ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

শান্ত হচ্ছে ইরান, সরকার সমর্থকদের দখলে রাজপথ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১৮
শান্ত হচ্ছে ইরান, সরকার সমর্থকদের দখলে রাজপথ সরকারের সমর্থনে আরো ব্যাপক আকারে সমাবেশের দৃশ্য দেখাচ্ছে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। ছবি: সংগৃহীত

সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ দমন করা হয়েছে বলে ইরানের বিপ্লবী বাহিনীর প্রধানের দাবির একদিন পর প্রাদেশিক শহরগুলোতেই কেবলমাত্র সীমিত অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। এছাড়া দৃশ্যত শান্ত হয়ে আসা মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সরকারের সমর্থনে আরো ব্যাপক আকারে সমাবেশের দৃশ্য দেখাচ্ছে।

আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার আটদিন পর বৃহস্পতিবার (০৪ জানুয়ারি) স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বিক্ষোভের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিওগুলোই কেবল প্রাদেশিক শহরগুলোতে সীমিত অস্থিরতার খবর প্রচারিত হচ্ছে, যা মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত ইরানে যাচাই করা সম্ভব নয়।

সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আব্দুল্লাহিম মুসাভিন, ‘রাষ্ট্রদ্রোহের অগ্নি নির্বাপণের’ জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

এর আগে বুধবার (০৩ জানুয়ারি) ইরানি কর্তৃপক্ষ মারাত্মক অস্থিরতার অবসান ঘোষণা করে। সরকারবিরোধী ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ দমনের দাবি করেন দেশটির ইসলামিক রেভ্যুলিউশনস গার্ড (আইআরজিসি) বা বিপ্লবী বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জাফারি। ‘বিক্ষোভকারীদের দমিয়ে দেওয়া ও পরাজয়ের’ এ খবরটি তিনি ঘোষণা করেন রাজধানী তেহরানের দশ হাজারেরও বেশি সরকার সমর্থকের সমাবেশে। অস্থিতিশীলতা তৈরির পর থেকে ওই সমাবেশ ছিল সরকারের সমর্থনে সবচেয়ে বড় জমায়েত।

আর বৃহস্পতিবার ইস্পাহান ও আরডেবলসহ ১০টি শহরে সরকারের সমর্থনে জনতার ব্যাপক বিক্ষোভ দেখিয়েছে। এমনকি ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরের রাজপথও সরকার সমর্থকদের দখলে বলে দাবি করা হচ্ছে, যেখানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ গত বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) প্রথমবারের মতো বিস্ফোরিত হয়।

সরকার সমর্থকদের এসব সমাবেশে ‘আমরা নেতাদের পেছনে একসঙ্গে’- ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির প্রসঙ্গে বক্তব্য দিচ্ছিলেন জনতা।

খামেনির উপদেষ্টা আলি আকবর ভ্যালয়াতি আঞ্চলিক আইএসএনএ নিউজ এজেন্সিকে জানান বলেন, ‘বিপ্লবী ইরানিরা রাস্তায় নেমে আসায় শত্রুদের কষ্ট তৈরির প্রচেষ্টা নস্যাৎ হয়েছে। সরকার ও কর্মকর্তাদের প্রতি জনগণের প্রধান দাবি এখন অর্থনৈতিক সমস্যার মোকাবেলা করা’।

আন্দোলনের প্রথম পাঁচদিনে অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন শিশু ছাড়াও নিরাপত্তারক্ষী ও রাষ্ট্রীয় বিপ্লবী বাহিনীর এক সদস্য রয়েছেন।

বিক্ষোভটি প্রাথমিকভাবে মূল্যবৃদ্ধি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ডাকা হলেও দ্রুতই সরকারবিরোধী ব্যাপক আন্দোলনে পরিণত হয়। যা ২০০৯ সালের বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর শুরু হওয়া আন্দোলনের চেয়েও বড় ছিল।

রাজধানী তেহরানশহ দেশটির বড় বড় শহর ছাড়াও বেশকিছু স্থানে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি, প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিসহ ইসলামী বিপ্লবের নেতাদের পদত্যাগ ও তাদের ‘নিপাত’ যাওয়ার দাবিতে স্লোগান দেওয়া হয়। বিভিন্ন শহরে খামেনির ছবিও পুড়িয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা।

বিবিসি জানিয়েছিল, সপ্তাহজুড়ে চলা আন্দোলনে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তের মূলত তরুণ ও পুরুষ বিক্ষোভকারীরা সরাসরি দেশ থেকে ‘মোল্লাতন্ত্র’ উচ্ছেদের ডাক দেন। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধসহ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ও এর প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারও দাবি করেন তারা।

সর্বোচ্চ নেতা খামেনি এ বিক্ষোভের জন্য ‘শত্রু’দের ইন্ধনের অভিযোগ তুলে বলেন, ‘শত্রু সব সময়ই একটি সুযোগ এবং ইরানি জাতিকে ছত্রভঙ্গ ও হামলা করার কোনো তিক্ততা খুঁজছে"।

‘প্রতিবাদে সহিংসতা সহ্য করা হবে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা দাঙ্গাকারীদের মোকাবেলা করবেন’ বলে হুশিয়ারি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি।

তেহরানে ৪৫০ জনসহ বিভিন্ন শহরে অসংখ্য ব্যক্তিকে গ্রেফতারের খবর স্বীকার করে বিপ্লবী বাহিনী, যাদের অনেকেকে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৮
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।