সৌদি আরব সফর শেষে দেশে ফেরার একদিন পর বুধবার (০২ জানুয়ারি) নওয়াজ শরিফ রাজধানী ইসলামাবাদে এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। সেখানে নওয়াজ বলেন, ‘মার্কিন হুমকি ধমকিকে আমরা থোড়াই কেয়ার করি।
ট্রাম্পের টুইটকে ‘গুরুত্বহীন’ এবং ‘দু:খজনক’ বলে অভিহিত করে নওয়াজ শরিফ বলেন, ‘একটি বন্ধুরাষ্ট্র সম্বন্ধে বেফাঁস মন্তব্য করার আগে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ট্রাম্পের উচিত রাষ্ট্রটির সঙ্গে সম্পর্কের কথা মনে রাখা। সাহায্য বন্ধ করার কথা বলে আমাদের ঘাবড়ে দেওয়া যাবে না।
উল্লেখ্য, পানামা কেলেঙ্কারির দায় মাথায় নিয়ে নওয়াজ শরিফ কিছুদিন আগে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। নিজের ছোট ভাই শাহবাজ শরিফকে নিয়ে তিনি সৌদি আরব সফরে গিয়ে রাজপরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ও সৌদি সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন।
পাকিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্রের দেয় সাড়ে ২৫ কোটি ডলার সামরিক সহায়তা বাতিল করা ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের টুইটে ‘ঠগবাজ’ ও ‘সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্য’ বলে অভিহিত করার পর দেশ দুটির মধ্যে শুরু হয়ে গেছে কথার লড়াই। সে লড়াইয়েই এবার নাম লেখালেন একাধিকবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এই নেতা।
মার্কিন সাহায্য ছাড়াই পাকিস্তান দিব্যি চলতে পারবে—এমন অভিমত ব্যক্ত করে নওয়াজ শরিফ বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী শহিদ খাকানকে পরামর্শ দেবো তিনি যেন একটি কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নেন। যাতে ভবিষ্যতে আমাদের আর মার্কিন সাহায্যের দরকার না পড়ে। যাতে করে আমাদের দেশের ভাবমূর্তির ওপর এহেন কায়দায় কেউ (যুক্তরাষ্ট) হামলে পড়তে না পারে। ’
‘যুক্তরাষ্ট্রে সংঘটিত ৯/১১ হামলার পর থেকে পাকিস্তানের মতো এতো বেশি মূল্য আর কোনো দেশকে দিতে হয়নি। পাকিস্তানের মতো এতো বিপুল মানবিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকারও আর কোনো দেশকে হতে হয়নি। ’
‘‘যুক্তরাষ্ট্রের শুরু করা ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ (ওয়ার অন টেরর) চলছে আজ দীর্ঘ ১৭টি বছর ধরে। এই যুদ্ধে আমরা তাদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকেছি। অথচ এই যুদ্ধটি কৌশলগতভাবে আমাদের কোনো যুদ্ধ ছিল না। "
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে নওয়াজ বলেন, "প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একথা মনে রাখা উচিত, ২০১৩ সালে আমরা (পাকিস্তান মুসলিম লীগ—নওয়াজ) ক্ষমতায় আসার পরপরই পাকিস্তানে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে কার্যকর ও জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করি। ’’
নওয়াজ বলেন, "ওই সময়টায় আমরা অপারেশন জারব-ই-আজব’ নামের সাঁড়াশি অভিযান শুরু করি। তার ফলেই আজ বেশিরভাগ সন্ত্রাসীর কোমর ভেঙে গেছে। বাকি যারা টিকে আছে তারাও শেষ হবে। ’’
সেনাশাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফের সরকারের অনির্বাচিত সরকারের দিকে পরোক্ষ ইঙ্গত করে নওয়াজ শরিফ আরও বলেন, ‘একথাও (ট্রাম্পের) মনে রাখা উচিত, এটা কিন্তু ২০০১ সাল নয়। কোনো সামরিক স্বৈরাচার এখন দেশ চালাচ্ছে না। একটামাত্র টেলিফোন কল পেয়ে আমরা এখন আর ভয়ে কুঁকরে যাবো না। ’’
প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় সেনাশাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফকে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্ল্যু বুশ টেলিফোন করে বলেছিলেন, আমাদের সঙ্গে লড়াইয়ে যদি না থাকো তাহলে তোমরা আমাদের শত্রপক্ষের বলে বিবেচিত হবে। প্রয়োজনে পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার কেড়ে নেবার হুমকিও দিয়েছিলেন বুশ। তাতেই ভড়কে যান পারভেজ মোশাররফ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৮
জেএম