বইয়ে ট্রাম্পের মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলঅ হয়েছে। ট্রাম্পকে চিন্তাহীন, গণ্ডমূর্খ, অপরিণত মস্তিষ্ক, শিশুদের মতো খামখেয়ালি স্বভাবের বলেও উল্লেখ করা হয়েছে এতে।
‘এই লোক কোনো বইটই পড়ে না, কারো কোনো কথা শোনে না। তার স্বভাব অনেকটা পিনবলের মতো। পিনবল টেবিলে যেমন সবার চোখ থাকে যতো বেশি সম্ভব স্কোর করা, ট্রাম্পের নজরও সারাক্ষণ অন্যদের মুখ থেকে প্রশংসা পাওয়ার দিকে। ’
এতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ট্রাম্প বইয়ের লেখক মাইকেল উলফকে একহাত দেখে নেবার হুমকিও দিয়েছেন। মার্কিন মুলুকের সব সংবাদমাধ্যম এখন ‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি’ময়। এরই মধ্যে ট্রাম্পের মানসিক স্বাস্থ্য আসলেই কেমন-- এই মর্মে সিএনএন প্রশ্ন রাখে খোদ ট্রাম্প সরকারেরই পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের কাছে।
প্রশ্নটি করার জন্য ঠিক লোককেই বাছাই করেছিল টিলারসন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিচয়ের বাইরেও টিলারসনের আরো একটি পরিচয় আছে। আর তা হচ্ছে তিনি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞও বটে।
সিএনএন’র পক্ষে এলিস ল্যাবটের (Elise Labott) নেয়া এই একান্ত সাক্ষাৎকারে টিলারসন বলেন, ট্রাম্পের মানসিক স্বাস্থ্য (মেন্টাল ফিটনেস) নিয়ে তার মনে কখনোই কোনো প্রশ্ন জাগেনি।
‘তার (ট্রাম্পের ) মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন করার মতো কোনো মতো কোনো কারণও খুঁজে পাইনি। ’—এই ছিল টিলারসনের জবাব। কিন্তু কিছুদিন আগেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে যখন তার খটাখটি লাগে, তখন ক্ষুব্ধ টিলারসন ট্রাম্পকে ‘বেকুব’ (‘মোরন’) বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
ব্যক্তিগত রেষারেষি এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে, ট্রাম্প প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে বসেন, বুদ্ধির প্রতিযোগিতার (আইকিউ টেস্ট) আয়োজন করা হলে তিনি তার শীর্ষ কূটনীতিককে (টিলারসন) সহজেই টেক্কা দেবেন।
টিলারসনও তখন ঢিলের জবাবে পাটকিল হিসেবে ট্রাম্পকে ‘মাথামোটা বেকুব’ বলতে দ্বিধা করেননি।
তবে টিলারসন সিএনএন’র প্রশ্নের জবাবটা যতো কূনীতিকসুলভ আর কায়দা করেই দিন না কেন, ট্রাম্প যে আর দশজন মানুষের মতো নন, সে আভাসও দিয়েছেন: ‘মি. ট্রাম্প ‘অতীতের টিপিক্যাল প্রেসিডেন্টদের মতো নন। একতা সবাই জানেন। একথা সর্বজনস্বীকৃত। এজন্যই হয়তো আমেরিকার জনগণ তাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। ’
ট্রাম্পের সঙ্গে খটাখটির জের ধরে তিনি অচিরেই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিচ্ছেন কিনা, এলিস ল্যাবট এই প্রশ্ন করেন। জবাবে টিলারসন বলেন, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলছেন। সম্পর্ক আগের চেয়ে ভালেঅ হয়েছে। তিনি অচিরেই তার পদ ছেড়ে দিয়ে কোথাও যাচ্ছেনও না। বরং পুরো ১০১৮ সালটা ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গেই থাকবেন।
তার ভাষায়, "আমি ব্যক্তিক্রমী কি করবো যদি জানতে চাওয়া হয় তাহলে বলবো, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যাতে আরো ভালো বোঝাপড়া ও যোগাযোগটা গড়ে তুলতে পারি, আমার তরফ থেকে সে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। ’
ইউএসএ টু-ডের প্রদায়ক ও নিয়মিত কলাম লেখক মাইকেল উলফের ‘‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি’’ যখন বাজারে ছাড়া হয়, তখন মধ্যরাত। তখনও কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে দীর্ঘ কিউতে দাঁড়িয়ে লোকে বইটি কেনে।
বিতর্কিত এই বইটি এরই মধ্যে মার্কিন মুলুকে ‘বিস্ফোরক বই’য়ের অভিধা পেয়ে গেছে। হু-হু করে কাটতি বাড়তে থাকা এই বইয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্বন্ধে অনেক বিস্ফোরক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। হোয়াইট হাইসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্ধৃতি দিয়ে বইয়ে বলা হয়েছে, তারা ট্রাম্পকে একজন অপরিণত মনের ‘বয়স্ক শিশু’ হিসেবেই গণ্য করে থাকেন। কেননা ট্রাম্প সচরাচর যে অসংলগ্ন, খামখেয়ালি আচরণ করে থাকেন। সে আচরণের সঙ্গে অবিকশিত, অবোধ শিশুর আচরণের খুব একটা ফারাক নেই।
হোয়াইট হাউসের স্টাফদের প্রায় ২০০ সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে এই বই। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে এই বইয়ের কি কি থাকছে বা বলা হয়েছে তা আগেভাগেই প্রকাশের আগেই সম্ভাব্য পাঠকদের জানিয়ে দেন মাইকেল উলফ। আর তাতে স্বভাব রাগী ট্রাম্প তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন, বইটি যাতে প্রকাশিত না হতে পারে তার যথাসম্ভব চেষ্টা করেন। লেখককে হুমিক পর্যন্ত দেন। কিন্তু ট্রাম্পের রাগের পারদ আরো একটু চড়িয়ে বইটি ঠিকই বাজার মাতাচ্ছে।
গত এক বছরে ট্রাম্পের নিজের ও হোয়াইট প্রশাসনের কাজকর্মের অনেক অজানা কাহিনি উঠে এসেছে বইটিতে।
ট্রাম্পের অভিযোগ, ‘মিথ্যাচারে ঠাসা, বিরক্তিকর’ এই বইয়ের পেছনে মিডিয়ার হাত আছে। তারাই তাকে হেয় করার জন্য সাংবাদিক উলফকে তার পেছনে লাগিয়েছে।
মিডিয়াকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, ‘তাদের উচিত একটা নির্বাচনে নেমে জয়ী হয়ে দেখানো’। ট্রাম্প আরও বলেন, ‘দু:খজনক’, ‘এই বই বিশ্বাস করার মতো নয়’।
এক টুইটে ট্রাম্পের দাবি, তার সাথে কথা না বলেই মাইকেল উলফ তাকে ও তার প্রশাসনকে নিয়ে মনগড়া কাহিনি ফেঁদেছেন: ‘তাকে (উলফকে) তো আমি কখনোই হোয়াইট হাউসে ঢুকতেই দিইনি, কথাও বলিনি। ’
আর মাইকেল উলফের দাবি, তিনি হোয়াইট হাউসে গিয়েছেন। সে প্রমাণও তার কাছে আছে: ‘আমি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে অবশ্যই কথা বলেছি। ’
তার দাবি, সব মিলিয়ে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে তিন ঘণ্টা কথা বলেছেন। ট্রাম্পের কথার কানাকড়ি বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। ট্রাম্পের চারপাশের লোকদের কেউই ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ্য বলে মনে করেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৮
জেএম