কলকাতা: উৎসব-পার্বন শেষ। বাঙালি এখন ঢাকামুখী।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) এই চিত্রই ফুটে উঠেছে কলকাতায় নিউমার্কেট সংলগ্ন মারকুইস স্ট্রিট এলাকায়।
কে বলবে দিনটি বৈশাখ মাসের ২ তারিখ। ভিড়ে ঠাসা বাঙালির জমজমাট কলকাতা দেখলে মনে হবে, রমজানের একেবারে শেষ সময়। ঈদ এলো বলে। তাই বাঙালি ব্যস্ত কেনাকাটায়। শুধু শহরের নিউমার্কেটে বাঙালির উৎসাহের এ চিত্র নয়, ভিড় এতটাই যে, রুম নেই হোটেলগুলোয়। কলকাতায় সদ্য পা দেওয়া বাঙালিরা হন্যে হয়ে রুম খুঁজে বেড়াচ্ছেন। অপরদিকে, একই চিত্র ওই অঞ্চলের প্রতিটা ট্রাভেল এজেন্সিগুলোয়। সকলে ব্যস্ত টিকিট কাটতে। কেউ কাশ্মীর তো কেউ নর্থ সিকিম। বাঙালির একাংশ যখন বৈশাখের চরম উষ্ণতায় বরফ স্পর্শ করতে চাইছেন, তখন বাকিদের গন্তব্য দিল্লি, রাজস্থান। দুই রাজ্য ভ্রমণের মাধ্যমে জিয়ারত এবং ভ্রমণ দুটোই সেরে নিতে চাইছেন।
কলকাতা এখন অঘোষিত তাপপ্রবাহ চলছে। আবহাওয়া দপ্তর বলছে, শহরের উষ্ণতা ৩৯ ডিগ্রি। তবে অনুভব হবে ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এই গরমে সবেমাত্র সিকিম থেকে ফিরেছেন শাহীন। তার অভিমত, এক দেশে এত রূপ একমাত্র ভারতেই সম্ভব।
গত রোববার পরিবারের সাথে প্রথমবার কলকাতায় পা রেখেছেন ত্রিশোর্ধ্ব প্লাবন। বর্ডার ক্রস করতে তার ১০ ঘণ্টা সময় লেগেছে। তিনি বলেন, এখানে খাবারের দাম খুবই রিজনেবল। বিশেষ করে গরুর মাংসের দাম খুবই সস্তা। এখানে একটা শিক ১৫ রুপি আর ৭০ রুপিতে লাল ভুনা, কালা ভুনা সবই মিলবে। শুধু গরুর মাংস নয়, সব ধরনের খাবারের দাম এবং মান, সস্তা এবং ভালো। ফলও টাটকা। ফুড লাভার হলে একবার অবশ্যই কলকাতায় আসা উচিত।
এক কন্যা ও এক পুত্রসহ সস্ত্রীক কলকাতায় এসেছেন মামুন। বর্ডারের অভিজ্ঞতা তার মোটেও ভালো নয়। দুই ইমিগ্রেশনে তার প্রচুর সময় ব্যয় হয়েছে। কলকাতায় নেমে দুই ঘণ্টা হয়ে গেলেও মনমতো হোটেল পাচ্ছেন না। কারণ সব হোটেলে কানায় কানায় পরিপূর্ণ। অপরদিকে, সুমন বলেন, আমরা ১৩ তারিখ এসেছি। কয়েক ঘণ্টা সময় লেগেছে শুধু হোটেল খুঁজতে। হোটেলই পাওয়া যাচ্ছিল না, চারিদিকে এত বাংলাদেশি। ঢাকাবাসী শাওনের অভিমত, ঈদের পরে ঈদের ছুটি কাটাতে কলকাতায় আসা। কলকাতা শহরজুড়ে এখন বাংলাদেশি। এত বাংলাদেশি একসাথে এসে যাওয়ায় এবারে সত্যি হোটেল পেতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। তাও মনমতো রুম পাইনি।
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ধরে ভারতজুড়ে চলবে ভোটপর্ব। সেদিকেও কম বেশি নজর রাখছে কলকাতায় অবস্থানরত বাংলাদেশিরা। ভারতে কেমন সরকার হোক তারা চায়? এমন প্রশ্নে, অনেকের অভিমত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একবার প্রধানমন্ত্রী দেখতে চাই। কেউ বলেছেন, দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সুসম্পর্ক থাক এটাই চাই। অনেকের অভিমত, কংগ্রেস বা বিজেপি যেই আসুক, আমাদের সঙ্গে সেই সরকার যেন আগামী পাঁচ বছর সু-সম্পর্ক রাখে। আবার অনেকের দাবি, বাংলাদেশে যেমন প্রধানমন্ত্রী কন্টিনিউ করছেন, তেমন ভারতের বর্তমান সরকারও কন্টিনিউ করুক। তবে সবাই যে ভারতের ভোট সম্বন্ধে ওয়াকিবহল বা খোঁজ খবর রাখেন এমনটাও নয়। বহু মানুষ সরাসরি বলে দিয়েছেন, ভারতের ভোট সম্বন্ধে তেমন কোনো কৌতূহল নেই, তাই খোঁজ রাখি না।
অপরদিকে ভারতের নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, পর্যটকরা ৫০ হাজার রুপির বেশি নগদ বহন করতে পারবে না। সন্দেহ হলে সংশ্লিষ্টকে টাকার উৎস এবং টাকা নিয়ে ঘোরার কারণ প্রমাণসহ জানাতে হবে। এ বিষয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আমরা বুঝতে পারছি, ভোট চলাকালীন আগামী মাস দুয়েক বাংলাদেশিদের অসুবিধা হবে। কিন্তু উপায় নেই। হোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুধু পর্যটক নয়, নাগরিকদের নিয়ম অনুযায়ী ১ লাখ রুপির বেশি নগদ কেউ বহন করতে পারবে না।
কলকাতার হাসপাতালগুলো বলছে চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়। তবে এসব ভাবার অবকাশ নেই ভ্রমণে আসা বাংলাদেশিদের। তারা শহরের হলুদ ট্যাক্সি, হাতে টানা রিকশা, দর্শনীয় স্থান আর শহরজুড়ে কেনাকাটায় মেতেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২৪
ভিএস/এমজেএফ