ঢাকা: চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শানঝি প্রদেশের ব্যবসায়ী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ‘কুমারী শিক্ষার্থী উপহার’ কেলেঙ্কারিতে দেশটিজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। প্রদেশটির ব্যবসায়ীদের একটি গ্রুপ তাদের ব্যবসায়ের পথ পরিষ্কার করতে কর্তাদের মন জয়ে ‘কুমারী শিক্ষার্থীদের উপহার’ হিসেবে সরবরাহ করছে।
পুরো চীন ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠা এ কেলেঙ্কারি নিয়ে বৃহস্পতিবার (৮ জানুয়ারি) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সাময়িকী।
সাময়িকীটির খবরে বলা হয়, নানা ধরনের ব্যবসায়ের কাজ-কারবারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সন্তুষ্ট রাখতে বহুদিন ধরেই কুমারী শিক্ষার্থী ‘উপঢৌকন’ হিসেবে দিয়ে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা। তাদের এ অপকর্মের সহযোগী হিসেবে কাজ করছিল নিষ্ঠুরতার শিকার কুমারী শিক্ষার্থীদেরই সিনিয়র একটি চক্র। সম্প্রতি ওই সিনিয়র শিক্ষার্থী চক্রের সাত সদস্যকে হাতে-নাতে আটক করে পুলিশ।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই কেলেঙ্কারিতে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি শিক্ষা, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নামও উঠে আসছে।
সাময়িকীটির খবরে আরও বলা হয়, অনেক কু-পরিকল্পিত প্রক্রিয়ায় কুমারী শিক্ষার্থীদের ধরে নিয়ে গিয়ে ‘উপহার’ হিসেবে কর্তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে বিশেষত দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা টার্গেটে বেশি থাকে। তাদের কৌশলে আটকে নির্যাতন করে কর্তাদের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনে রাজি করার জন্য একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বাধ্য করে ব্যবসায়ী চক্রটি।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সাত সিনিয়র শিক্ষার্থীকে আটকও করেছে পুলিশ। তবে, একজনের বয়স ১৬ বছরের কম হওয়ায় তাকে সরাসরি অপরাধী বিবেচনা করা হয়নি।
পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে প্রভাবশালী সাময়িকীটি জানায়, সম্প্রতি কুমারী শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করার প্রক্রিয়ায় নির্যাতনের বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় তা পুলিশের নজরে আসে। জানা যায়, আপোসে রাজি না হওয়ায় ব্ল্যাকমেইল করার জন্য বেশ ক’জন কুমারী শিক্ষার্থীর নগ্ন ছবি তুলতে চড় –থাপ্পড় দেন অভিযুক্ত সাত শিক্ষার্থী। থাপ্পড়ের আঘাতে দুই শিক্ষার্থীর কানের পর্দাও ফেটে যায়, যা পরে স্থানীয় টেলিভিশনের খবরে সম্প্রচারিত হয়।
নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ব্যবসায়ীদের অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় দশম শ্রেণীর পাঁচ শিক্ষার্থীকে ব্যাপক পিটুনি দেয় সিনিয়র শিক্ষার্থী চক্র। এতে রক্তারক্তি হলেই খবর পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, কুমারী শিক্ষার্থী সরবরাহে অনেকদিন ধরেই অর্থ ঢেলে আসলেও সম্প্রতি যে ছয়জন সিনিয়র শিক্ষার্থী আটক হয়েছেন, তাদের মধ্যে একজন এক লাখ ৯৩ হাজার ডলার (দেড় কোটি টাকারও বেশি) ও আরেকজন এক লাখ ২৮ হাজার ডলারও (প্রায় এক কোটি টাকা) নিয়েছেন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।
এতো অর্থ ঢেলেও ব্যবসায়ীরা সিনিয়র শিক্ষার্থী চক্রকে বলেছেন, সংশ্লিষ্টদের কর্মকর্তাদের মন জয়ে তাদের আরও বেশি কুমারী শিক্ষার্থী চাই।
তবে, এই অপকর্মে জড়িত শানঝির উকি কাউন্টির কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের নাম প্রকাশ করেননি পুলিশ কর্মকর্তারা। অবশ্য, মারাত্মক এ অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় এক কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে।
কেলেঙ্কারির খবরটি ছড়িয়ে পড়ায় সংশ্লিষ্ট স্কুলের কর্মকর্তাদের অপরাধের মাত্রা বিচারে বিভিন্ন রকমের শাস্তি দিয়ে চলেছে স্থানীয় সরকার ও কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিভাগ।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৫