রাজধানী খার্তুমসহ সুদানের অন্যত্র যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে, তা হলো দেশটির সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে শক্তির লড়াইয়ের প্রত্যক্ষ ফল।
বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) ও সেনাবাহিনীর মধ্যে এই সংঘাত চলছে।
শনিবার সকাল থেকে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদসহ কয়েকটি জায়গায় বিস্ফোরণ ও ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। এই সংঘাতে অর্ধশতাধিক লোকের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
এই সংঘাতের পেছনে
২০২১ সালের অক্টোবরে হওয়া এক ক্যু-এর পর থেকে সুদান পরিচালিত হয়ে আসছে জেনারেলদের একটি কাউন্সিলের মাধ্যমে। দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে রয়েছেন সামরিক দুই ব্যক্তি।
এর একজন হলেন জেনারেল ফাত্তাহ আল-বুরহান, তিনি সামরিক বাহিনীর প্রধান। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব তার হাতে। আরেকজন হলেন তার ডেপুটি আরএসএফের নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো। হেমেদতি নামেই তিনি পরিচিত।
দেশ কোন দিকে যাচ্ছে এবং বেসামরিক শাসন নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপ নিয়ে তারা দ্বিমত পোষণ করেছেন।
আরএসএফের এক লাখ সদস্যকে সেনাবাহিনীতে একীভূত করার প্রশ্নটি হলো বিবাদের কারণ। বেসামরিক সরকার এলে কে এই বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করবে তা নিয়েই দুই পক্ষের ভিন্নমত।
শনিবারের এই সংঘাত কেন শুরু হলো?
দেশজুড়ে আরএসএফ মোতায়েন নিয়ে উত্তেজনার মধ্যেই এই সংঘাত শুরু। সেনাবাহিনী এই পদক্ষেপকে একটি হুমকি হিসেবে মনে করে।
আলোচনার মাধ্যমে চলমান সমস্যার সমাধান হবে- এমনটি আশা ছিল। কিন্তু তা হয়নি।
এটি এখনো স্পষ্ট নয় যে, শনিবার প্রথম কোন পক্ষ গুলি চালায়। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
কূটনীতিকরা দুই পক্ষকেই অস্ত্র বিরতিতে যেতে আহ্বান জানিয়েছেন।
র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস কারা?
২০১৩ সালে আরএসএফ গঠিত হয়। দারফুর বিদ্রোহে নৃশংসভাবে লড়াই করা কুখ্যাত জানজাউইড মিলিশিয়া বাহিনীতে।
এরপর থেকে জেনারেল দাগালো শক্তিশালী একটি বাহিনী তৈরি করে, যেটি ইয়েমেন ও লিবিয়া সংঘাতে হস্তক্ষেপ করে এবং সুদানে বেশ কটি সোনার খনি নিয়ন্ত্রণ করে।
২০১৯ সালের জুন মাসে ১২০ জন বিক্ষোভকারীকে হত্যা করাসহ মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে বাহিনীটি অভিযুক্ত।
সেনাবাহিনীর বাইরে শক্তিশালী এই বাহিনীকে দেশের অস্থিরতার পেছনে দেখা হচ্ছে।
সর্বশেষ পরিস্থিতি
বিবিসি রোববার জানায়, শনিবার থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে সুদানে অর্ধশতাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটেছে।
খার্তুমের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো কার নিয়ন্ত্রণে- তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী খবর পাওয়া যাচ্ছে। আরএসএফ দাবি করছে যে তারা রাজধানীর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও দেশটির আরো কয়েকটি প্রদেশের কিছু জায়গার নিয়ন্ত্রণ দখল করে নিয়েছে।
কিন্তু সুদানের সরকারি বাহিনী এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান বলেছেন, তার বাহিনীই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
পশ্চিমা এবং আঞ্চলিক নেতারা দুপক্ষকে উত্তেজনা হ্রাস করা এবং দেশটিতে বেসামরিক শাসন ফিরিয়ে আনার জন্য আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন।
রাজনৈতিক দলগুলো আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে রক্তপাত বন্ধে সহায়তা করারও আহ্বান জানিয়েছে।
রয়টার্স জানাচ্ছে, পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন - খার্তুমের অবস্থা ভঙ্গুর।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৭ ঘণ্টা, ২০২৩
আরএইচ