রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, মধ্য ইরানের নাজাফাবাদ শহরে শিকারি রাইফেলের গুলিতে একজন পুলিশ সদস্য নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন।
এ নিয়ে গত পাঁচদিনের আন্দোলনে নিহতের সংখ্য দাঁড়িয়েছে ১৩ জনে, যদিও ১০ জনের মৃত্যুর খবর স্বীকার করেছে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন।
স্থানীয় গণমাধ্যমের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিপুল সংখ্যক পুলিশের বাধা ডিঙিয়েই বিক্ষোভকারীদের সশস্ত্র ছোট দল স্লোগান দিয়ে রাজধানী তেহরানের কেন্দ্রস্থলে ঢুকে পড়েছেন। এর আগে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়।
হাজার হাজার মানুষ ইরানের অধিকাংশ এলাকায় সরকারবিরোধী এ আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন এবং দেশটির নতুন নতুন শহরে বিক্ষোভ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ছে।
মূলত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অর্থনৈতিক মন্দা ও ব্যাপক বেকারত্বের প্রতিবাদ জানাতে বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) ইরানের দ্বিতীয় শহর মাশহাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভ থেকে ৫২ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করায় দ্রুতই সেটি সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়। একই দিন বিক্ষোভকারীরা গ্রিন মুভমেন্টের বিশাল সমাবেশ থেকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করলেও পুলিশি হস্তক্ষেপে পরে সহিংসতায় রুপ নেয়।
রাজধানী তেহরানশহ দেশটির বড় বড় শহর ছাড়াও বেশকিছু স্থানে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি, প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিসহ ইসলামী বিপ্লবের নেতাদের পদত্যাগ ও তাদের ‘নিপাত’ যাওয়ার দাবিতে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন শহরে খামেনির ছবিও পুড়িয়ে দিচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা।
বিবিসি জানিয়েছে, দেশটির বিভিন্ন প্রান্তের মূলত তরুণ ও পুরুষ বিক্ষোভকারীরা সরাসরি দেশ থেকে ‘মোল্লাতন্ত্র’ উচ্ছেদের ডাক দিচ্ছেন। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধসহ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ও এর প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারও চাইছেন তারা।
‘প্রতিবাদে সহিংসতা সহ্য করা হবে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা দাঙ্গাকারীদের মোকাবেলা করবেন’ প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির হুশিয়ারি করেই সর্বশেষ বিক্ষোভগুলো চলছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।
এ পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলীয় তিউসরিক শহরে বন্দুকধারীদের হামলায় ছয়জন মারা যান বলে প্রাথমিক নীরবতার পর প্রথমে জানায় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। দু’জনের ঘটনাকেও যখন স্থানীয় একজন আইন প্রণেতা রাতের অন্ধকারে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় আইজেহ শহরে আরও দু’জনকে গুলি করে হত্যার খবর জানান রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলকে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আরো জানিয়েছে, পশ্চিমাঞ্চলীয় দুরদে বিক্ষোভকারীরাই একটি কিশোর ছেলেসহ দু’জনকে গুলি করে হত্যা করেন, যা মূলত দাঙ্গা ছিল। একই শহরের অন্য দু’জনকে হত্যার জন্য সুন্নি মুসলিম চরমপন্থী ও বিদেশি শক্তিকে দায়ী করা হয়।
সর্বশেষ পুলিশ কর্মকর্তাসহ সব মিলিয়ে আন্দোলনে মোট নিহতের সংখ্যা এখন ১৩ জন।
এদিকে অস্থিরতা সৃষ্টির পর থেকে যে ৪০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে প্রায় ১০০ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৮
এএসআর