি মানুষের দল করি। আপনারা যদি আমাদের সঙ্গে থাকেন, আমি কথা দিচ্ছি, বাংলা থেকে জিতে দিল্লি আমরাই দখল করবো। কোন পলিসিতে করব, কী করে করব, নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ভারতের আঞ্চলিক দলগুলোকে একসঙ্গে নিয়ে ঠিক করব। তাই দয়া করে (লোকসভা নির্বাচনে) সিপিএম-কংগ্রেসের জোটকে বাংলায় ভোট দেবেন না।
এদিকে সিপিএম-কংগ্রেসের জোট বিজেপির হাত শক্ত করছে বলে মমতার অভিযোগের জবাবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ভারতজোড়ো ন্যায়যাত্রায় যে বিষয়গুলোকে উত্থাপন করা হচ্ছে, তা হলো গোটা দেশে বিজেপি যে অন্যায়গুলো করছে, সেগুলো তুলে ধরা। আমরা একই কারণে বাংলায় ইনসাফযাত্রা করেছিলাম। কারণ আমরা ন্যায়ের পক্ষে। যারা অন্যায়কারী তারা বিপর্যস্ত হচ্ছেন। আর যারা ন্যায় প্রতিষ্ঠার পক্ষে তারা জড়ো হচ্ছেন একসঙ্গে। আরএসএস-বিজেপি দেশটাকে যে সর্বনাশের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি।
সেলিমের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন আর আরএসএস-বিজেপির বিরুদ্ধে বলেন না। এখন রাহুল গান্ধী, কংগ্রেস, সিপিএমের বিরুদ্ধে বলে বেড়াচ্ছেন। আসলে আসামে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মা যে পথ দেখিয়ে দিয়েছেন, সেই পথেই চলছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে যেমন রাহুলের যাত্রা বাধা পেয়েছে, এখানেও একইভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমরা এজন্যই এখানে এসেছি, সংহতি জানাতে এবং বোঝাতে যে হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মা এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানেই আসাম বা পশ্চিমবঙ্গের শেষ কথা নয়। আমরাও আছি, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষে। এটুকু রাহুল গান্ধী বুঝলেই হলো।
গত সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বাংলায় কংগ্রেসের ন্যায়যাত্রায় সরকারি জায়গায় রাহুল গান্ধীর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থায় অনুমতি দেয়নি মালদহ এবং মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন। জানা যায়, মালদহের একটি গেস্ট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের অনুমতি চাওয়া হয় কংগ্রেসের তরফ থেকে। কিন্তু সেই অনুমতি দেয়নি জেলা প্রশাসন। অন্যদিকে মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর স্টেডিয়ামে রাহুল গান্ধীকে রাত্রিযাপনেরও অনুমতি দেয়নি প্রশাসন।
এই অবস্থায় রাজ্যে ‘ভারতজোড়ো ন্যায়যাত্রা’য় শুরুর দিন অর্থাৎ শিলিগুড়ি থেকে বামরা কংগ্রেসের মিছিলে শামিল হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাহুলের সেই যাত্রা পার করলো পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলা। সেখানেও একইভাবে রাহুলের সঙ্গে লাল পতাকার মাধ্যমে সমর্থন জানিয়েছে বামরা। এদিন রাহুলের সঙ্গে দেখা করেন সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, তার সঙ্গে ছিলেন দলের যুবনেতা শতরূপ ঘোষ ও রাজ্য কমিটির নেতা সুজন চক্রবর্তীর মত প্রথম সারির নেতারা।
অন্যদিকে, কংগ্রেসকে বাংলায় সেই অর্থে এখনো কোনো সমর্থন জানায়নি তৃণমূল। তবে জাতীয় কংগ্রেসের তরফে কেন্দ্রীয় নেতা জয়রাম রমেশ বারবার বার্তা দিচ্ছেন, তৃণমূলের জন্য এই যাত্রায় যুক্ত হওয়ার পথ খোলা রয়েছে। সেই কৌশল থেকেই বাংলায় কংগ্রেসের ন্যায়যাত্রায় বাম নেতৃত্বকে রাহুলের গাড়িতে তোলা হয়নি। গাড়িতে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী।
পশ্চিমবঙ্গে ২০১৬ সাল থেকে বাম এবং কংগ্রেস একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। তারা জোটবেঁধ গত লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে লড়াইও করেছে রাজ্যে। তবে ২০১১ সালের পর থেকে তৃণমূল কংগ্রেস এবং জাতীয় কংগ্রেসকে নতুন করে বাংলার রাজনীতিতে দেখা যায়নি। ফলে এবারের নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে কারা অংশীদার হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২৪
ভিএস/এইচএ/