ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

কোনো দল নয়, বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বী দেশবাসী: ভোট কুশলী প্রশান্ত

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৫ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২৪
কোনো দল নয়, বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বী দেশবাসী: ভোট কুশলী প্রশান্ত

কলকাতা: ভারতের ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর বলেছেন, চলতি লোকসভা নির্বাচনে মোদি ম্যাজিক বলে কিছু নেই। মোদির সেই দাপুটে হাওয়া এখন স্তিমিত, রাম মন্দিরও বিশেষ কাজে আসবে না।

তবে একই সঙ্গে প্রশান্ত কিশোর মনে করেন, মোদির দল বিজেপির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এমন কোনো দল এই মুহূর্তে ভারতে নেই। ফলে এবারের নির্বাচনে মোদির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হলো দেশের জনগণ। তারাই বিজেপির ভাগ্য নির্ধারণ করছে।

ভারতের সাত ধাপের লোকসভা নির্বাচনের মধ্যে চার ধাপের ভোট শেষ হয়েছে। সোমবার (২০ মে) পঞ্চম ধাপের ভোট। আর এই আবহে অন্ধ্রপ্রদেশের এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনই বলেছেন ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর।

প্রশান্ত কিশোর ভারতবাসীর কাছে ‘পিকে’ নামে পরিচিত। এক সময় তার সান্নিধ্যেই ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে দিল্লি মসনদ দখল করেছিলেন মোদি। এমনকি ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে পিকে’র ভোট পরিচালনার কারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয়বার বাংলার ক্ষমতায় আসীন হন। এছাড়া দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, বিহারের নীতিশ কুমারসহ বহু নেতার ক্ষমতা ধরে রাখতে পিকে’র ভোট কৌশল কাজে এসেছিল। সম্প্রতি ‘জন সুরজ’ নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন তৈরি করেছেন তিনি।

পঞ্চম ধাপের ভোটের আগে সেই প্রশান্তর গলায় অন্য সুর। কিন্তু কেন এই সুর বদল? তার যুক্তি, মোদির বিরুদ্ধে কে? তেমন কাউকে বিরোধীরা ঠিক করতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি যদি বড় ব্যবধানে জয় পায়, তাহলে ধরে নিতে হবে যে, বিরোধীরা সর্বশক্তি দিয়ে ভোটযুদ্ধে নামতে পারেননি। অথবা বিরোধীদের ওপর মানুষ আস্থা রাখতে পারছে না। প্রশান্ত কিশোরের অভিমত, বিরোধীরা তৎপর হলে এবার সমানে সমানে টক্কর হতে পারত। কিন্তু বিরোধীরা এক হতে পারেনি। তাই বিজেপিকে যতটা না কোনো রাজনৈতিক দল সমস্যায় ফেলবে, তার থেকে বেশি অস্বস্তিতে ফেলতে পারে ভারতের ভোটাররা। সাধারণ মানুষই এখন বিজেপির বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে।

প্রশান্ত মনে করেন, ২০১৪ সাল থেকে মোদি ঝড় বা মোদি ম্যাজিক শব্দগুলো দারুণভাবে চলে আসছিল। ২০১৯ সালের ভোটেও তা অব্যাহত ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে সেই হাওয়া আর নেই। প্রশান্তের দাবি, ভারতের ৬০ শতাংশ মানুষের বর্তমানে দৈনিক রোজগার একশ রুপির বেশি নয়। ফলে দেশজুড়ে সরকারবিরোধী হাওয়া বইছে।

প্রশান্ত কিশোর বলেন, বিরোধী দল দুর্বল হতে পারে, কিন্তু সরকারবিরোধী মানুষ দুর্বল নয়। যে কারণে, ভারতে কোনো দল একা ৫০ শতাংশ ভোট পায় না। দেখা গেছে, ১০০ জন ভোট দিলে ৪০ জন মোদিকে সমর্থন করছেন। মোদির আদর্শকে তারা সমর্থন করছেন। মোদির কাজ, হিন্দুত্ব নীতি, রাম মন্দিরের মতো বিষয়গুলো তারা সমর্থন করছেন। অর্থাৎ মোদির প্রতি শুধু ৩৮-৪০ শতাংশ মানুষ খুশি। আর বাকি ৬০-৬২ শতাংশ অখুশি। আর সেটাই বিজেপির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।

প্রশান্তর অভিমত, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদিকে ঘিরে মানুষের একটা উৎসাহ, আগ্রহ ছিল। ২০১৯ এর নির্বাচনে মানুষ ভেবেছিল মোদিকে আরও পাঁচ বছর সময় দেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু দশ বছর পর মানুষ আর আগের মতো ভাবছে না। বরং এখন সাধারণ মানুষের বক্তব্য, বিপরীতে তো তেমন আর কেউ নেই, আর কী করা যায়, তাই ভোটটা যখন দিতেই হবে বিজেপিকেই দিই। অর্থাৎ সামনে যোগ্য বিকল্প পেলে মানুষ অন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারত। কিন্তু তা নেই।

রাম মন্দিরের বিষয়ে প্রশান্ত বলেছেন, রাম মন্দির বিজেপিকে কোনো অতিরিক্ত সুবিধা দেবে না। তার দাবি, রামের নামে যারা ভোট দিত বা দিয়ে আসছে এবারও রামের নামে তারাই বিজেপিকে ভোট দেবে। নতুন করে আর বিজেপির ঝুলিতে বাড়তি ভোট যাবে না।

রাজনৈতিক বিশেজ্ঞরা মনে করছেন, উন্নয়ন ভুলে সম্প্রদায়গুলোকে খুশি রাখাতেই মেতেছে রাজনৈতিক দলগুলো। অর্থাৎ ক্ষমতায় এলে তারা দেশবাসীর জন্য কী করবে? বেকারত্ব কীভাবে মিটবে, আর্থিক বৃদ্ধি বা জিডিপি বৃদ্ধি—এসব নিয়ে শাসক বা বিরোধী কারো কোনো বক্তব্য নেই। তার বদলে হিন্দু বিপদে আছে বা মুসলিম বিপদে পড়বে—এই তথ্যই সামনে আনছে রাজনৈতিক দলগুলো।

ভারতে সিংহভাগ হিন্দু ভোট যদি বিজেপির কাছে বড় বিষয় হয়, তাহলে মুসলিম ভোটও বড় ফ্যাক্টর। আর হিন্দু মানেই বিজেপি সমর্থক এমনটাও নয়। এই সমীকরণে রাজনৈতিক অভিজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোট যদি শক্তিশালী ভূমিকা রাখত, অবশ্যই বিজেপিকে পরাস্ত করার বড় সম্ভাবনা থাকত। কিন্তু, বিরোধীরা নিজেদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে জোট বাঁধতে পারল না, যার ফলে মোদির বিকল্প মুখ এই মুহূর্তে নেই।

পাশাপাশি তারা মনে করছেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে মোদি ম্যাজিক মোটেও কাজে আসবে না। বরং বিজেপি ভালো ফল করতে পারে অবিজেপি রাজ্যগুলোতে। কারণ পশ্চিমবঙ্গের মতো প্রতিটি রাজ্যে আদালতের নির্দেশনায় ইডি, সিবিআই-এর মতো তদন্তকারী সংস্থার বদৌলতে দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসছে। ফলে রাজ্যবাসীর বিদ্বেষ আঞ্চলিক দলগুলোর শক্তি খর্ব করবে, যার জেরে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোর তুলনায় অবিজেপি রাজ্যগুলোয় বিজেপি ভালো ফল করতে পারে। আর সেই সব ভোটই এবারে মোদির ভোটবাক্সে বাড়তি অক্সিজেন দিতে পারে!

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৪ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২৪
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।