যুগান্তকারী ঘোষণাটি দেওয়ার পরপরই দুদেশের প্রতিনিধিরা পরস্পরকে আনন্দে জড়িয়ে ধরে উল্লাস প্রকাশ করেন।
মঙ্গলবার (০৯ জানুয়ারি) দু’দেশের সীমান্তবর্তী ‘শান্তিগ্রাম’ পানমুনজমে শুরু হওয়া এই দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মূল এজেন্ডাই ছিল শীতকালীন অলিম্পিক গেমসে উত্তর কোরিয়ার অংশগ্রহণ।
আলোচনা সফল হওয়ায় দু’দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে যে টানটান উত্তেজনা ও অস্বস্তিকর অবস্থা চলে আসছে তা কিছুটা হলেও দূর হলো। সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে মঙ্গলবারের আলোচনায় সফলতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ভূমিকা রাখবে।
উত্তর কোরিয়া যে দলটি পাঠাবে তাতে অ্যাথলেটদের পাশাপাশি বেশ কিছু সংখ্যক কর্মকর্তা ও চিয়ারলিডাররা থাকবেন।
গেমস চলাকালে দুদেশের পরিবারগুলোর পুনর্মিলনের একটি প্রস্তাবও দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। যুদ্ধের কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া পরিবারগুলোর পুনর্মিলনের বিষয়ে দু’দেশের মানুষই একমত এবং খুব আবেগপ্রবণ। এমনটা তারা বেশি বেশি চান।
ধারণা করা হচ্ছে, এই পুনর্মিলন হবে চান্দ্রবর্ষের ছুটির সময়। শীতকালীন অলিম্পিক তখন মাঝামাঝি পর্যায়ে থাকবে।
সিউল আরো চায়, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সময় দুদেশের অ্যাথলেটরা একসঙ্গে মার্চ করুক, যেমনটি তারা করেছিল কোরীয় উপদ্বীপের পতাকা হাতে, ১০ বছর আগে ২০০৬ সালের উইন্টার অলিম্পিকে।
তবে এ প্রস্তাবে উত্তর কোরিয়া রাজি হয়েছে কিনা জানা যায়নি।
উল্লেখ্য, গত দু’বছরের মধ্যে বিবদমান দেশ দুটির মধ্যে এটাই প্রথম আলোচনা। দক্ষিণ কোরিয়া বলছে আন্ত-কোরিয়া সম্পর্কের উন্নয়নে তারা সম্ভব সবকিছু করবে। দেশ দুটির মধ্যে সর্বশেষ আলোচনা হয়েছিল ২০১৫ সালে। এরপর থেকেই উত্তেজনার পারদ বেড়েই চলেছে। এর একটি কারণ উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র কার্যক্রম ও যুক্তরাষ্ট্রের তরফে উত্তর কোরিয়ার প্রতি উস্কানিমূলক আচরণ।
উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর পর দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর কোরিয়ায় কায়েসং ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রজেক্ট নামে যৌভভাবে পরিচালিত একটি অর্থনৈতিক প্রকল্প থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়। এরপর থেকেই দুদেশের সম্পর্কে তিক্ততা কেবলই বেড়েছে।
এ ঘটনার পর সিউলের সাথে পিয়ং ইয়ং ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এমনকি টেলিফোন যোগাযোগও।
মঙ্গলবারের আলোচনা শুরুর আগেই দক্ষিণ কোরিয়া আসন্ন শীতকালীন অলিম্পিককে ‘শান্তি অলিম্পিক’ আখ্যা দিয়ে আলোচনার জন্য অনুকূল বাতাবরণ তৈরি করে। দু’পক্ষের নেতারাই আলোচনায় বসার আগে মিডিয়ার কাছে আশাবাদী ও ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেন। আলেঅচনা সফল করে তারা তাদের বক্তব্যের সত্যতাই প্রমাণ করলেন।
আলোচনায় দক্ষিণ কোরীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সেদেশের ইউনিফিকেশন (একত্রীকরণ) মন্ত্রী চো মিয়োউং-গিয়ন।
আলোচনা শুরুর আগ মুহূর্তে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, পিয়েঅনচ্যাং অলিম্পিক গেমস হয়ে উঠবে এক শান্তি অলিম্পিক। কেননা সেখানে উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে সম্মানিত অতিথিরা সারাবিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা অতিথিদের সঙ্গে এসে যোগ দেবেন্। উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া শান্তি ও সমঝোতার পথে হাঁটবে মানুষ এটাই দেখতে চায়।
উত্তর কোরীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সেদেশের দক্ষিণ কোরিয়া বিষয়ক রাষ্ট্রীয় সংস্থার প্রধান রি সং-গউন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের দক্ষিণী ভাই-বেরাদরদের আলোচনার অমূল্য ইতিবাচক ফল উপহার দিতে এসেছি।
আলোচনাকালে উত্তর কোরীয় প্রতিনিধিদল সেটাই প্রমাণ করলো।
***অলিম্পিক গেমস নিয়ে দুই কোরিয়ার আলোচনা শুরু
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৮
জেএম