সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, রোববার বিক্ষোভ দমাতে জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএমআই) শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ বাহিনী। এতে আহত হন বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী।
সেই ভয়াবহ মুহূর্তের বর্ণনা দিয়ে জেএমআইয়ের এক ছাত্রী বলেন, আমরা ভেবেছিলাম দিল্লি শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ আর এটা একটা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ভেবেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় একটা নিরাপদ জায়গা, এখানে আমাদের কিছুই হবে না। অথচ আমরা রাতভর কেঁদেছি। এসব কী হচ্ছে!
পরিস্থিতি সামাল দিতে আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। অবিলম্বেই হোস্টেল ছাড়তে বলা হয়েছে সব আবাসিক শিক্ষার্থীকে।
হোস্টেল ছাড়ার সময় কাঁদতে কাঁদতে ওই ছাত্রী বলেন, আমি এই দেশে আর নিরাপদবোধ করি না। জানি না কোথায় যাবো আর গিয়ে প্রাণ হারাবো।
তিনি বলেন, আমি তো মুসলমানও নই, তবুও প্রথমদিন থেকে এখনো সামনের সারিতে আছি। কেন? কারণ আমার পরিবারের সঙ্গে যা হয়েছে… আমাদের শিক্ষার কী দাম আছে যদি ঠিক বিষয়টার পাশে না দাঁড়াই।
এসময় আরেক ছাত্রী জানান, পুলিশ জামিয়ার ক্যাম্পাসে জোরে করে ঢুকে সব শিক্ষার্থীকে জড়ো করে, এরপর সবাইকে হাত উঁচিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য করা হয়।
তিনি বলেন, যখন এসব শুরু হয় আমি লাইব্রেরিতে ছিলাম। হঠাৎ সুপারভাইজার কল দিয়ে বললেন, পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। আমি বের হতে যাবো তখনই একদল শিক্ষার্থী দৌঁড়ে ভেতরে চলে আসে।
‘আমরা হইচই শুনতে পাচ্ছিলাম, জানালাগুলো কাঁপছিল। কয়েকজন ছেলেকে দেখলাম রক্তাক্ত অবস্থায়। পুলিশ ভেতরে এসেই গালিগালাজ শুরু করে। তারা সবাইকে বাইরে যেতে বলে। বাইরে বেরিয়ে দেখি কিছু ছেলে অচেতন অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছে। ’
আরও পড়ুন> ‘দাঙ্গা’ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
ওই ছাত্রী আরও বলেন, আমরা হাত উঁচু করে বেরিয়ে আসি। একসময় হোস্টেলে পৌঁছাই। হঠাৎ কয়েকজন ছাত্র দৌঁড়ে এসে জানায়, নারী পুলিশ আসছে আমাদের মারার জন্য। আমি দৌঁড়ে ঝোপের ভেতর গিয়ে লুকাই। অবশেষে হোস্টেলে ফিরতে পারি। আমি আরও অনেক ছেলের কাপড়ে রক্ত দেখেছি।
জানা যায়, রোববার জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া (জেএমআই) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হঠাৎ চড়াও হয় পুলিশ। এসময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করলে প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীরা বেশ কয়েকটি বাসে ভাংচুর চালায় ও অন্তত তিনটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলেও আগুন দেওয়া হয়।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, তারা ধারণা করেছিলেন সর্বোচ্চ দুই শতাধিক বিক্ষোভকারী অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু এদিন শিক্ষার্থী-জনতা মিলিয়ে সংখ্যাটা হাজারেরও বেশি গিয়ে দাঁড়ায়।
এদিকে, জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভ শুরু করেন উত্তর প্রদেশে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের (এএমইউ) শিক্ষার্থীরাও। তাদের সঙ্গেও পুলিশের সংঘর্ষ হয়।
এছাড়াও হায়দ্রাবাদের মাওলানা আজাদ উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়, দ্য বানারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইআইটি বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করেছেন। এছাড়া জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দিল্লিতে পুলিশ প্রধানের কার্যালয়ের সামনে রাতভর অবস্থান করেন।
সোমবারও (১৬ ডিসেম্বর) রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এদিন বিক্ষোভ হয়েছে লক্ষ্নৌর নাদওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। সকালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বাইরে আসার চেষ্টা করলে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট বন্ধ করে দেয়। এসময় শিক্ষার্থীরা ভেতর থেকেই পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল-জুতা নিক্ষেপ করে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
আরও পড়ুন> ছাত্রবিক্ষোভে ‘দুঃখিত’ মোদী!
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৯
একে