শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে ওয়াশিংটনের কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেওয়ার পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প এ কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতির কাছে ৩৫ শব্দের শপথবাক্য পাঠ করে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে হাত নেড়ে অভিবাদন গ্রহণ করেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট।
বলেন, আমরা আমেরিকার জনগণরা দেশকে পুনর্গঠনে এক মহান জাতীয় প্রচেষ্টায় যোগ দিয়েছি। এই প্রচেষ্টায় আমরা আমেরিকা ও বিশ্বের দীর্ঘস্থায়ী পথচলা নির্ধারণ করবো। আমরা হয়তো বাধার সম্মুখীন হবো, বন্ধুর পথে পড়তে হবে, কিন্তু আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাবোই।
এসময় শান্তিপূর্ণভাবে দায়িত্ব হস্তান্তরে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ট্রাম্প। বলেন, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তারা দায়িত্ব হস্তান্তরে নিজেদের মহত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
ট্রাম্প জনগণের উদ্দেশে বলেন, আজকের এ অনুষ্ঠানের বিশেষ মাহাত্ম্য আছে। আমরা আজ ক্ষমতা কেবল এক প্রশাসন থেকে আরেক প্রশাসনে বদল করছি না, বদল করছি না এক দল থেকে আরেক দলের হাতে। আমরা আজ ওয়াশিংটন ডিসির হাতে থাকা ক্ষমতা আপনাদের, আমেরিকার জনগণের হাতে হস্তান্তর করছি।
রাজধানীতে দায়িত্ব পেয়ে কিছু মানুষ সুবিধা আদায় করেছে বলেও অভিযোগ তোলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, এই গোষ্ঠী নিজেদের দেখেছে কেবল, জনগণকে নয়। তাদের জয় ছিল তাদের, জনগণের নয়, তোমাদের নয়। আজ এই মুহূর্ত, এই উৎসব তোমাদের। এই আমেরিকা তোমাদের এবং এই দেশও তোমাদের।
ধনকুবের থেকে প্রেসিডেন্ট বনে যাওয়া ট্রাম্প বলেন, কোন দল সরকার পরিচালনা করছে সেটা সত্যিই বিষয় নয়, বরং এটাই বিষয় যে জনগণের হাতে সরকার পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি এই কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে যে, জনগণ এই দিন থেকে আবার শাসনভার পেয়েছে। আমাদের দেশ গঠনে অবদান রাখা নর-নারীরা আর ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাবেন না।
এসময় দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চাকরি বাজার নিয়েও কিছু কথা বলেন ট্রাম্প। প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এসব ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনেরও।
তিনি মাদক অপরাধ ও খুন-খারাপির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এই অপরাধ এখানেই থেমে যাবে এবং এখনই থামবে। আমরা এক জাতি। তাদের (বৈষম্য বা নিপীড়নের শিকার ব্যক্তি) ব্যথা আমাদের ব্যথা। তাদের স্বপ্ন আমাদের স্বপ্ন। তাদের সফলতা আমাদের সফলতা। ট্রাম্প আমেরিকানদের আনুগত্যের শপথ নিয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, বহু শতক ধরে আমেরিকান শিল্পের খরচে বিদেশি শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছি আমরা। আমাদের সামরিক বাহিনীর বদলে বিদেশি সামরিক বাহিনীর জন্য অর্থ যোগান দিয়েছি। নিজেদের সীমান্ত অরক্ষিত রেখে অন্য দেশের সীমান্ত রক্ষা করেছি। আমেরিকার ভেতরে অবকাঠামো ভেঙে পড়লেও আমরা বিদেশে শত কোটি ডলার খরচ করেছি। এ কারণে অন্য দেশ সমৃদ্ধ হয়েছে, হারিয়ে গেছে আমাদের সম্পদ, সামর্থ্য ও আত্মবিশ্বাস।
এসময় কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া, মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়াসহ অব্যবস্থাপনায় সৃষ্ট নানা সমস্যা-জটিলতার কথা তুলে ধরেন ট্রাম্প। এই সমস্যাকে ভুলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, সেসব এখন অতীত, এখন আমরা সামনের দিকে এগোচ্ছি।
ট্রাম্প জনগণের উদ্দেশে বলেন, আজ থেকে আমাদের এই ভূখণ্ড নতুন লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে। এই মুহূর্ত থেকে আমেরিকা আবার প্রথম হতে শুরু করবে। বাণিজ্য, কর, অভিবাসন, বৈদেশিক সম্পর্ক সবক্ষেত্রে আমরা এখন আমেরিকার কর্মী ও আমেরিকার জনগণের লাভ হিসাব করে সিদ্ধান্ত নেবো।
তিনি বলেন, অন্য দেশের অপরাধ যেন আমাদের পণ্য নষ্ট না করে দেয়, আমাদের কোম্পানিগুলোকে হাতিয়ে না নেয়, আমাদের চাকরির বাজার ধ্বংস করে না দেয়, সেজন্য সীমান্ত রক্ষা করতে হবে। নিরাপত্তাই সমৃদ্ধি ও পরাক্রমশীলতার দিকে এগিয়ে দেবে।
প্রেসিডেন্ট তার দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চটি দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, আমার শরীরের শেষ শ্বাসটা থাকা পর্যন্ত আমি তোমাদের জন্য লড়বো এবং কখনোই তোমাদের মাথা নিচু হতে দেবো না। আজ থেকে আমেরিকা আবার জিততে শুরু করবে, এমনভাবে জিতবে, আগে এভাবে জেতেনি। আমরা আমাদের চাকরি ফিরিয়ে আনবো, আমাদের সীমান্ত ফিরিয়ে আনবো, আমাদের সম্পদ ফিরিয়ে আনবো এবং আমাদের স্বপ্ন ফিরিয়ে আনবো।
এসময় অবকাঠামো উন্নয়নে নানা পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন ট্রাম্প। তিনি আমেরিকানদের উন্নয়নে দুই নীতিতে এগোনোর কথা বলেন, ‘আমেরিকান কেনো, আমেরিকান ভাড়া করো। ’
বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে সে দেশগুলোর স্বার্থের দিকে তাকানোর কথাও বলেন ট্রাম্প। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা আমাদের জীবনযাত্রা কারও ওপর চাপিয়ে দেবো না।
তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমরা আমাদের পুরনো জোটকে পুনরুজ্জীবিত করবো এবং নতুন আরেকটি জোট গঠন করবো। গোঁড়া ইসলামি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সভ্য বিশ্বকে এক করে এটাকে দুনিয়া থেকে সমূলে উৎপাটন করবো।
ট্রাম্প দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, আমেরিকা যখন ঐক্যবদ্ধ, তখন একে আর কেউ রুখতে পারবে না। এখানে কোনো ভয় থাকবে না। আমরা সুরক্ষিত এবং আমরা সবসময়ই এমন সুরক্ষিত থাকবো। আমাদের যেমন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনী আছে, তেমনি ঈশ্বরও আমাদের সুরক্ষিত রেখেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের উদ্দেশে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বলেন, কাছে থাকো, দূরে থাকো, শহরে থাকো, বন্দরে থাকো, পাহাড়ে থাকো, পর্বতে থাকো, সাগরে থাকো, মহাসাগরে থাকো, তোমরা শোনো, তোমরা কখনোই অবজ্ঞার শিকার হবে না। তোমাদের স্বর, তোমাদের প্রত্যাশা, তোমাদের স্বপ্ন আমাদের আমেরিকানদের লক্ষ্য নির্ধারণ করবে।
বক্তৃতার শেষ অংশে দৃঢ়তার সঙ্গে ট্রাম্প বলেন, আমরা একসঙ্গে আমেরিকাকে আবারও পরাক্রমশালী করে গড়ে তুলবো। আমরা আমেরিকাকে আবারও সম্পদশালী করে গড়ে তুলবো। আমরা আমেরিকাকে আবারও গর্বিত করবো, আমরা আমেরিকাকে আবারও নিরাপদ বানাবো এবং অবশ্যই, আমরা আমেরিকাকে আবারও ‘সেরা’ হিসেবে গড়ে তুলবো। ঈশ্বর তোমাদের মঙ্গল করুন, ঈশ্বর আমেরিকার মঙ্গল করুন।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৭
এইচএ/
আরও পড়ুন
** ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজে যাওয়ার পথে সংঘর্ষ, গ্রেফতার ৯০
** ক্যাবিনেট মনোনয়ন স্বাক্ষরে কাজ শুরু ট্রাম্পের
** এই আমেরিকা জনগণের, ক্ষমতাও ফিরবে জনগণের হাতে
** মি. প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, ৩৫ শব্দে শপথ পাঠ
** তারকাদের পদচারণায় উৎসবমুখর ক্যাপিটল হিল
** ওয়াশিংটনে ট্রাম্পবিরোধীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ
** ক্যাপিটল হিলে ওবামা-ট্রাম্প-বাইডেন-পেন্সরা
** তারকাদের পদচারণায় উৎসবমুখর ক্যাপিটল হিল
** ক্যাপিটল হিলে যাচ্ছেন ট্রাম্প-পেন্স, যাচ্ছেন ওবামা-বাইডেনও
** ওবামা-মিশেলের সঙ্গে প্রাতঃরাশে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প-মেলানিয়া
** শেষবারের মতো ওভাল অফিস ছাড়লেন ওবামা
** শপথবাক্য পাঠের আগে চার্চে ট্রাম্প
** শপথ দিনে ট্রাম্পের সারাদিন
** শপথবাক্য পাঠের আগে চার্চে ট্রাম্প
** ট্রাম্পের শপথানুষ্ঠানের টুকিটাকি
** বিদায় বেলায় ওবামাকে জড়িয়ে কাঁদলেন কর্মীরা
**নো ওবামা, নো ক্রাই
**‘আমি কথা দিচ্ছি তোমাদের, পরিবর্তন আসছে’
**ট্রাম্পের শপথের ডামাডোলে লম্বা বর্জনের মিছিলও