ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

কাতারের নেতৃত্ব বদলানোর ষড়যন্ত্রে আরবরা, অভিযোগ আমিরের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৭
কাতারের নেতৃত্ব বদলানোর ষড়যন্ত্রে আরবরা, অভিযোগ আমিরের শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি অভিযোগ করেছেন, তার দেশের ওপর অবরোধ জারি রাখা আরব দেশগুলো দোহার নেতৃত্ব বদলাতে চাইছে। এজন্য ষড়যন্ত্র চলছে।

রোববার (২৯ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের সিবিএস টেলিভিশনে প্রায় দু’ ঘণ্টার অনুষ্ঠান ‘সিক্সটি মিনিটসে’ তিনি এ অভিযোগ করেন। সন্ত্রাসবাদে মদদ ও ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে গত প্রায় পাঁচ মাস ধরে কাতারের ওপর সৌদির নেতৃত্বাধীন আরব জোটের অবরোধ চলছে।

৫ জুন অবরোধ জারির পর এই প্রথম বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুললেন কাতার আমির।

শেখ তামিম বিন হামাদ বলেন, অবশ্যই সৌদির নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর ও বাহরাইন জোট কাতারের নেতৃত্বে জোর করে পালাবদল করতে চাইছে।

‘ইতিহাস বলে...১৯৯৫ সালে আমার বাবা (হামিদ বিন খলিফা আল থানি) আমিরের পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর তারা ১৯৯৬ সালে তাকেও সরাতে চেয়েছিল (কিন্তু তিনি ২০১৩ সাল দায়িত্ব পালন করেন)। ’

কাতারকে সন্ত্রাসবাদে মদদ ও আরবদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর জন্য সৌদি জোট অভিযুক্ত করে এলেও দোহা বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

তামিম বিন হামাদ বলেন, ‘তারা আমাদের চিন্তা এবং আঞ্চলিক উচ্চাভিলাসের স্বাধীনতা চায় না। আমরা এ অঞ্চলের জনগণের কথা বলার স্বাধীনতা চাই, কিন্তু এতে তারা নাখোশ, সেজন্য তারা মনে করে এই বাকস্বাধীনতা চাওয়াটা তাদের জন্য হুমকি।

হামাদ বিন খলিফা অসুস্থতাজনিত কারণে ২০১৩ সালে তার পুত্র তামিমের হাতে আমিরের দায়িত্ব তুলে দেন। তারপর নানামুখী কার্যক্রমে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বজুড়ে আলোচিত নেতার জায়গা নিয়েছেন তামিম। বাবার ধারাবাহিকতায় তামিমও কাতারের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অগ্রগতি দেখিয়েছেন।

আরোপিত অবরোধকে অগ্রগতিতে থাকা কাতারের জন্য বড় ধাক্কা বলে উল্লেখ করেন আমির তামিম। তিনি নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে আরবদের সঙ্গেই একই টেবিলে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগেই আমরা একসঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। সবাই এক টেবিলে ছিলাম, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ। সবাই সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলাসহ অন্যান্য বিষয়ে কথা বলছিল। কেউই তখন আমাকে কিছু বললো না। তারপর হঠাৎ অবরোধ।

কাতারে তালেবান গোষ্ঠীর উপস্থিতির বিষয়ে তামিম বলেন, আমরা তাদের ডাকিনি কাতারে আসার জন্য। যুক্তরাষ্ট্রই বলেছে, তারা চেয়েছে আমরা তালেবানদের বসার জায়গা করে দিলে তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো সংলাপে বসতে পারে। এটাই কারণ।

সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে কাতারের ওপর আরবদের অভিযোগের ব্যাপারে আমির বলেন, তারা সন্ত্রাসবাদের কথা বলছে। অবশ্যই আমরা সন্ত্রাসকে সমর্থন করি না।

তবে লম্বা সময়ের এ সংকটের সমাধান চান বলে জানান কাতার আমির। তিনি বলেন, আমি সবসময়ই বলেছি, এই সংকটের সমাধান চাই। কিন্তু আমাদের মর্যাদা ও সার্বভৌমত্বের ঊর্ধ্বে কিছুই মানা হবে না। এটাও বলতে চাই, তারা যদি আমাদের দিকে এক মিটার এগোয়, আমরা তাদের দিকে ১০ হাজার মাইল এগোবো।

অবরোধ আরোপের তিন সপ্তাহের মাথায় এ সংকট নিরসনে ১৩টি শর্ত সম্বলিত একটি তালিকা দোহায় পাঠায় আরব জোট। সেই শর্তের মধ্যে ছিল সম্প্রচারমাধ্যম আল জাজিরা বন্ধ, ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক সংকীর্ণ করা এবং কাতারে অবস্থানরত তুরস্কের সৈন্যদের ফেরত পাঠানো।

এই শর্তগুলোকে তখনই কাতারের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল দোহা। সেই সুরেই আমির তামিম বলেন, আমরা আল জাজিরা বন্ধ করছি না। আমাদের সার্বভৌমত্ব আমাদের জন্য লাল সীমারেখা (রেড লাইন)। কেউ আমাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করলে সেটা আমরা গ্রহণ করবো না।

‘কেউ যদি আল জাজিরার মতো টিভি চ্যানেল বন্ধ করতে চায়, ৫০, ৬০ অথবা ৭০ বছর পর ইতিহাস বলবে, কীভাবে বাকস্বাধীনতার ধারণাকে বদলে দেওয়া হয়েছে। ’

সৌদি জোট অবরোধ আরোপ করে তাদের কোণঠাসা করতে চেয়েছিল কি-না, এমন প্রশ্নে শেখ তামিম বলেন, তারা আসলে কাতারের জনগণকে অবমূল্যায়ন করতে চেয়েছিল। কিন্তু জনগণ তাদের পাত্তায় দেয়নি। আমি আমার জনগণকে নিয়ে গর্বিত।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।