ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পদত্যাগের ঘোষণা তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৭ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৬
ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পদত্যাগের ঘোষণা তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর বছর দেড়েক এক হয়ে কাজ করলেও বিভিন্ন ইস্যুতে ক’মাস ধরে মতবিরোধ চলছিলো দাবাতগলু ও এরদোগানের মধ্যে

ঢাকা: তুরস্কের রাজনীতির বাতাসে বেশ ক’দিন ধরে যে গুঞ্জন বইছিল, সেটিই সত্যি হলো। প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়্যব এরদোগানের সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী আহমদ দাবাতগলু।

বৃহস্পতিবার (৫ মে) রাজধানী আঙ্কারায় সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ ঘোষণা দেন। দাবাতগলু জানান, আগামী ২২ মে বিশেষ সম্মেলন (কংগ্রেস) করবে ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি)। এতে পার্টির প্রধান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না তিনি।

আর পার্টির প্রধান পদে না থাকার অর্থ, প্রধানমন্ত্রী পদেও থাকছেন না দাবাতগলু। একেপির গঠনতন্ত্র অনুসারে দল ক্ষমতায় থাকলে পার্টির প্রধানই (প্রেসিডেন্ট) প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করেন।

বৃহস্পতিবারই একেপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের (এমআইকে) সঙ্গে জরুরি বৈঠকের পর এ সংবাদ সম্মেলন করলেন দাবাতগলু। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মতৈক্যের অনুপস্থিতিতে আগামী ২২ মে অনুষ্ঠেয় বিশেষ সম্মেলনে পার্টির প্রধান পদে লড়ার ইচ্ছে নেই আমার।

তবে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ছাড়লেও সেন্ট্রাল আনাতোলিয়া প্রদেশের কনইয়ার সংসদীয় প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাবেন বলে জানান দাবাতগলু।

২০১৪ সালের আগস্টে সবশেষ সম্মেলন হয় একেপির। সেই সম্মেলনে তৎকালীন প্রধান এরদোগানের (প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত) স্থলাভিষিক্ত হন দাবাতগলু।

বছর দেড়েক একেপির দুই নেতা এক হয়ে কাজ করলেও বিভিন্ন ইস্যুতে গত ক’মাস ধরে মতবিরোধ চলছিলো দাবাতগলু ও এরদোগানের মধ্যে। এরমধ্যে দেশকে প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতিতে পরিচালনায় এরদোগানের তৎপরতায় দাবাতগলুর মতানৈক্য স্পষ্ট হয়ে পড়ছিল। এই প্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে পার্টির প্রাদেশিক কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন একেপি প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী দাবাতগলু।

এরমধ্যে আবার একটি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলে ফেলেন, ‘কীভাবে আপনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তা ভুলে যাবেন না। ’ দ্বন্দ্ব এমন স্পষ্ট হয়ে পড়লে বুধবার (৪ মে) প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে বৈঠকে বসেন এরদোগান ও দাবাতগলু। তবে একঘণ্টা ৪০ মিনিটব্যাপী ওই বৈঠক পুরোপুরিই নিষ্ফল হয়।

এরপর বৃহস্পতিবার পার্টির এমআইকের সঙ্গেই বৈঠক করেন দাবাতগলু। কিন্তু সে বৈঠকের ফলাফলও শূন্য বলে স্পষ্ট করে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম। এই প্রেক্ষাপটে জরুরি সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেন দাবাতগলু। আর সংবাদ সম্মেলন করেই নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিলেন তিনি।

এ বিষয়ে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা সেমিল ইর্তেম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, একেপির প্রধান পদে নতুন কেউ এলে প্রধানমন্ত্রীও নতুন কেউ হবেন। তবে সেজন্য নতুন নির্বাচনের প্রয়োজন হবে না।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, একজন প্রধানমন্ত্রী যখন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে কাজ করবেন, তখন দেশ ও দেশের অর্থনীতি আরও সংহত হবে এবং এগিয়ে যাবে।

সংবাদমাধ্যম বলছে, কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) বিদ্রোহী ও ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের বিরুদ্ধে তুরস্কের লড়াইয়ের মধ্যেই দেশটির রাজনীতিতে এমন দমকা হাওয়া বইছে।

সংবাদমাধ্যমের তথ্য মতে, দাবাতগলুর উত্তরসূরী হিসেবে নাম আসছে এরদোগানের মেয়ে জামাই জ্বালানিমন্ত্রী বারাত আলবায়রাক ও ঘনিষ্ঠ পরিবহনমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিমের। তবে, সবকিছুই সম্মেলনে স্পষ্ট হয়ে যাবে।

আধুনিক তুরস্কের জনক মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের পর এরদোগানকে দেশটির সেরা কৌশলী রাজনীতিক বলে মনে করা হয়। ১১ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে দেশ চালানোর পর ২০১৪ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করছেন এরদোগান। তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে পদটি আনুষ্ঠানিক থাকলেও এখন সে পদটিকেই করতে চাইছেন সর্বেসর্বা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৬/আপডেট ১৮১৬ ঘণ্টা/আপডেট ১৯১৫ ঘণ্টা
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।