ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

তিউনিসিয়ার নির্বাচন

এন্নাহদার বিপর্যয়ের কারণ ‘অনভিজ্ঞতা’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৪
এন্নাহদার বিপর্যয়ের কারণ ‘অনভিজ্ঞতা’

ঢাকা: রোববার হয়ে গেল তিউনিসিয়ার সাধারণ নির্বাচন। নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত কম আসন পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীন এন্নাহদা পার্টি।

তাদের হটিয়ে আসন লাভের দিক থেকে শীর্ষ অবস্থান লাভ করেছে সেক্যুলার নিদা তিউনেস পার্টি।

নির্বাচনের এই ফলাফল ইলামপন্থি এন্নাহদা পার্টির জন্য বিপর্যয় হিসেবেই অভিহিত হচ্ছে।

তিউনিসিয়ার দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্তদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তার থাকার পরও দলটির এই ফলাফলে তাই সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্নের।

অযোগ্যতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্থবিরতার অভিযোগ থাকলেও শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ না থাকায় দলটি এবারের নির্বাচনে আরও ভালো ফলাফল প্রত্যাশা করেছিলো।

কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে নির্বাচনে এন্নাহদার বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হলো রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে দলটির নেতৃত্বের অব্যবস্থাপনা। আর এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে এন্নাহদার মন্ত্রিসভার সদস্যদের অনভিজ্ঞতাকে।
 
ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানের মুখে ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে পতন ঘটে দেশটির স্বৈরশাসক বেন আলী। এরপর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে এন্নাহদা পার্টি।

তবে তিন বছরের শাসনামলে সমালোচকরা এন্নাহদার মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় অযোগ্যতা এবং অনভিজ্ঞতার অভিযোগ তোলেন।

এ ব্যাপারে এন্নাহদার শুরা কাউন্সিলের নেতা আহমেদ গালুল বলেন, ইতিহাস বলে যে বিপ্লবের পর ক্ষমতায় আসা প্রথম সরকারকে অনেক সময় কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে হয়। বেশিরভাগ বিপ্লবোত্তর সরকার কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয় কারণ বিপ্লবের পর মানুষের আকাঙ্ক্ষা বেশি থাকে।

তিনি বলেন, আগের নির্বাচনে বিজয় আমাদের কঠিন পরীক্ষায় ফেলে দেয় কারণ আমাদের অধিকাংশ নেতাই হয় জেলে অথবা বছরের পর বছর ধরে ছিলেন নির্বাসিত। তাই প্রথম মেয়াদে সুশাসন ছিলো অত্যন্ত কঠিন।

তবে নিদা তিউনেস পার্টির বিজয়ের মাধ্যমে বিপ্লবপূর্ব যুগের প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর ভূত ফের তিউনিসিয়ার রাষ্ট্র ক্ষমতায় জেকে বসবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

নিদা তিউনেস পার্টির সভাপতি বেজি সেইদ এসেবসি দেশটির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট হাবিব বুরগুইবার আমলে স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। এর পর তিনি সাবেক স্বৈরশাসক জয়নুল আবেদীন বেন অালীর আমলে পার্লামেন্টের স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন।

এসেবসির সমালোচকদের অভিযোগ তিনি বেন আলী আমলের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চান। তবে তার সমর্থকদের দাবি তিনি এন্নাহাদার উপযুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী।

তবে নির্বাচনে কোনো দল সুষ্পষ্ট নিরঙ্কুশ জয়লাভ করতে না পারায় তিউনিসিয়ায় একটি কোয়ালিশন সরকার অবশ্যাম্ভী। সেক্ষেত্রে কোয়ালিশন সরকারে বসতে এন্নাহদার আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।

এ ব্যাপারে এন্নাহদার শীর্ষ নেতা আহমেদ গালুল বলেন, যদি তারা জেতে তবে আমাদের একটি কোয়ালিশনের অধীনে যেতে হবে। সব রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে একত্রিত করাই হবে এ মুহূর্তে দেশের জন্য মঙ্গলজনক।

স্থানীয় পর্যায়ের বিচ্ছিন্ন কিছু অনিয়ম ছাড়া ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ এবং নিরপেক্ষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা।

তিউনিসিয়ায় রোববারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ৮৩টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হয় সেক্যুলার নিদা তিউনেস পার্টি।

২১৭ আসন বিশিষ্ট পার্লামেন্টে ইসলামপন্থি এন্নাহদা পার্টি পায় ৬৮টি আসন। এছাড়া ফ্রি প্যাট্রিটিয়ক ইউনিয়ন এবং পপুলার ফ্রন্ট পেয়েছে যথাক্রমে ১৭টি ও ১২টি আসন।

নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করে এন্নাহদা দলের নেতা রশিদ ঘানুচি জয়লাভের জন্য নিদা তিউনিস পার্টির নেতা বেজি সেইদ এসেবসিকে অভিনন্দন জানান।

পাশাপাশি নিদা তিউনিসের সঙ্গে কাজ করতে আপত্তি নেই উল্লেখ করে এন্নাহদাকে সঙ্গে নিয়ে একটি জাতীয় ঐক্যমতের সরকার গঠনের জন্য নিদা তিউনেস পার্টির প্রতি আহ্বান জানান এন্নাহদার অপর শীর্ষ নেতা লতফি জিতুন।

গণঅভ্যুত্থানে ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে স্বৈরশাসক বেন আলীর পতনের পর ওই বছরের ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে ইসলামপন্থি এন্নাহদা পার্টি। এরপর ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে প্রণীত হয় নতুন সংবিধান। এই সংবিধানের অধীনেই রোববার অনুষ্ঠিত হয় ‘অ্যাসেম্বলি অব দি রিপ্রেজেন্টিটিভ অব দি পিপল’ নামে অভিহিত দেশটির ২১৭ আসন বিশিষ্ট পার্লামেন্টের ভোট।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।