সিডনির ব্যস্ত বিপণিবিতানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে ছয়জন নিহত হয়েছেন এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন। পালানোর সময় সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার দৃশ্য বর্ণনা করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
দুই সন্তান নিয়ে ক্যাফেতে ছিলেন এক প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি বলেন, এটি ছিল স্রেফ হত্যালীলা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যক্তি এবিসি নিউজকে বলেন, তিনি দেখতে পান এক ব্যক্তি লোকজনকে নির্বিচারে ছুরিকাঘাত করছেন।
বিকেল তিনটার কিছুক্ষণ পর বন্ডির ওয়েস্টফিল্ড নামে এক বিপণিবিতানে ভয়াবহ এ ঘটনা ঘটে যায়।
দৃশ্যত বিচলিত হয়ে পড়া এক নারী প্রত্যক্ষদর্শী ঘটনার বর্ণনায় বলেন, তিনি এক আহত নারীকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন।
পুলিশ বলে, ছুরিধারী দুর্বৃত্ত বিপণিবিতানটিতে স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে যায়। সেখানে গিয়ে তাণ্ডব চালায়।
শেষ পর্যন্ত কাছেই দায়িত্বে থাকা এক নারী পুলিশ কর্মকর্তা ওই ছুরিধারীকে থামিয়ে দেন। ছুরি উঁচিয়ে এলে তিনি গুলি করেন বলে জানায় পুলিশ।
জসন ডকসন নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, তিনি মানুষের চিৎকার শুনতে পান। লোকজন দৌড়াচ্ছিলেন। তিনি ওই কর্মকর্তাকে অনুসরণ করতে থাকেন।
তিনি বলেন, লোকটির হাতে বড় ছুরি ছিল। সে ছুরি নিয়ে হামলা করতে এলে ওই নারী কর্মকর্তা তাকে গুলি করেন। যদি তিনি গুলি না করতেন, তবে তাকেও (জসন ডকসন) তাণ্ডবের মধ্যে পড়তে হতো।
প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ ওই অফিসারকে সাহসী হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, কোনো সন্দেহ নেই, তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে অনেক জীবন বাঁচিয়েছেন।
যেখানে ছুরি হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেই ওয়েস্টফিল্ড মল সিডনির পূর্বদিকের প্রধান এক বিপণিবিতান। বিখ্যাত বন্ডি বিচের কাছেই এর অবস্থান।
ওয়েস্টফিল্ড দেশের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় শপিং সেন্টারগুলোর মধ্যে একটি। অন্য শনিবারের মতোই অনেক পরিবার এবং ছোট বাচ্চাসহ শত শত লোকে ঠাসা ছিল।
৩৩ বছর বয়সী জনি ওয়েস্টফিল্ডে এসেছিলেন নিউ সাউথ ওয়েলস সেন্ট্রাল কোস্ট থেকে। তিনি বলেন, কেনাকাটা করার সময় তিনি হইচই শুনতে পান। এক নারী ও তার শিশুকে আক্রমণ করতে দেখেন। ছুরির আঘাতে ওই নারী আহত হয়েছিলেন। এতে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কেউ বুঝতে পারছিলেন না যে কী করবেন।
জনি বলেন, ওই নারী কোনোমতে কাছের একটি দোকানের ভেতর ঢুকে পড়েন। এর পরপরই দোকানের কর্মচারীরা দরজা বন্ধ করে দেন। সেখানে থাকা কয়েকজন ক্রেতা ওই নারীর শরীর থেকে রক্তপাত বন্ধের চেষ্টা করেন। সন্তানের আঘাত গুরুতর না হলেও ওই নারীর অবস্থা গুরুতর ছিল।
কাপড়ের দোকানে কাজ করা রাশদান আকাশাহ নামে এক তরুণ বলেন, তিনি দেখতে পান চলন্ত সিঁড়িতে এক লোক একটি লাঠি দিয়ে ছুরিধারী ওই দুর্বৃত্তের মুখোমুখি হয়েছেন। হামলা শুরুর পর প্রত্যেকে দৌড়াতে শুরু করেন। আমি আমার ম্যানেজারকে ধরে দোকানের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এটি আমাদের দোকানের ঠিক সামনে ছিল।
ওলিন্ডার নেমার নামে ২২ বছর বয়সী এক তরুণী বিবিসিকে বলেন, সেখানকার দৃশ্য ছিল ভয়ংকর। আমি তাকে ছুরিকাঘাত করতে দেখিনি। তবে তাকে ছুরি হাতে দৌড়াতে দেখেছি। লোকজন শুধু দৌড়াচ্ছিল, চিৎকার করছিল। প্রথমে আমরা জানতাম না কী হয়েছে। তাই আমরাও সবার সঙ্গে দৌড়াতে থাকি।
হুমা হুসেইনি ও মোহাম্মদ নাভিদ বিপণিবিতানটিতে কাপড় পাল্টানোর কক্ষে লুকিয়ে থেকে ভয়াবহ ৪৫ মিনিট পার করেন। হুসেইনি বলেন, তিনি এখনো হতবাক। তিনি হামলাকারীর কয়েক মিটারের মধ্যেই চলে এসেছিলেন। হামলাকারীর হাতে ছিল বড় একটি ছুরি। দুই তরুণীকে তিনি মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। মেঝে ছিল রক্তাক্ত।
ভারনন মাইকেল নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে বলেন, যখন সবাই দৌড়াও, দৌড়াও বলছিলেন, তখন তিনি একটি দোকানে ছিলেন। তিনি বলেন, আমাদের ভাগ্য ভালো। যেখানে ঘটনাটি ঘটে, যেখানে প্রথম এক নারী ছুরিহামলার শিকার হন, সেখানে মাত্র দুই মিনিট আগেই ছিলাম।
পুলিশ জানায়, পাঁচ নারী ও এক পুরুষ হামলায় নিহত হয়েছেন। নয় মাসের এক শিশুর অস্ত্রোপচার করতে হবে। শিশুসহ মোট আটজন আহত হন বলে জানান, নিউ সাউথ ওয়েলেসের পুলিশ কমিশনার কারেন ওয়েব।
তিনি বলেন, কর্মকর্তারা মনে করছেন, তারা ৪০ বছর বয়সী ওই হামলাকারীকে শনাক্ত করতে পেরেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তার পরিচিতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৪
আরএইচ