ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্প এক অকেজো কামান, দাগালেই ফুস!

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৩ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৬
ট্রাম্প এক অকেজো কামান, দাগালেই ফুস!

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট পদে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন দৌড়ে ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী আর কেউ রইলো না। মঙ্গলবার ইন্ডিয়ানা প্রাইমারিতে বড় হারের পর টেড ক্রুজ তার সরে দাড়ানোর ঘোষণা দেন।

আর চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সরে দাঁড়ান অপর প্রতিদ্বন্দ্বী জন কাশিকও। ফলে ট্রাম্প এখন একাই প্রার্থী। কিন্তু তাতে দলের ভেতরে একটি পরিবর্তন শুরু হয়েছে। দেখা যাচ্ছে ট্রাম্প ক্রেজ এখন কমছে। গুটিকয় লোক ট্রাম্পকে ঘিরে থাকলেও পার্টির অনেকেই বসেছেন ভবিষ্যত নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণে।

কিন্তু মনোনয়ন যখন হাতের মুঠোয় তখন বিতর্কিত বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের হুমকি ধমকি চরমে উঠেছে। ধরেই নিয়েছেন তিনিই হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররর্তী প্রেসিডেন্ট। আর তা কেবল এক দফার জন্য নয়, পরবর্তী দুই দফা ক্ষমতা তার হাতেই থাকছে।

কেবল যে ডেমোক্র্যাটরাই তার প্রতিপক্ষ তা নয়, নিজের দলেরও অনেককে তিনি শত্রু মনে করছেন আর হুমকি ধমকি দিয়ে চলেছেন। এনবিসি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দলের সেইসব নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, তারা যেনো আগামি আটটি বছর দূরে দূরে থাকে। দুই দফা আমিই ক্ষমতায় থাকছি। আর কিছু কিছু মানুষ রয়েছে, যাদের আমি সত্যিই দেখতে চাই না।

এ থেকে ধরেই নেওয়া যায় আর যাই হোক এবারের নির্বাচনে রিপাকলিকানরা খুব একটা একাট্টা হতে পারছে না। বুধবার সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মিচ ম্যাককনেলের ধোয়াশায় ভরা বিবৃতি অনেকেরই নজর কেড়েছে। বলেছেন, ট্রাম্পের পক্ষে পার্টিকে এক ছাতার নিচে আনা কঠিনই হবে। আর অন্যদিকে সাবেক দুই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পিতা-পুত্র জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ ও জর্জ ডব্লিউ বুশ তো প্রকাশ্য ঘোষণাই দিয়ে দিয়েছেন ওভাল অফিসের দখল নিতে ট্রাম্প তাদের পক্ষ থেকে কোনও সহায়তাই পাচ্ছেন না।

এদিকে ফুসছেন হিলারি ক্লিনটন। ঘোষণা দিয়েছেন, ইন্ডিয়ানার প্রাইমারিতে নিজ দলে তার নিজের হার আর অন্যদলে ডনাল্ড ট্রাম্পের বড় জয়ের পর ট্রাম্প যেসব উষ্কানিমূলক কথাবার্তা বলেছেন সেগুলোর মোক্ষম জবাব তার হাতে রয়েছে। তিনি বলেন ব্যক্তিগত আক্রমন কিভাবে মোকাবেলা করতে হয়, তা তার জানা রয়েছে।

সিএনএনকে দেওয়া মন্তব্যে তিনি বলেন, ট্রাম্পের কথা বার্তা আমার কাছে গোয়ারের ঘোঁৎ ঘোঁৎ ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না।

জিওপি’র ভার হাতে ট্রাম্পের হাতে যাওয়া হবে আধুনিক রাজনৈতিক ইতিহাসের এক হতবাক করে দেওয়ার মতো ঘটনা। প্রথম দফার প্রার্থীদের সনাতনি তহবিল গঠনের প্রক্রিয়াটিও এখানে অপদস্ত হয়েছে, বরং তিনি অনেকাংশেই নিজের ট্যাকের জোর দেখিয়েছেন গাঁটের পয়সা খরচ করে। এছাড়াও জনপ্রিয়তা অর্জনে টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের দিকে না ঝুঁকে বিতর্কিত কথা-বার্তা বলেই দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। নারী ও সংখ্যালঘুদের নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করে রাজনৈতিক শিষ্টাচারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়েছেন। এসব দিয়ে গুটিকয় রিপাবলিকানকে ভুলিয়ে ফেলা যায় কিন্তু সাধারণ নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করা যায় না, বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সাবেক উপদেষ্টা পিটার ওয়েনারতো বলেই ফেলেছেন, রিপাবলিকান ট্রাম্পের দল হতে পারে তবে তার সময়কাল এখন থেকে নভেম্বর পর্যন্তই হবে। তার পরে নয়।

নভেম্বরের নির্বাচনে হারের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প সব হারাবেন বলেই ধারনা করা হচ্ছে।   ওয়েনার সেই সব রিপাবলিকানদের একজন যিনি বলেই দিয়েছেন, কষ্মিণকালেও তিনি ট্রাম্পকে ভোট দেবেন না। তাতে যদি ক্লিনটন প্রেসিডেন্সি দেখতে হয়, তাও না।

টেড ক্রুজের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন বব ভ্যান্ডার প্ল্যাটস। রিপাবলিকানে বেশ প্রভাবশালী এই নেতা ট্রাম্পের ওপর থেকে তার সকল সমর্থন প্রত্যাহার করেছেন। তিনি বলেছেন, আগে দেখতে হবে ভাইস প্রেসিডেন্টের জন্য তিনি কাকে পছন্দ করেন। আর বিচারক নিয়োগের বিষয়টিও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। রিয়েল স্টেট মুগলকে তার রক্ষণশীলতা পরিচয় সুনিশ্চিত করতে হবে। আসলে ট্রাম্পের ব্যাপারে ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ নীতিই সবচেয়ে ভালো, বলেন ভ্যান্ডার প্ল্যাটস।

প্ল্যাটসসহ আরও অনেকে এখনও আসলে একটি বিকল্প কিছুরই প্রত্যাশায় রয়েছেন। টেক্সাসের সাবেক গভর্নর রিক পেরি, নেব্রাস্কার সেনেটর বেন স্যাসে আর সাবেক ওকলাহোমা সেনেটর টম কবরানকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দেখছেন তিনি। এদের যে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তৃতীয় পক্ষ থেকে সামনে চলে আসতে পারেন।

হাউস স্পিকার পল রায়ান অবশ্য এখন কিছুটা নিরব। এতদিন তিনি ট্রাম্পের সমালোচনায় মুখর ছিলেন কিন্তু ইন্ডিয়ানায় তার জয়ের পর রায়ান চুপ হয়ে যান। ট্রাম্পের সঙ্গে এখন তার কোনও যোগাযোগই নেই।

জর্জ ডব্লিউ বুশের একজন মুখপাত্র সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন এবারের প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যাম্পেইনে বুশ যোগ দিচ্ছেন না। আর বুশের বাবা বুশের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ৯১ বছরের বুশ রাজনীতি থেকেই অবসর নিয়েছেন।

এরপরেও ট্রাম্পের প্রতি কিছু সমর্থন থেকেই যাচ্ছে। একটি জরিপে বলা হয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে যারা গভর্নর আর সেনেটর হিসেবে রয়েছেন তারা অনেকেই ট্রাম্পকে সমর্থন করে যাচ্ছেন।

ওকলাহোমার গভর্নর ম্যারি ফ্যালিন তাদেরই একজন। তিনি বলেছেন, আমাদের একমাত্র দায়িত্বই হচ্ছে ট্রাম্পকে জিতিয়ে আনা, হিলারি ক্লিনটনকে নয়।

হিলারিকে অবশ্য প্রার্থীতার দৌড়ে আরও কিছুটা খাটতে হচ্ছে। তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় বার্নি স্যান্ডার্সকে পুরোপুরি হারাতে তাকে আরও ৭ শতাংশ সমর্থন ঝোলায় পুরতে হবে। সেতো দলের মধ্যে লড়াই। কিন্তু এরই মধ্যে ট্রাম্প মোকাবেলায় সময় দিতে শুরু করেছেন হিলারি ক্লিনটন।

তিনি বলেছেন, ‘ট্রাম্প এক নড়বড়ে কামান, ওর গর্জন মুখে মুখে। কামান দাগালে তা মিসফায়ারই করবে। ’

তবে সে যাই হোক ক্লিনটন ও ট্রাম্প দুজনই কিন্তু এবার এমন এক ভোটের লড়াইয়ে নামতে যাচ্ছেন যা কারো জন্যই সুখকর হবে না। ইতিহাসে নিজ দলের সমর্থনে এতটা পিছিয়ে থাকা প্রার্থী আর কেউ দেখেনি। দুজনের মধ্যে ক্লিনটনের অবস্থা অপেক্ষাকৃত ভালো। নিজ দলে বিশেষ করে নারী আর সংখ্যালঘুদের মাঝে তার জনপ্রিয়তাও তুমুল। আর ভোটের জয় পরাজয়ে এদের একটা ভূমিকা থাকেই। বিশেষ করে ফ্লোরিডা, কোলারাডো, নেভাডায় লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি হয়, আর সেখানেই হিলারির সুবিধাজনক অবস্থান রয়েছে।

কিছু কিছু রিপাবলিকানের ভয়, ট্রাম্পের এই অতি আক্রোশি মনোভাব রিপাবলিকানকে এবারও টানা তৃতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউজের বাইরে রাখবে। আর কেবল তাই-ই নয় সেনেটেও তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ফেলতে পারে। অনেক সেনেটর প্রার্থীই ট্রাম্পকে মধ্যমনি করে লড়াইয়ে সামিল হতে ভয় পাচ্ছেন। নিউ হ্যাম্পশায়ারের সেনেটর কেলি আয়োটের কথাই ধরা যাক। তিনি জানিয়েছেন, ট্রাম্পের প্রার্থীতাকে তিনি এনডোর্স করছেন না।

ট্রাম্প অবশ্য এখন তার নিজের টাকার গরম থেকে সরে এসে তহবিল গঠনের বিষয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন। আর এক বিলিয়ন ডলারের একটা টার্গেটও নির্ধারণ করেছেন। আর এরই মধ্যে রানিং মেট খুঁজতেও লেগে গেছেন। এরই মধ্যে কাশিকের কথা উচ্চারণও করেছেন এই বলে যে, ওহাইও’র এই গভর্নর তার সঙ্গে থাকলে ভালোই হবে।  

বাংলাদেশ সময় ০০১১ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৬
এমএমকে  

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।