মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে সোমবার (২০ নভেম্বর) দু’দিনব্যাপী এশিয়া-ইউরোপ বৈঠক বা আসেম সম্মেলন শুরুর আগে আগে রোববার (১৯ নভেম্বর) চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সংবাদ সম্মেলন করে এ তিন দফা পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন।
এর আগে তিনি নেপিদোতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর বা সরকারপ্রধান অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট তিন কিয়াও ও সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এ বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের নেতৃত্বের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে রোহিঙ্গ সংকট সমাধানে চীনের তিন ধাপের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন ওয়াং ই।
এই পরিকল্পনা তিনটি হলো, প্রথমত; অস্ত্রবিরতি এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, যেন রাখাইন থেকে লোকজন না পালায় এবং শান্তিতে থাকে। দ্বিতীয়ত; মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে সাম্যের ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের উপায় খোঁজা এবং তৃতীয়ত, রাখাইন রাজ্যের উন্নয়নে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা প্রয়োজন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং বলেন, চীন বিশ্বাস করে-- সংলাপের মধ্য দিয়েই প্রতিবেশী দুই দেশ রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান করতে পারে।
রোহিঙ্গা সংকটের মূলে রাখাইনের দারিদ্র্য দায়ী উল্লেখ করে চীনের এ পররাষ্ট্রমন্ত্র বলেন, রাখাইনে সম্পদ আছে, কিন্তু যথেষ্ট উন্নয়ন হয়নি। তাই এই অঞ্চলকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে এবং উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে মিয়ানমারকে সহযোগিতার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই। এক্ষেত্রে সহযোগিতা ও ভূমিকা রাখতে চায় চীন।
এর আগে গত ১৮ নভেম্বর ঢাকা সফরকালে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পরামর্শ দেন।
সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, ওয়াং ই সোমবার থেকে নেপিদোয় শুরু হওয়া আসেমের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেবেন। মনে করা হচ্ছে, এই বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ইউরোপীয় দেশগুলো মিয়ানমারকে চাপ দিতে পারে।
গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদে রাখাইনে নিধনযজ্ঞ শুরু করে। এতে এখন পর্যন্ত সোয়া ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ বলে অভিহিত করেছে। রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে সংকটের শিগগির সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্ব সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৭
এইচএ/