ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

‘মেক আমেরিকা সিক অ্যাগেইন’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৭
 ‘মেক আমেরিকা সিক অ্যাগেইন’ মেক আমেরিকা সিক অ্যাগেইন

ঢাকা: প্রেসিডেন্সিয়াল লড়াইয়ে নামার পর থেকেই বিতর্কিত আর বেফাঁস কথা বলে সমালোচনায় জর্জরিত হচ্ছেন তিনি। অপ্রত্যাশিতভাবে নির্বাচনে জয়লাভের পর জনগণের সুলভ স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তিতে চালু করা ‘ওবামাকেয়ার’ বাতিলে তার হম্বিতম্বি দেখেই বিরোধী ডেমোক্র্যাট শিবির তীর্যক মন্তব্য শুরু করেছিল।

তার নির্বাচনী প্রচারণা ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’কে (আমেরিকাকে আবার শ্রেষ্ঠ করে তোলো) ব্যঙ্গ করে উল্টো স্লোগান তুলেছিল ‘মেক অ্যামেরিকা সিক অ্যাগেইন’ (আমেরিকাকে আবার অসুস্থ করে তোলো)। মূল স্লোগানের পরিবর্তে ব্যঙ্গাত্মক এই স্লোগানই যেন এখন বাস্তবায়ন হতে শুরু করেছে।

‘গ্রেট’ এর বদলে ‘সিক’ শব্দটি হজম করতে যুক্তরাষ্ট্রের নয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। এক সপ্তাহে তিনি এমন ‘কাণ্ড-কীর্তি’ করেছেন যে, খোদ রিপাবলিকান রাজনীতিকরাই তার সেসব ‘কীর্তি’কে পুরোপুরি সমর্থন দেওয়ার যৌক্তিকতা পাচ্ছেন না। স্বদলীয় রাজনীতিকরা ট্রাম্পকে ধৈর্য্য দেখানোর পরামর্শ দিলেও তার এই হুটহাট কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলছেন না।

গত ২০ জানুয়ারি শপথগ্রহণের মাধ্যমে দেশের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন ট্রাম্প। তারপর এ পর্যন্ত পুরো এক সপ্তাহ কর্মদিবস পেয়েছেন তিনি। শপথগ্রহণের পরই তিনি ‘ওবামাকেয়ার’ বদলে ফেলতে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। যার ফলে অধিকাংশ আমেরিকানই ক্ষুব্ধ হয়। এরপর তিনি বাতিল করে দেন বহুল আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ টিপিপি (ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ) বাণিজ্য চুক্তি। ওই চুক্তিভুক্ত এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১২টি দেশ তৎক্ষণাৎ নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করে।

গত ২৫ জানুয়ারি ট্রাম্প সই করেন মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের নির্বাহী আদেশে। যাতে ছোট-বড় অঙ্গরাজ্যের গভর্নর এবং শহরগুলোর মেয়ররা বিক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া দেখান। এর পরদিন ২৬ জানুয়ারি তিনি ‍আগ্রহ প্রকাশ করেন অপরাধীদের শাস্তির বিশেষ ব্যবস্থা বিতর্কিত ‘ওয়াটারবোর্ডিং’ ফিরিয়ে আনাসহ কয়েকটি সমালোচিত বিষয়ে আদেশ জারির বিষয়ে।

আর ২৭ জানুয়ারি তিনি সই করে ফেলেন এই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া নির্বাহী আদেশে।

রিপাবলিকানদের একাংশের বিরোধিতা থাকলেও ‘ওবামাকেয়ার’ ছিল বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলের অন্যতম জনপ্রিয় বিল। টিপিপি বাণিজ্য চুক্তি ছিল এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক উপস্থিতির অন্যতম সাঁকো। ‘ওয়াটারবোর্ডিং’ তুমুল বিরোধিতার মুখে বাতিল করেছিলেন ওবামা। আর অভিবাসী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি যে সরাসরি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সেই আলোচনা শুরু হয়ে গেছে এরইমধ্যে। এমনকি আদালতও যুক্তিতর্কের প্রেক্ষিতে সেই আদেশ স্থগিত করে দিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্প এখন পর্যন্ত যে ক’টি পদক্ষেপই নিয়েছেন, প্রত্যেকটিই এখন পুরোপুরি বিতর্কের শূলে রয়েছে।

এরমধ্যে ট্রাম্প ন্যাটোর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ইঙ্গিত দিয়ে এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে মস্কোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ও তাদের ওপর ওয়াশিংটনের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার মনোভাব প্রকাশ করে বিতর্ককে উসকে দিয়েছেন আরও।

‘সঙ্গত কারণেই’ ডেমোক্র্যাটরা সেই স্লোগান ‘মেক আমেরিকা সিক অ্যাগেইন’কেই এখন ‍আবারও সামনে নিয়ে আসছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক তৎপর ডেমোক্র্যাটদের পাশাপাশি মানবাধিকার সংগঠনের কর্মী ও সমালোচকরা বলছেন, ট্রাম্প ‘গ্রেট’ নয়, আমেরিকাকে ‘সিক’ করতে চলেছেন।

ট্রাম্পের সমালোচনায় সরব হয়েছেন নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, শিকাগো, বোস্টন, টেক্সাস, নিউ হ্যাভেন, সাইরাক্রজ ও অস্টিনের মতো শহরগুলোর মেয়ররা। ট্রাম্প তার অভিবাসী নীতির কার্যক্রমে সহযোগিতা করতে শহরগুলোর প্রশাসনকে বাধ্য হতে একটি আদেশ জারি করায় ওই মেয়ররা সাফ বলে দিয়েছেন, তারা নীতিবহির্ভূত কোনো সহযোগিতায় বাধ্য হবেন না, প্রয়োজনে আদালতে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছেন কয়েকজন মেয়র। এমনকি ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর জেরি ব্রাউন সাফ বলে দিয়েছেন, তার রাজ্য অভিবাসী নীতিতে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের কাছে মাথা নত করবে না। এর কারণে যদি ট্রাম্প প্রশাসন অর্থ দেওয়া বন্ধ করে দেয়, তবে তারাও কেন্দ্রীয় সরকারকে ট্যাক্স দেবেন না।

পরিস্থিতি যে দ্রুতই অবনতির দিকে চলে যাচ্ছে সে দিকে ইঙ্গিত করে যুক্তরাষ্ট্রের কিংবদন্তি সাংবাদিক ড্যান রেদার বেশ দুঃখই প্রকাশ করেন। অভিবাসীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে শনিবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে তিনি ফেসবুকে বিশাল এক আবেগী স্ট্যাটাস দিয়ে বলেন, “আজ আমার ভালোবাসার দেশের জন্য অঝোরে কেঁদেছি। আমার মনে হয় এই কাঁপুনিটা আজ এ দেশের সব মানুষের হৃদয়েই চলছে। ”

ড্যান রেদারদের এই কান্না-কাঁপুনি আরও কতোদূর গড়ায় তা হয়তো বলবে সামনের দিনগুলোই। তবে অভিবাসী বিষয়ক ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের ওপর কেন্দ্রীয় আদালতের বিরল স্থগিতাদেশ যে তাদের খানিক হলেও ‘ভয়’ না পেতে সাহস যোগাচ্ছে, তা বলাই যায়।

আরও পড়ুন
** পুতিনের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী ফোনালাপ ট্রাম্পের​
** ট্রাম্পের সমালোচনা, অভিবাসীদের কানাডায় স্বাগত ট্রুডোর​
** বাংলাদেশিদের যুক্তরাষ্ট্র না ছাড়ার পরামর্শ আইনজীবীদের
** ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার মেয়ররা
** ট্রাম্পের অভিবাসী নিষেধাজ্ঞা আদালতে স্থগিত

** অভিবাসী প্রবেশে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা অবৈধ
** শরণার্থী নিষেধাজ্ঞায় ট্রাম্পের সমালোচনা জুকারবার্গের
** শরণার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ

** ট্রাম্পের অভিবাসী নিষেধাজ্ঞায় ক্ষুব্ধ মার্কিন প্রযুক্তিবিদরা

বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।