স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তেহরানের ইসলামিক রেভ্যুলিউশনস গার্ড বা বিপ্লবী বাহিনীর কমান্ডারের পর এবার বিক্ষোভকারীদের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিও। আরও বেশ কিছু শহরে সংঘর্ষের পর মন্ত্রিপরিষদের সভায় আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, ‘ইরানীরা সরকারবিরোধী বিক্ষোভের জন্য স্বাধীন।
হাজার হাজার মানুষ ইরানের অধিকাংশ এলাকায় সরকারবিরোধী এ আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন এবং দেশটির নতুন নতুন শহরে বিক্ষোভ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ছে। মূলত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অর্থনৈতিক মন্দা ও ব্যাপক বেকারত্বের প্রতিবাদ জানাতে বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) মাশহাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভ থেকে ৫২ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করায় দ্রুতই সেটি সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়।
রাজধানী তেহরানশহ দেশটির বড় বড় শহর ছাড়াও বেশকিছু স্থানে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি, প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিসহ ইসলামী বিপ্লবের নেতাদের পদত্যাগ ও তাদের ‘নিপাত’ যাওয়ার দাবিতে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন শহরে খামেনির ছবিও পুড়িয়ে দিচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা।
বিবিসি জানিয়েছে, দেশটির বিভিন্ন প্রান্তের মূলত তরুণ ও পুরুষ বিক্ষোভকারীরা সরাসরি দেশ থেকে ‘মোল্লাতন্ত্র’ উচ্ছেদের ডাক দিচ্ছেন। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধসহ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ও এর প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারও চাইছেন তারা।
শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল রহমান রহমানি ফাজলি ও তেহরানের ইসলামিক রেভ্যুলিউশনস গার্ড বা বিপ্লবী বাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল কায়সারি আন্দোলনকারীদের ‘কঠিন হাতে’ দমনের হুশিয়ারি দেন। কিন্তু তা উপেক্ষা করে সামাজিক মাধ্যমের অজ্ঞাতপরিচয় পোস্ট থেকে ইরান জুড়ে আরো বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হলে তা বিস্তৃত হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট রুহানি অবশ্য হুশিয়ারির পাশাপাশি তার বক্তব্যে স্বীকার করেছেন যে, ২০০৯ সালে বিপুল সংখ্যক সমাবেশে প্রতিবাদ বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে সমস্যাগুলো সমাধানের প্রয়োজন ছিল।
সামাজিক যোগাযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপের খবর দিয়ে অ্যাপল টেলিগ্রাফ ও ইনস্টাগ্রামের এ অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ‘শান্তি বজায় রাখতে’ আরোপিত হয়েছে বলে রিপোর্ট করেছে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইরেব।
মিডিয়াকে দৃঢ়ভাবে নিয়ন্ত্রিত রাখা হয় ৩৮ বছর আগে ইসলামি বিপ্লব করা মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে। এ পরিবেশে বিক্ষোভের বেশিরভাগ তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে এবং এ কাজে টেলিগ্রাম ও ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছেন বিক্ষোভকারী।
বিশেষ করে টেলিগ্রাম ইরানে অত্যন্ত জনপ্রিয়। কোম্পানিটির সিইও পাভেল দুরোভ টুইট করেছেন যে ইরানের কর্তৃপক্ষ তার কোম্পানিকে ‘শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদকারী চ্যানেলগুলো’ বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়। তা অস্বীকারের পরে পদক্ষেপ নিয়েছে।
২০০৯ সালে দেশটিতে বিতর্কিত নির্বাচন ও ব্যাপক সংস্কারের পর একই ধরনের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ কঠোরভাবে দমন করেছিল ইরান সরকার। তবে এবারের বিক্ষোভকে জন অসন্তোষের সবচেয়ে গুরুতর ও ব্যাপক অভিব্যক্তি বলে মনে করছেন অনেক পর্যবেক্ষক।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৮
এএসআর