অবিরাম প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট বন্যা কাদার স্রোতের রূপ নিয়ে বাড়িঘর, মানুষজনসহ সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বহু লোক নিখোঁজ রয়েছে।
কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, কমপক্ষে ১৬৩ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ২০জন ঝড়ের কবলে পড়ে আহত। আহতদের চারজনের অবস্থা গুরুতর।
কাদার বন্যা যে দিক দিয়ে গেছে সেখানকার হাজার হাজার বাড়িঘর গাছপালা ধ্বংস হয়েছে। বহু বাড়িঘর ভেসে গেছে। হাজার হাজার আতঙ্কিত মানুষ প্রাণ হাতে নিয়ে দুর্গত এলাকা ছেড়ে নিরাপদ এলাকার দিকে পালিয়ে গেছে। কাদার স্রোতের কারণে আটকাপড়া ৫০ জনের বেশী মানুষকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
সান্তা বারবারার রোমেইরো ক্যানিয়ন এলাকায় ৩০০ জনের মতো আটকা পড়েছে। এরইমধ্যে বহু লোক নিখোঁজ রয়েছে। সেখানে অবিশ্বাস্য এক মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
এই ভয়াবহতাকে পুলিশ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধক্ষেত্রের ভয়াবহ দৃশ্যের সাথে তুলনা করে বলেছে,’লুকড লাইক আ ওয়ার্ল্ড ওয়ার ওয়ান ব্যাটলফিল্ড’।
আকস্মিক এই ভয়াবহ বন্যা ও কাদার প্লাবন ঠিক সেসব স্থানকেই কবলিত করেছে যেগুলো গতমাসে ভয়াবহ দাবানলের শিকার হয়েছিল। এদিক থেকে নতুন এই বিপর্যয় ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’। কোমর সমান কাদার এই স্রোতের কারণে প্রধান উপকূলীয় মহাসড়কের ৪৮ কিলোমিটার এলাকা দৃশ্যত অচল হয়ে গেছে। অনেক স্থানে রেললাইন ধ্বংস হয়ে গেছে।
সান্তা বারবারা কাউন্টির দমকল বাহিনীর মুখপাত্র মাইক এলিয়াসন জানান, কাদার প্লাবন মন্তেসিতো এলাকার বেশকিছু বাড়িঘরকে ভিতসহ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।
বারব্যাংক নামের একটি এলাকায় কাদার স্রোত অনেক গাড়িও ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।
বিবিসি নিউজের লসএঞ্জেলেস প্রতিনিধি জেমস কুক তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, কাদার স্রোত এতোটাই শক্তিশালী যে, এর প্রবল ধাক্কায় গাড়ির মতো বিশাল আকারের পাথরখণ্ড উঁচু থেকে গড়িয়ে নিচে নেমে এসে রাস্তাঘাট ও চলাচলের সব পথ বন্ধ করে দিচ্ছে।
মন্তেসিতো এলাকায় আকাশ থেকে তোলা ছবি দেখে সেখানকার বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, স্থাপনা আর চেনার উপায় নেই। সবকিছু দৃশ্যত কাদায় একাকার হয়ে আছে। সবখানে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িঘর ও ভাঙাচোরা জঞ্জাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
কাদার স্রোত রীতিমতো প্রমত্ত নদীর রূপ নিয়ে যা সামনে যা পাচ্ছে তা-ই তছনছ করে ভেঙে-গুঁড়িয়ে এগিয়ে চলেছে।
মঙ্গলবার দিনগত মধ্যরাত ১টা ১২ মিনিটে Ellen DeGeneres নামের একজন টুইটে যা বলেছেন তা হুবহু তুলে ধরা হলো,‘এটা কোনো নদী নয়। এ মুহূর্তে এটা হচ্ছে আমার বাড়ির পাশের ১০১ ফ্রিওয়ে। মন্তেসিতো আপনাদের সহায়তা ও ভালোবাসা চায়। ’
এই ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় মোকাবেলা ও উদ্ধারকাজ পরিচালনার জন্য মার্কিন উপকূলরক্ষী বাহিনী বেশকিছু হেলিকপ্টার ও এয়ারশিপ পাঠিয়েছে। তারা লোকজনকে কোনো ধরনের ড্রোন ওড়ানো থেকে বিরত থাকতে বলেছে।
ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি ক্যালিফোর্নিয়ার বাড়ির মালিকদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, যেসব বাড়িঘর আগে কখনোই বন্যাকবলিত হয়নি, সেসবও বন্যা ও কাদাস্রোতে তলিয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৮
জেএম