কেননা, বিজেপির ক্ষমতা হারানো তিন রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও রাজস্থান- সবগুলোই কৃষিপ্রধান অঞ্চল। গ্রামীণ জনপদই রাজ্য তিনটিতে বেশি।
আরও পড়ুন>> বিধানসভা নির্বাচন: বিজেপির ভরাডুবি, এগিয়ে কংগ্রেস
এ তিন রাজ্যের মধ্যে- মধ্যপ্রদেশের গ্রামে থাকা ৭৫টির বেশি বিধানসভা কেন্দ্র হারিয়েছে বিজেপি। এছাড়া রাজস্থানের গ্রামে বিজেপির প্রায় ৪০টি আসন হাতছাড়া হয়েছে। আর ছত্তিশগড়ের গ্রামের ৩০টির বেশি আসন খোয়া গেছে দলটির।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রদেশে ৭০ এবং ছত্তিশগড়ের ৭৫ শতাংশ মানুষ কৃষক। আর রাজস্থানের ৬৩ শতাংশ লোক চাষি বা ক্ষেতমজুর। যারা এ সরকারের সময়ে তাদের ন্যায্য দাবি আদায় করতে পারেননি। যেকারণে বিজেপির দিক থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
অপরদিকে, রাজ্য তিনটিতে রাহুল গান্ধীর কংগ্রেসকে তারা ক্ষমতায় এনেছেন। তারমধ্যে ছত্তিশগড় এবং রাজস্থানে বেশ দাপট দেখিয়েই গদি দখলে নিলেন রাহুল। তবে মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের ১১৪টি আসনের সঙ্গে বিএসপি’র দুই এবং এসপি দলের একটি যোগ করে ১১৭টি নিয়ে ক্ষমতায় যেতে হচ্ছে রাহুলকে। কেননা, ২৩০ আসনের মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় ম্যাজিক ফিগার ১১৬। যা তার সম্ভব হয়েছে এই দুই দল কংগ্রেসের পাশে দাঁড়ানোয়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, পাঁচ বছর আগের এ নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং রাজস্থানে বড় দাপট দেখিয়েছিল বিজেপি। এছাড়া ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতাসীন ছিল দলটি। যা এখন উল্টে গেছে শুধু কৃষক অসন্তোষের কারণে। এ সুযোগে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজ ও ছত্তিশগড়ের রমণ সিংহকে আসনচ্যুত করলেন রাহুল। আর এ থেকে ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদীর প্রধান প্রতিপক্ষ হওয়ার ইঙ্গিত দিলেন তিনি।
নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর বছরখানেক ভালোই কেটেছিল। এরপর দুই-তিন বছর দেশজুড়ে দেখা দেয় কৃষক অসন্তোষ। সারাদেশে শুরু হয় কৃষকদের বিক্ষোভ কর্মসূচি। তখন থেকে তাদের মূল দাবি ফসলের ন্যায্যমূল্য পাওয়া। কিন্তু তা আর মোদীর দ্বারা হয়ে ওঠেনি। যে কারণে এ নির্বাচনে মোদীকে ‘আঙুল’ দেখিয়েছেন ন্যায্য মূল্যবঞ্চিত কৃষকরা।
ভারতে কৃষকরা তাদের ফলানো ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। এছাড়া দেশটিতে কৃষকঋণ নিয়েও বড়সড় জটিলতা রয়েছে। যার সমাধান করেনি মোদী সরকার। এ বিষয়ে দেশের কৃষক আন্দোলনের নেতা হান্নান মোল্লা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, নানা দাবি নিয়ে কৃষকদের বিক্ষোভ সৃষ্টি হলেও সরকার তাতে একটুও নড়ে বসেনি। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কৃষকদের ভালো করে একটি আশ্বাসও দেননি। যে কারণে নির্বাচনটিতে এর মূল্য দিতে হয়েছে বিজেপির। তিনি এও বলেন, গ্রামের নানা সমস্যা ও কৃষকদের এ অসন্তোষ আগামী লোকসভা ভোটেও প্রভাব ফেলবে বলে আমাদের আশা।
পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল বলছে, মধ্যপ্রদেশের ২৩০ আসনের মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছে ১১৪টি। আর ১০৯টি আসন নিয়ে দ্বিতীয়তে বিজেপি। এছাড়া রাজ্যটিতে মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) দু’টি, সমাজবাদী পার্টি (এসপি) একটি এবং স্বতন্ত্ররা চারটি আসন পেয়েছে। পরে চূড়ান্ত ফল শেষেই কংগ্রেসের হাত ধরে বিএসপি এবং এসপি।
২০০ আসনের রাজস্থানে কংগ্রেস পেয়েছে ১০০টি। ৭০ আসনে জয় নিয়ে কংগ্রেসের পেছনে রয়েছে বিজেপি। এছাড়া বিএসপি পায় ছয়টি আসন। সেইসঙ্গে অন্যান্যরা পেয়েছে ২০টি আসন। এ রাজ্যে কংগ্রেসের একক ক্ষমতা গ্রহণের দাপট থাকলেও একটি আসনে ভোট হয়নি।
ছত্তিশগড়েও কংগ্রেসের একক আধিপত্য। রাজ্যটির ৯০ আসনের মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছে ৬৮টি। বিজেপি মাত্র ১৫টি। সেইসঙ্গে বিএসপি এবং জেসিসি জোট পেয়েছে সাতটি আসন। তবে বাকি দুই রাজ্য তেলেঙ্গানা ও মিজোরামে একক দাপট দেখিয়েছে স্থানীয় দু’টি দল। তেলেঙ্গানার ১১৯ আসনের মধ্যে ৮৮টিতে জয় পেয়ে এগিয়ে গেছে স্থানীয় দল টিআরএস। এখানে কংগ্রেস এবং টিডিপি জোট পেয়েছে ২১টি আসন। কিন্তু রাজ্যটিতে বিজেপির প্রায় শূন্য অবস্থা। মাত্র পেয়েছে একটি আসন।
আর মিজোরামে ৪০ আসনের মধ্যে স্থানীয় দল মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ) ২৬টিতে জয় ছিনিয়ে নিয়ে সবার শীর্ষে অবস্থান করছে। তেলেঙ্গানার মতো এখানেও দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে কংগ্রেস। দলটি পেয়েছে পাঁচ আসন। কিন্তু বিজেপি এখানেও ভরাডুবি। আসন তাদের কপালে এখানেও একটিই জুটেছে।
যদিও এ দুই রাজ্যে বিজেপির অবস্থা আগেও ভালো ছিল না। গত নির্বাচনে তেলেঙ্গানায় বিজেপির দখলে ছিল চার এবং মিজোরামে এক আসন। তবে গত নির্বাচনে মিজোরামে কংগ্রেসের অবস্থা ভালো ছিল। দলটি তখন পেয়েছিল ২৯ আসন। আর এবার মাত্র পাঁচ।
এদিকে, ২০১৯ সালে দেশটির লোকসভা নির্বাচন। সেখানেও কী মোদীর প্রধানমন্ত্রী হওয়াতে বাধা হবে কৃষক? না-কি এ অশুভ ইঙ্গিত পেয়ে তিনি বাকি সময়ে এ অসন্তুষ্ট দূর করবেন? সেদিকেই সবার নজর।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৮
টিএ