‘বিক্ষোভকারীদের দমিয়ে দেওয়া ও পরাজয়ের’ এ খবরটি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জাফারি ঘোষণা করেন রাজধানী তেহরানের দশ হাজারেরও বেশি সরকার সমর্থকের সমাবেশে। অস্থিতিশীলতা তৈরির পর থেকে বুধবারের (০৩ জানুয়ারি) এই সমাবেশ ছিল সরকারের সমর্থনে সবচেয়ে বড় জমায়েত।
গত বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মাশহাদে শুরু হওয়া এ আন্দোলনে এ পর্যন্ত অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে শিশু ছাড়াও নিরাপত্তারক্ষী ও রাষ্ট্রীয় বিপ্লবী বাহিনীর এক সদস্য রয়েছেন।
বিক্ষোভটি প্রাথমিকভাবে মূল্যবৃদ্ধি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ডাকা হলেও দ্রুতই সরকারবিরোধী ব্যাপক আন্দোলনে পরিণত হয়। যা ২০০৯ সালের বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর শুরু হওয়া আন্দোলনের চেয়েও বড় ছিল।
বুধবার রাতারাতি অস্থিরতা কমে যাওয়ার খবর আসছে, যদিও অনেক শহরের রাস্তায় কি ঘটছে, তা নিশ্চিত করা কঠিন মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিষিদ্ধ দেশটিতে। ঘটনা যাচাই করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। তবে তেহরানে সংঘর্ষ বা গ্রেফতারের নতুন কোনো তথ্য নেই বলে জানায় সংস্কারবাদী নিউজ এজেন্সি এলএনএ। আর রাজধানীতে পুলিশের উপস্থিতিও হ্রাস পেয়েছে- বলছেন সরকারি মিডিয়া ও এএফপি’র সাংবাদিকরা বলেন।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এখন কুম, আহভাজ, কেরমানশাহ, ইলাম ও গোরগানসহ শহরগুলোর সরকার সমর্থিত সমাবেশগুলোকেই বেশি দেখাচ্ছে। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় এখনও বিক্ষোভের ভিডিও ও অন্যান্য পোস্ট দেখা যাচ্ছে।
খবরে বলা হয়, বুধবার তেহরানজুড়ে জড়ো হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভকারীরা ইরানের জাতীয় পতাকা ও সর্বোচ্চ নেতা খামেনি ও প্রেসিডেন্ট রুহানির ছবির পাশাপাশি ‘রাজতন্ত্রের মৃত্যু’ সম্বলিত ব্যানার বহন করছেন। ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতাদের উদ্দেশ্যে ‘আমরা আমাদের নেতার জন্য রক্ত দিতেও তৈরি’- জনপ্রিয় এ গানটিও গাইছিলেন তারা।
মূলত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অর্থনৈতিক মন্দা ও ব্যাপক বেকারত্বের প্রতিবাদ জানানো হচ্ছিল ২৮ ডিসেম্বরের মাশহাদের বিক্ষোভ সমাবেশে। পুলিশ ৫২ জনকে গ্রেফতার করায় দ্রুতই সেটি সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়। একই দিন বিক্ষোভকারীরা গ্রিন মুভমেন্টের বিশাল সমাবেশ থেকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করলেও পুলিশি হস্তক্ষেপে পরে সহিংসতায় রুপ নেয়।
রাজধানী তেহরানশহ দেশটির বড় বড় শহর ছাড়াও বেশকিছু স্থানে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি, প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিসহ ইসলামী বিপ্লবের নেতাদের পদত্যাগ ও তাদের ‘নিপাত’ যাওয়ার দাবিতে স্লোগান দেওয়া হয়। বিভিন্ন শহরে খামেনির ছবিও পুড়িয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা।
বিবিসি জানিয়েছিল, সপ্তাহজুড়ে চলা আন্দোলনে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তের মূলত তরুণ ও পুরুষ বিক্ষোভকারীরা সরাসরি দেশ থেকে ‘মোল্লাতন্ত্র’ উচ্ছেদের ডাক দেন। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধসহ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ও এর প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারও দাবি করেন তারা।
সর্বোচ্চ নেতা খামেনি এ বিক্ষোভের জন্য ‘শত্রু’দের ইন্ধনের অভিযোগ তুলে বলেন, ‘শত্রু সব সময়ই একটি সুযোগ এবং ইরানি জাতিকে ছত্রভঙ্গ ও হামলা করার কোনো তিক্ততা খুঁজছে"।
‘প্রতিবাদে সহিংসতা সহ্য করা হবে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা দাঙ্গাকারীদের মোকাবেলা করবেন’ বলে হুশিয়ারি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি।
তেহরানে ৪৫০ জনসহ বিভিন্ন শহরে অসংখ্য ব্যক্তিকে গ্রেফতারের খবর স্বীকার করে বিপ্লবী বাহিনী, যাদের অনেকেকে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৮
এএসআর