মঙ্গলবার (০৯ জানুয়ারি) দুপুরে ইসলামাবাদের পাঞ্জাব হাউজে আইনজীবীদের সমাবেশে তিনি একথা বলেন।
গতবছরের ২৮ জুলাই পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত দেশটির প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার জন্যে অযোগ্য ঘোষিত হওয়ার পর পদত্যাগ করেন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ।
তাকে ‘বিদ্রোহে’র দিকে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন নওয়াজ। এ সময় তিনি নিজের বর্তমান এ অবস্থানকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে তুলনা করেন।
সাতচল্লিশে দেশভাগের পর থেকে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশকে শোষণ করেছে পাকিস্তান। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় পাওয়ার পরও ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি তারা।
উল্টো নানা টালবাহানার পর নিরীহ বাঙালির ওপর চালায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ। যার পরিণতিতে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
আইনজীবীদের সমাবেশে পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী ছিলেন না। আমরাই তাকে বিদ্রোহী করে তুলেছিলাম। পাকিস্তান সৃষ্টিতে বাঙালির কেন্দ্রীয় ভূমিকা ছিল। কিন্তু তাদের সঙ্গে আমরা ভালো আচরণ করিনি এবং তাদের বিচ্ছিন্ন হতে বাধ্য করেছি আমরাই। ’
পাকিস্তানের প্রভাবশালী দৈনিক ‘ডনে’র প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েও কোনোবারই মেয়াদ শেষ করতে পারেননি নওয়াজ। ১৯৯০ ও ১৯৯৭ সালে দুই বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেও ক্ষমতাচ্যুত করা হয় তাকে।
শেষবার সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা হারিয়ে বাধ্য হন দেশ ছাড়তে। এরপর ২০১৩ সালে নির্বাচন হয়, ওই সময় ফের ক্ষমতায় আসেন নওয়াজ।
এর আগে শুধু নওয়াজ-ই নয়, পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন প্রধানমন্ত্রীর কেউ-ই তাদের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কখনও দুর্নীতি কিংবা সেনা অভ্যূত্থানের ঘটনায় দায়িত্ব ছাড়তে হয়েছে তাদের। সর্বশেষ পানামা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছে নওয়াজের নাম। বারবার শাসন ক্ষমতায় সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপও দায়ী।
বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে নওয়াজ আরও বলেন, ‘বিচারপতি হামদুর রহমান কমিশন বাংলাদেশের সৃষ্টি নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণপূর্বক সত্য ও স্পষ্ট প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু আমরা তা পড়েও দেখিনি। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা যদি পদক্ষেপ নিতাম তাহলে আজকের পাকিস্তান ভিন্ন হতো এবং যে ধরনের খেলা হয়ে থাকে সেগুলো হতো না। ’
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের এই পরিণতির জন্য দেশটির সেনা শাসকদের বিচারের মুখোমুখি না হওয়া কারণ। কোনোও আদালত-ই পাকিস্তানে একনায়কের বিচার করতে চেষ্টা করেনি। ’
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের পর পাকিস্তান সরকার বিচারপতি হামদুর রহমানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
ওই কমিশনের প্রতিবেদনে একাত্তরে বাংলাদেশে গণহত্যার জন্য দেশটির সেনাবাহিনীকে দায়ী করা হয়। একই সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিচারের সম্মুখীন করতে সুপারিশ করে কমিশন।
কিন্তু সুপারিশ অনুযায়ী কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি পাকিস্তান। বরং বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন করলে উল্টো উসকানিমূলক আচরণ করেছে দেশটি।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৮/আপডেট: ০০৩০ ঘণ্টা
এমএ