বুধবার (২২ নভেম্বর) জাতিসংঘ সদরদফতরে এক সংবাদ সম্মেলন করে প্রমীলা এই নির্যাতনের বিস্তারিত তুলে ধরেন। চলতি মাসে বাংলাদেশ সফরে এসে গণধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গা নারীদের সঙ্গে কথা বলার পর যা বুঝেছেন, তা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন জাতিসংঘের এ বিশেষ দূত।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংবাদ সম্মেলনে প্রমীলা প্যাটেন জানান— রোহিঙ্গারা ‘জাতিগত নির্মূল অভিযানের’ শিকার বলে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান জেইদ রা’দ আল হুসেইন সম্প্রতি যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, সেটার প্রতি পূর্ণ সমর্থন রয়েছে তার।
জাতিসংঘের এ বিশেষ দূত আরও জানান, ব্যাপকভিত্তিক যৌন সহিংসতা ছিল সোয়া ৬ লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করার কার্যক্রমগুলির স্পষ্টতর অংশ। রোহিঙ্গাদের একটি গোষ্ঠী হিসেবে নির্মূল ও উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে পরিচালিত এই অভিযানকে ঠাণ্ডা মাথার সন্ত্রাসও বলা যায়।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুহারা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অসমানুপাতিক জিঘাংসা থেকে ঠাণ্ডা মাথায় সবচেয়ে হৃদয়ভাঙা, সবচেয়ে স্তম্ভিত করে দেওয়া এবং সবচেয়ে ভয়ঙ্কর নিপীড়ন চালানো হয়েছে। ’
নারীর বিরুদ্ধে সবরকমের বৈষম্য প্রতিরোধ বিষয়ক জাতিসংঘ কমিটির সাবেক এ সদস্য বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যদের গণধর্ষণ, জোরপূর্বক প্রকাশ্যে বিবস্ত্র করে ফেলা এবং যৌন দাসত্বসহ রোহিঙ্গাদের ওপর তাদের যৌন সহিংসতা ছিল একেবারে অমানবিকতা। ’
তিনি গণধর্ষণের কায়দার বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, ‘কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে নৃশংস ও বর্বরোচিত কায়দায় যৌন সহিংসতা ছিল- নারী ও কিশোরীদের গাছ বা পাথরের সঙ্গে বেঁধে কয়েকজন সৈন্যের গণধর্ষণ, যার ফলে অনেকে আক্ষরিক অর্থে গণধর্ষণে মারাও যেতো। কিছু নারীকে গণধর্ষণের পর তাদের ঘরের মধ্যে তালাবদ্ধ করে জ্বালিয়ে দেওয়া পর্যন্ত হয়েছে। ’
মিয়ানমারের সরকার নৃশংসতার অভিযোগ অস্বীকার করলেও প্যাটেনকে সংঘাতস্থল রাখাইনে ঢুকতে দেয়নি। এ বিষয়টি উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনের মিয়ানমারের দ্বিচারিতার কথাও তুলে ধরেন জাতিসংঘের এই দূত।
মরিশাসের আইনজীবী থেকে জাতিসংঘের দূত হওয়া প্রমীলা বলেন, আমার পর্যবেক্ষণ হলো-- কেবল নিজেদের ধর্ম ও জাতিসত্ত্বার কারণে সিস্টেম্যাটিক টার্গেটের শিকার রোহিঙ্গা নারীদের ওপর যৌন সহিংসতাসহ ব্যাপকভিত্তিক নৃশংসতা চালানো হয়েছে।
‘একটা বিষয়ই এখন স্পষ্ট যে এই যৌন সহিংসতার নেতৃত্বে, সমন্বয়ে এবং সাধনে দায়ী মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী। তাদের সঙ্গে ছিল মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং স্থানীয় অন্য জাতিগোষ্ঠীর উগ্র সদস্যরা। ’ বলেন জাতিসংঘের এই বিশেষ দূত।
গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদে রাখাইনে নিধনযজ্ঞ শুরু করে। এতে এখন পর্যন্ত সোয়া ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। প্রাণ হারিয়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। ধর্ষিতও হয়েছে অসংখ্য নারী। রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে সংকটের শিগগির সমাধান দাবিতে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্ব সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৭
এইচএ/