ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

লোকসভা নির্বাচনে ব্যয় হচ্ছে ৫০ হাজার কোটি রুপি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৯
লোকসভা নির্বাচনে ব্যয় হচ্ছে ৫০ হাজার কোটি রুপি

ঢাকা: বিশ্বে জনসংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় এবং আয়তনে সপ্তম বৃহৎ দেশ ভারতে চলছে জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষের (লোকসভা) নির্বাচন। এই নির্বাচনের ব্যয় যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এবার লোকসভার নির্বাচনে রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্টদের ব্যয় হবে ৭ বিলিয়ন (৭০০ কোটি) ডলার বা ৫০ হাজার কোটি রুপি। বিগত মার্কিন নির্বাচনে ব্যয় হয়েছিল সাড়ে ৬ বিলিয়ন (৬৫০ কোটি) ডলার। 

জরিপের পর এই তথ্য জানিয়েছে নয়াদিল্লিভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর মিডিয়া স্টাডিজ (সিএমএস)। সংস্থাটির জরিপের তথ্যটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।

গত ১১ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) থেকে শুরু হওয়া ভারতের সপ্তদশ এ নির্বাচন সাত ধাপে চলবে ১৯ মে পর্যন্ত। ২৯টি রাজ্য ও ৭টি কেন্দ্রীয় অঞ্চলে এ ভোটের আয়োজনে ভারতজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। লোকসভায় মোট আসন ৫৪৫ হলেও সরাসরি নির্বাচন হয় ৫৪৩ আসনে। বাকি দু’টি আসনে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান প্রতিনিধিকে মনোনীত করে আনা হয়। সরকার গঠনের জন্য লোকসভায় প্রয়োজন হয় ২৭২ আসনের।

এবারের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে ছোট-বড় প্রায় ২০০০ রাজনৈতিক দল। প্রার্থিতা করছেন ৮ হাজার রাজনীতিক। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন বিজেপি ও ঐতিহ্যবাহী দল রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের মধ্যে।  

সিএমএস বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্বাচনের রেকর্ড গড়ছে ভারত। বিশ্বের প্রধান অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের বিগত নির্বাচন ছাপিয়ে প্রায় ৫০ কোটি ডলার বেশি খরচ হচ্ছে ভারতের নির্বাচনে। ২০১৪ সালের তুলনায় নির্বাচনী ব্যয় বেড়েছে ৪০ শতাংশ। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যেখানে ব্যয় ছিল ৫০০ কোটি ডলার, এবার তা হচ্ছে ৭০০ কোটি ডলার।  

সিএমএসের হিসাবে দেখা গেছে, প্রতি ভোটারের পেছনে ব্যয় করা হচ্ছে ৮ ডলার। যেখানে ভারতের ৬০ শতাংশ মানুষেরই মাথাপিছু গড় আয় (প্রতিদিন) মাত্র ৩ ডলার। প্রায় ১৩২ কোটি জনগোষ্ঠীর ভারতে এবার ভোট দেবেন প্রায় ৯০০ মিলিয়ন বা ৯০ কোটি ভোটার।

সাবেক সরকারের পরামর্শক এবং সেন্টার ফর মিডিয়া স্টাডিজের চেয়ারম্যান এন ভাস্কর রাও বলেন, বেশিরভাগ খরচই হবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, যাতায়াত ও পোস্টারিংসহ বিজ্ঞাপনে।  

২০১৯ সালের নির্বাচনে ফেসবুক, টুইটার ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যয় হচ্ছে ৫ হাজার কোটি রূপি। আগের নির্বাচনে ২০১৪ সালে এই ব্যয় ছিল মাত্র ২৫০ কোটি রুপি।  

টেলিভিশন ও পত্রিকার বিজ্ঞাপনে ব্যয় হচ্ছে ২ হাজার ৫শ’ কোটি রুপি। নির্বাচন কমিশনের হিসাবে আগের নির্বাচনে ২০১৪ সালে এই ব্যয় ছিল ১ হাজার ২শ কোটি রুপি।  

এছাড়া নির্বাচন কমিশনের বড় অর্থ ব্যয় হচ্ছে ভারতজুড়ে বুথ স্থাপন ও ভোট গ্রহণের আয়োজনে। এজন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২২৬ কোটি রুপি। এবার ভোট কেন্দ্র ১০ লাখেরও বেশি। তবে নির্বাচনের সব খরচই যে হিসেবে আসছে না, তা জানিয়েছে সিএমএস।

সেন্টার ফর মিডিয়া স্টাডিস বলছে, ভোটারদের মন জয় করতে কিছু প্রার্থী নগদ অর্থের পাশাপাশি অ্যালকোহল, টেলিভিশন, ব্লেন্ডার এমনকি ছাগল পর্যন্ত দিচ্ছেন ভোটারদের। নির্বাচনী সভায় বিরিয়ানি বিতরণের বিষয়টিও আছে।

গত বছর কর্ণাটক রাজ্যে ভোটের সময় নির্বাচন কমিশন নগদ অর্থ, স্বর্ণ, অ্যালকোহল, মাদকসহ ১৩০ কোটি রুপি মূল্যমানের সম্পদ জব্দ করে। যদিও এবার এখনো তেমন বড় কোনো চালান বা কারবার ধরা পড়ার খবর মেলেনি।

নির্বাচনে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম ধাপে ভোট হবে যথাক্রমে ১৮ এপ্রিল, ২৩ এপ্রিল, ২৯ এপ্রিল, ৬ মে, ১২ মে এবং ১৯ মে। সব ধাপের ভোট গ্রহণের পর গণনা হবে ২৩ মে, সেদিনই গণনার সঙ্গে সঙ্গে ঘোষিত হতে থাকবে ফলাফল।

গত ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনে নজিরবিহীন জয় পেয়ে সরকার গড়ে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপির জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স। ১৯৮৪ সালের পর প্রথমবারের মতো একক দল হিসেবে সরকার গঠনের মতো আসন পেয়ে যায় বিজেপিই। পদ্মফুল ফুটেছিল ২৮২ আসনে। বিজেপি জোটের অন্য দলগুলো পেয়েছিল ৫৫ আসন। অন্যদিকে আগের সরকার চালানো সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস পায় মাত্র ৪৪টি আসন। তাদের জোটের দলগুলো পায় ১৫ আসন। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস পায় ৩৪ আসন। তামিলনাড়ুর প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার দল এআইএডিএমকে পায় ৩৭ আসন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৯
এসই/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।