সেখানকার রাজনীতিকরা সেই অন্ধকার যুগের ব্রিটেনকে ভুলিয়ে দিতে চাইলেও জেরেমি করবিন তার উল্টো ঠিক বিপ্লবী সুর তুলেছেন। করেছেন এক নজিরবিহীন অঙ্গীকার।
‘বর্ণ ও বিশ্বাস’ বিষয়ে জোর দেওয়া ইশতেহারে লেবার পার্টি জানিয়েছে তারা, অ্যান্টি-সেমিটিজমের (ইহুদীবিরোধী বৈষম্য) বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নীতি প্রণয়ন করবে। পাশাপাশি সাবেক উপনিবেশ-অঞ্চলে সংঘাত ও নিরাপত্তাহীনতার ক্ষেত্রে ব্রিটেনের ভূমিকার পর্যায় নির্ধারণেও তদন্ত করা হবে।
ইতিহাস বলছে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকরা ছড়ি ঘুরিয়েছে বিশ্বজুড়ে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তাদের উপনিবেশ-অঞ্চল ছিল, যেগুলো এখন স্বাধীন হয়ে গেছে। সেই স্বাধীন দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত কমনওয়েলথ অব ন্যাশন্স। এই জোটের সদস্য সংখ্যা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ ৫৩টি। উপনিবেশ-অঞ্চলগুলোতে ব্রিটিশ শাসকদের বর্বরতায় এখনো শিউরে ওঠে সে জনপদের মানুষ। তৎকালীন বাংলায় উপনিবেশ শাসন পাকাপোক্ত করতে ব্রিটিশরা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করে নবাব সিরাজউদদৌলাকে। ব্রিটিশদের অবিচার-নির্যাতন-লুটপাটের বিরুদ্ধে সরব হওয়ায় প্রাণ দিতে হয় ক্ষুদিরাম, মাস্টারদা সূর্যসেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারসহ অনেক বিপ্লবীকে।
ব্রিটিশবিরোধী তুমুল আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল অমৃতসর শহরের জালিয়ানওয়ালাবাগ নামক একটি বদ্ধ উদ্যানে সমবেত নিরস্ত্র জনগণের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় ঔপনিবেশিক শাসকদের লেলিয়ে দেওয়া সৈন্যরা। এতে শত শত মানুষ প্রাণ হারায়। এই ঘটনাটি উপমহাদেশের অন্যতম র্ববরোচিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে কুখ্যাত হয়ে আছে। ওই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংরেজ সরকারের দেওয়া ‘নাইটহুড’ উপাধি ত্যাগ করেন।
মার্কসবাদে বিশ্বাসী করবিনের লেবার পার্টি এরইমধ্যে জানিয়েছে, ১৯১৯ সালে ভারতের অমৃতসরে ব্রিটিশ সেনাদের হাতে ৪০০ বেসামরিক মানুষের প্রাণ হারানোর ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করবে তারা এবং ব্রিটেনের ভূমিকা পর্যালোচনা করবে।
করবিন এর আগে তাদের জাতির ইতিহাসে কৃষ্ণাঙ্গ ব্রিটিশদের ভূমিকার দিকে নজর দেওয়ার কথা বলেন। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে অনস্বীকার্য ভূমিকা রাখা নেতাদের স্মরণের কথাও বলেন।
ইশতেহারের মূল বিষয় তুলে ধরে করবিন বলেন, লেবার পার্টি সমতা ও মানবাধিকারের দল। আমাদের বর্ণ ও বিশ্বাসের ইশতেহার অসমতা ও বৈষম্য মোকাবিলায় আমাদের অটল অঙ্গীকারকেই তুলে ধরছে। আপনার বংশ-পরিচয় যাই হোক, আপনি যেখান থেকেই আসুন, আপনি যে বিশ্বাস বা ধর্মের হোন না কেন, আপনার সম্ভাবনা প্রতিফলনে নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগানোর সুযোগ নেওয়া উচিত ব্রিটেনে।
আগামী ১২ ডিসেম্বর ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এই নির্বাচনে জয়ের জন্য করবিনের দলকে মূল লড়াই করতে হবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের দল কনজারভেটিভ পার্টির সঙ্গে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৯
এইচএ/