সোমবার (৭ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় ভোরে অভ্যুত্থানের কথা বলার পর সেনাবাহিনীর ওই অংশের সব অপচেষ্টা নস্যাৎ করে দেয় প্রেসিডেন্ট আলী বঙ্গোর অনুগত বাহিনী। এর আগে রাষ্ট্রীয় রেডিও ভবন দখল করে ‘পুনর্গঠন পরিষদ’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিল অভ্যুত্থানচেষ্টাকারীরা।
কয়েক ঘণ্টা পর পরিস্থিতি পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে জানিয়ে প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র গাই-বার্ট্রান্ড মাপাঙ্গৌ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সরকার আগের মতোই আছে। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোও আগের মতোই কার্যকর। ’
আফ্রিকান তেল সমৃদ্ধ এ দেশটিতে প্রায় ৫০ বছর ধরে ক্ষমতাসীন বঙ্গো পরিবার। মাঝে ২০০৯ সালে ওমর বঙ্গোর মৃত্যুর পর ক্ষমতায় বসেন তার ছেলে আলী বঙ্গো। এরপর ২০১৬ সালে সহিংসতাপূর্ণ একটি নির্বাচনে খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে আবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয় পান আলী।
চিকিৎসা নিতে দুই মাস ধরে দেশের বাইরে আছেন প্রেসিডেন্ট। সৌদি আরব সফরে গিয়ে তিনি স্ট্রোক করলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর মরক্কো চলে যান আলী। আফ্রিকার দেশটি থেকেই গত ৩১ ডিসেম্বর টেলিভিশন প্রচারিত এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি সুস্থ আছেন।
তবে তার সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অভ্যুত্থানচেষ্টা চালায় সেনাবাহিনীর ওই অংশটি। রাষ্ট্রীয় রেডিও ভবন দখলের পর লেফটেন্যান্ট কেলি ওন্ডো ওবিয়াঙ্গ নামে এক কর্মকর্তা রাষ্ট্রের ‘পুনর্গঠন পরিষদ’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘ইংরেজি নববর্ষের প্রাক্কালে প্রেসিডেন্ট যে ভাষণ দিয়েছেন, তাতে তিনি তার দায়িত্ব নিতে সক্ষম নন বলে মনে হয়েছে। সেজন্য ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়’ প্যাট্রিয়টিক মুভমেন্ট অব দ্য ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি ফোর্সেস অব গ্যাবন অভ্যুত্থান করছে। ’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া ওই ভাষণে দেখা যায়, লেফটেন্যান্ট কেলির অভ্যুত্থান ঘোষণার সময় তার দুই পাশে রাইফেল হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন আরও দুই সৈন্য।
ওবিয়াঙ্গ তার ঘোষণায় দাবি করেন, এ অভ্যুত্থানের ‘পক্ষে আছেন অনেক জেনারেল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বিরোধী রাজনীতিক’। তিনি জনগণকেও অভ্যুত্থানের পক্ষে রাস্তায় নামতে বলেন। তার এই ঘোষণার সময় অভ্যুত্থানের সমর্থনে প্রায় ৩০০ জনকে রেডিও ভবনের বাইরে অবস্থান নিতে দেখা যায়। ভেতরেও দেখা যায় বেশ কিছু সৈন্যকে।
তবে পরে সরকারের প্রতি আনুগত্যশীল বাহিনী রেডিও ভবন গুড়িয়ে দিয়ে অভ্যুত্থানচেষ্টাকারীদের নিষ্ক্রিয় করে ফেললে সেই ৩০০ জন সটকে পড়ে।
প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র গাই-বার্ট্রান্ড মাপাঙ্গৌ বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা রেডিওতে ভাষণের সময় যে জেনারেল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বিরোধী রাজনীতিকদের নামোল্লেখ করেছে এবং যে ৩০০ জন রেডিও ভবনের বাইরে অভ্যুত্থানচেষ্টার সমর্থনে অবস্থান নিয়েছিল, তাদের ব্যাপারে তদন্ত করা হবে।
তবে এই অভ্যুত্থানচেষ্টায় সংশ্লিষ্টতার কথা নাকচ করে দিয়েছে বিরোধীপক্ষ। প্রধান বিরোধী জোট দ্য কোয়ালিশন ফর দ্য নিউ রিপাবলিকের অন্যতম নেতা পল-মারি গন্ডজৌত বলেন, রাজধানীর রাস্তায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ গাড়ি তল্লাশি করছে। আমাদের মনে হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি জোরদার, কিন্তু আসলে কী হচ্ছে তা আমরা জানি না।
প্রায় তিন মাস ধরে প্রেসিডেন্টের দেশের বাইরে থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে বিরোধী এ রাজনীতিক বলেন, প্রেসিডেন্ট স্ট্রোক করার পর তার ডেপুটি যিনি আছেন, তারই রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া উচিত ছিল। দেশ চালিয়ে নিতে হতো। কিন্তু আমাদের কোনো সরকার নেই, কোনো রাষ্ট্রপ্রধানও নেই।
বাংলাদেশ সময়: ০৬০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৯
এইচএ/
** গ্যাবনে ‘সেনা অভ্যুত্থান’ ঘোষণা